বেহাল শৌচালয়। নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মূল্যায়ণে প্রাথমিক শিক্ষায় বড় রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সেরার শিরোপা পেয়েছে। কিন্তু শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ পরিকাঠামো থেকে শিক্ষকের অভাব—এমন নানা সমস্যায় জর্জরিত প্রাথমিক স্কুলগুলি। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখল আনন্দবাজার।
তিন বছর আগে বিদ্যুৎ এসেছে এই প্রাথমিক স্কুলে। শিক্ষকদের বসার কোনও আলাদা ঘর নেই। মিড ডে মিল খাওয়া হয় বারান্দায়। পড়ুয়াদের খেলার কোনও পরিসর নেই। স্কুলের সামনে পুকুর রয়েছে। আর স্কুলে কোনও পাঁচিল নেই। ফলে খুদে পড়ুয়াদের নজরে রাখতে হয় শিক্ষকদেরই। কম্পিউটার ক্লাস তো দূর অস্ত।
এমন ‘পরিকাঠামো’ নিয়েই কোনওমতে খুঁড়িয়ে চলছে আরামবাগের লালুরচক প্রাথমিক স্কুল। পড়ুয়া সংখ্যা কমতে কমতে এসে ঠেকেছে ১৭য়। আর শিক্ষক রয়েছেন দু’জন। এমতাবস্থায় স্কুল যে কোনও দিনই বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষকরা।
প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শক কাবেরী সাঁপুইয়ের অবশ্য মত, ‘‘পরিকাঠামো তো ঠিকই আছে। মূল সমস্যা পড়ুয়া কম। স্কুল কর্তৃপক্ষ পড়ুয়া বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।’’
আরামবাগের লালুরচক গ্রামটি এমনিতেই ছোট। কয়েকশো মানুষের বাস সেখানে। ফাঁকা মাঠের মধ্যে স্কুলটির প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৫৫ সালে। পাকা দোতলা ভবনের দু’টি বড় হলঘরে ভাগ করে নিয়ে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস হয়। আগে এই স্কুলে প্রায় ৮০ জন পড়ুয়া ছিল। এমনকী দূরের মহিষগোট গ্রামের বহু পড়ুয়াও এখানে পড়তে আসত। এখন সেখানে প্রাথমিক বিদ্যালয় হওয়ায় তারা আর এখানে আসে না। শিক্ষকরা জানান, গ্রামের সকলেই স্কুলের বেহাল পরিকাঠামো নিয়ে অবগত। তাই ভরসা করে তাঁরা এখানে সন্তানদের পাঠাতে চান না। প্রায় চার কিলোমিটার দূরে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে এই গ্রামের অধিকাংশ খুদে পড়তে যায়। নিম্নবিত্ত পরিবারের কয়েকটি খুদেই ভরসা এই সরকারি প্রাথমিক স্কুলের।
এই স্কুলের এক অভিভাবকের কথায়, ‘‘টাকা বেশি খরচ বলে আমার ছেলেটাকে এখানে পড়াচ্ছি। টাকা থাকলে আমিও ওই দূরের স্কুলেই পড়াতাম। স্কুলের সামনেই পুকুর। ছেলেটা দুরন্ত। স্কুলে পাঠাতে ভয় লাগে।’’ শিক্ষকদের কথায়, ‘‘দিনে দিনে সব কিছুর উন্নতি হচ্ছে। সেখানে আমরা এ ভাবে পিছিয়ে পড়লে কেন কেউ পড়তে আসবে? তাই সকলে একটু বেশি টাকা দিয়ে সন্তানকে ভাল পরিকাঠামোর স্কুলে পড়ানোর চেষ্টা করছেন।’’
আরামবাগ পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দীপক মাজি দাবি করেন, স্কুলের উন্নয়নের চেষ্টা চলছে। প্রধান শিক্ষক ধনীরাম কিসকু বলেন, ‘‘আমরা গ্রামে গিয়ে খুদেদের স্কুলে পাঠানোর অনুরোধ করছি। তবে স্কুলের পরিকাঠামো ঠিক করাও প্রয়োজন। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy