E-Paper

ব্যান্ডেলে এল পর্তুগিজরা, দেশ পেল ছানার স্বাদ

১৫৪০ সাল নাগাদ পর্তুগিজেরা হুগলি নদীর তীরে, ব্যান্ডেলে কুঠি নির্মাণ করে ব্যবসা করতে শুরু করে। তাদের খাদ্য তালিকায় এক ধরনের ‘চিজ়’ ছিল, যেটা তৈরি হত দুধ কাটানো ছানা থেকে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১০:০৭
পট চিজ।

পট চিজ। নিজস্ব চিত্র ।

ছানা এল কোথা থেকে? পর্তুগিজদের কাছ থেকে। একসময়ে হুগলির ব্যান্ডেলে ঘাঁটি গেড়েছিল তারা।

বৈদিক আমলে ছানা ছিল না। দই, মাখন, ক্ষীর ইত্যাদি ছিল দুধের স্বাভাবিক রূপ। পর্তুগিজরা আমদানি করলেও ছানাকে মনে করা হত দুধের বিকৃত রূপ। ব্রাহ্মণরা ছানাকে ‘অশাস্ত্রীয়’ বলে বর্জন করেছিলেন। পুজোতে ছানা নিষিদ্ধ করা হয়। একদা শুধু বাংলা নয়, ভারতেই ছানা ছিল ব্রাত্য। কারণ, দুধ ‘ছিন্ন’ হয়ে তৈরি হয় ছানা। 'ছানা' শব্দটাও এসেছে ছিন্ন থেকে। যে জিনিস নষ্ট হয়ে যায়, তা দেবতাকে অর্পণ করা যায় না। যে জিনিস দেবতাকে নিবেদন করা যায় না, তা খাদ্য হিসেবে গ্রহণের অযোগ্য। দেবতাকে নিবেদিত মিষ্টান্ন বলতে যা দেওয়া হত বা এখনও হয়, তা ক্ষীরের তৈরি পেঁড়া। দুধ অতি ঘন করে জ্বাল দিয়ে তৈরি হয় ক্ষীর। দুধ ছিন্ন বা কেটে গেলে তবে তা থেকে হয় ছানা। দুধ কেটে যাওয়া মানে নষ্ট হওয়া। ফলে, ছানার প্রতি আগ্রহ হিন্দুদের সে কালে ছিল না।

১৫৪০ সাল নাগাদ পর্তুগিজেরা হুগলি নদীর তীরে, ব্যান্ডেলে কুঠি নির্মাণ করে ব্যবসা করতে শুরু করে। তাদের খাদ্য তালিকায় এক ধরনের ‘চিজ়’ ছিল, যেটা তৈরি হত দুধ কাটানো ছানা থেকে। বলা হত ‘পট চিজ়’ বা ‘কটেজ চিজ়’। মধ্য ইউরোপেও ‘কোয়ার্ক’ নামে এক ধরনের খাবারের উল্লেখ
দেখা যায়, সেটাও অনেকটা এই ‘কটেজ চিজ়ে’র মতো নরম, সাদা এবং টাটকা অবস্থায় খেতে হত। বাংলায় সেই চিজ়ের নাম বদলে
হয়ে যায় 'ব্যান্ডেল চিজ়’। জনপ্রিয়ও হয়।

ব্যান্ডেলের পাশের শহরে ঘাঁটি গড়ে ওলন্দাজেরা। তারাও ক্রমে এই চিজ়ের ভক্ত হয়ে পড়ে। ওলন্দাজদের রন্ধনশালায় ছিলেন অনেক স্থানীয় পাচক। তাঁরাও ওলন্দাজদের কাছ থেকে শিখে নেন ‘ব্যান্ডেল চিজ়’ তৈরির প্রক্রিয়া। ‘ব্যান্ডেল চিজ়’ আর ছানা তৈরির প্রক্রিয়া প্রায় একই রকম বলা যেতে পারে। এই ছানা থেকেই ক্রমে স্থানীয় মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীদের কল্পনাশক্তি আর চিনির মিশ্রণে তৈরি হয় নানা রকম মিষ্টি, বিশেষ করে সন্দেশ। ছানার তৈরি সন্দেশ পরবর্তীকালে বাংলা হয়ে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।

তথ্য ও ছবি: দেবাশিস মুখোপাধ্যায়।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Portuguese

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy