Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Chandannagar

খেলার মাঠে ‘জয় শ্রীরাম’, পাল্টা ‘জয় বাংলা’ও

ছেলেদের বিভাগে ২৮ এবং মেয়েদের বিভাগে ২৬টি রাজ্য যোগ দিয়েছিল। সব খেলাই হয় চন্দননগর শহরের শহিদ কানাইলাল ক্রীড়াঙ্গনে (কুঠির মাঠ)।

জয়ী পশ্চিমবঙ্গের মহিলা দল। চন্দননগর কানাইলাল ক্রীড়াঙ্গনে। বৃহস্পতিবার। ছবি: তাপস ঘোষ

জয়ী পশ্চিমবঙ্গের মহিলা দল। চন্দননগর কানাইলাল ক্রীড়াঙ্গনে। বৃহস্পতিবার। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
চন্দননগর শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২৩ ০৮:৫৪
Share: Save:

দু’টি স্লোগানই শোনা যায় রাজনীতির আঙিনায়। একটি ‘জয় শ্রীরাম’, অন্যটি ‘জয় বাংলা’। এ বার এই দুই শব্দবন্ধের ‘অনুপ্রবেশ’ খেলার মাঠে! চন্দননগরে অনূর্ধ্ব ১৬ জাতীয় ভলিবল প্রতিযোগিতা এই প্রশ্নই তুলে দিল।

চ্যাম্পিয়ন হয়ে উত্তরপ্রদেশের ছেলেরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলল। মেয়েদের সেরা হল বাংলা। তাদের জয়ের পরেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান স্থানীয় পুর প্রতিনিধিদের (কাউন্সিলর) একাংশের মুখে। মঞ্চে তখন রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক ইন্দ্রনীল সেন। ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত বিজয়োল্লাসের ‘পালাবদলে’ নানা মহলে সমালোচনার ঝড়।

ছেলেদের বিভাগে ২৮ এবং মেয়েদের বিভাগে ২৬টি রাজ্য যোগ দিয়েছিল। সব খেলাই হয় চন্দননগর শহরের শহিদ কানাইলাল ক্রীড়াঙ্গনে (কুঠির মাঠ)। বৃহস্পতিবার ছেলেদের ফাইনালে উত্তরপ্রদেশ ২৫-১৫, ২৫-২১, ২৫-১৭ সেটে দিল্লিকে হারায়। মেয়েদের খেলায় বাংলাও স্ট্রেট সেটে জেতে। তারা ২৫-১২, ২৮-২৬, ২৫-১৮ ব্যবধানে হারায় মহারাষ্ট্রকে। মাঠ ভরে গিয়েছিল। ফাইনালের পরে স্লোগান খেলার পরিবেশ কিছুটা বদলে দেয়।

বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া হয় দর্শকদের মধ্যে। তাঁদের অনেকের বক্তব্য, খেলার মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা, ঝগড়া, জেতা-হারায় হাসি-কান্না, উল্লাস-বিষাদ থাকেই। তা বলে, কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির ‘জয় শ্রীরাম’ এবং এ রাজ্যের ক্ষমতায় থাকা তৃণমূলের ‘জয় বাংলা’ স্লোগান খেলার মাঠে অনুচিত। এক শিক্ষকের কথায়, ‘‘প্রতিদিন মাঠে এসেছি। আয়োজন ভালই ছিল। কিন্তু, শেষ দিন এমন স্লোগান হতাশ করল। এই ভাষা খেলার মাঠের নয়।’’

কেন এই স্লোগান? উত্তরপ্রদেশের একাধিক ভলিবলারের বক্তব্য, ‘‘আমাদের রাজ্যে সরকারি অনুষ্ঠানেও জয় শ্রীরাম স্লোগান দেওয়া হয়। তাই দিয়েছি।’’ চন্দননগরের মেয়র পারিষদ, তৃণমূলের পার্থ দত্তের মন্তব্য, ‘‘বাংলার মেয়েরা জিতেছে, তাই আমরা জয় বাংলা বলেছি। কথাটির অর্থ তো বাংলার জয়। একে রাজনৈতিক স্লোগান বলে বিতর্ক সৃষ্টি করে, কি লাভ?’’

ক্রীড়া মহল অবশ্য ভিন্ন মত। রাজ্যের ক্রীড়াক্ষেত্রের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর, ফুটবলার রহিম নবীর আক্ষেপ, ‘‘বর্তমানে খেলার মাঠের ভাষা বদলে যাচ্ছে। ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তে খেলেছি। এই সংস্কৃতি ছিল না। রাজনৈতিক স্লোগানের নিন্দা জানাই।’’

গত বছর ডিসেম্বরে অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় ব্যাডমিন্টনে বাংলার প্রতিনিধিত্ব করেছেন চুঁচুড়ার স্বাগতা চক্রবর্তী। এমন স্লোগানের সমালোচনা করেছেন তিনিও। প্রাক্তন গোলরক্ষক তথা হুগলি জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ-সভাপতি তনুময় বসু মনে করেন, দু’টি স্লোগানের সঙ্গেই রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। তাই, খেলার মাঠে এমন স্লোগান ঠিক নয়। তাঁর কথায়, ‘‘খেলার মাঠে রাজনীতির অনুপ্রবেশ সমর্থন করি না।’’

দেশের প্রায় সব রাজ্যে বহু ম্যাচ খেলিয়েছেন ফুটবলের সহকারি রেফারি বিপ্লব পোদ্দার। ওই স্লোগানের কথা তাঁকেও অবাক করেছে। তিনি বলেন, ‘খেলার মাঠে জিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশের নানা ধরন রয়েছে। কিন্তু, এমন স্লোগান শুনিনি কোথাও।’’

রাজনৈতিক স্লোগানে খেলার মাঠ ‘কলুষিত’ হচ্ছে বলে হুগলি জেলা সিপিএম সম্পাদক দেবব্রত ঘোষের অভিযোগ। মন্তব্য এড়িয়ে গিয়েছেন হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chandannagar Political Slogan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE