Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Ambulance

মায়ের স্মৃতিতে দান করা অ্যাম্বুল্যান্সের নাম পাল্টে লিখে দেওয়া হল ‘তৃণমূল’, ক্ষোভ হুগলির পরিবারে

অ্যাম্বুল্যান্সের গায়ে খোদাই হল ‘তৃণমূল যুব কংগ্রেস ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ’ লেখা। পাশে দলের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাসিমুখের ছবি।

Row over an Ambulance which donated by an IPS officer in now possessed by TMC

অ্যাম্বুল্যান্সের গায়ে শান্তি মিশ্র এবং ক্লাবের নাম তুলে দিয়ে লেখা হয়েছে ‘উত্তরপাড়া শহর তৃণমূল ছাত্র ও যুব কংগ্রেস’। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৬:৪৬
Share: Save:

স্থানীয় ক্লাব অ্যাম্বুল্যান্স কিনবে। তাই মায়ের স্মৃতির উদ্দেশে এক লক্ষ টাকা দান করেছিলেন এক আইপিএস অফিসার। অ্যাম্বুল্যান্স কেনার পর গাড়ির গায়ে অফিসারের মায়ের নামও লেখা ছিল। কিন্তু হঠাৎই মুছে গেল সেই শান্তি মিশ্রের নাম। উদ্বোধনের দিন অ্যাম্বুল্যান্সের গায়ে খোদাই হল ‘তৃণমূল যুব কংগ্রেস ও তৃণমূল ছাত্র পরিষদ’ লেখা। পাশে ওই দলের নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাসিমুখে নমস্কাররত ঝকঝকে ছবি। নারকেল ফাটিয়ে সেই অ্যাম্বুল্যান্সের উদ্বোধন করে গেলেন হুগলির সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই নিয়ে শুরু হয়েছে জোর বিতর্ক।

বিজেপির কটাক্ষ, ‘‘অন্যের প্রকল্প, অন্যের দেওয়া জিনিসের নাম বদলে দিয়ে নিজের করে নেওয়াই তৃণমূলের সংস্কৃতি।’’ অ্যাম্বুল্যান্সে নতুন নাম খোদাই নিয়ে ক্ষুণ্ণ ওই আইপিএস অফিসারের পরিবারও। যদিও এখানে বিতর্কের অবকাশ নেই বলে জানাচ্ছে শাসকদল। তাদের দাবি, উত্তরপাড়ার ‘মাখলার সেবক সংঘ’ ক্লাবটি অ্যাম্বুল্যান্সটি চালাতে পারছিল না বলেই তাদের হাতে তুলে দিয়েছে।

আইপিএস অফিসারের পরিবার জানাচ্ছেন, মা শান্তি মিশ্রের স্মৃতির উদ্দেশ্যে অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য পাঁচ বছর আগে টাকা দিয়েছিলেন আনন্দ মিশ্র। স্থানীয় ক্লাব অ্যাম্বুল্যান্স কিনে পরিষেবা দেওয়া শুরু করে ২০১৮ সালে। উদ্দেশ্য, স্থানীয় মানুষরা যেন বিপদ-আপদে পরিষেবা পান। আরও অনেকে চাঁদা দিয়েছিলেন ওই অ্যাম্বুল্যান্স কেনার জন্য। মাখলার বাসিন্দা ওই আইপিএস অফিসার কর্মসূত্রে বর্তমানে অসমে রয়েছেন। তাঁর পরিবার হঠাৎ জানতে পারেন সেই অ্যাম্বুল্যান্সটি শনিবার নতুন করে উদ্বোধন করেছেন সাংসদ। সেই সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্সের গায়ে শান্তি মিশ্র এবং ক্লাবের নাম তুলে দিয়ে লেখা হয়েছে ‘উত্তরপাড়া শহর তৃণমূল ছাত্র ও যুব কংগ্রেস’।

ওই ক্লাবের প্রাক্তন সম্পাদক দেবাশিস ভৌমিক বলেন, ‘‘বিষয়টি জানতে পেরে উত্তরপাড়া থানায় গিয়েছিলাম। কারণ, অ্যাম্বুল্যান্সটি এখনও আমার নামেই রেজিস্ট্রেশন করা। আপিএস মিশ্র তাঁর মায়ের স্মৃতিতে এক লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন। মাখলা এলাকার মানুষের সুবিধার জন্য অ্যাম্বুল্যান্সটি চালু করা হয়েছিল। সেটা হলেই ভাল হবে।’’

কেন ক্লাবের অ্যাম্বুল্যান্স রাজনৈতিক দলকে দিয়ে দিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে ক্লাবের বর্তমান সদস্য সৌরভ দাসের দাবি, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স এখনও ক্লাবেই আছে। যে হেতু অ্যাম্বুল্যান্সটি পড়ে পড়ে নষ্ট হচ্ছিল তাই সেটি (তৃণমূলকে) দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি জানান, আইপিএস মিশ্র তাঁদের পাড়ার গর্ব। তাঁর মায়ের নামই অ্যাম্বুল্যান্সে থাকবে। কিন্তু কী ভাবে? নামই তো মুছে দেওয়া হয়েছে। এর পর আর কোনও উত্তর মেলেনি।

এই বিতর্কে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের হুগলি জেলার সভাপতি সম্বুদ্ধ দত্ত বলেন, ‘‘ওই ক্লাব অ্যাম্বুল্যান্সটি চালাতে পারছিল না। তাই আমাদের কাছে অনুরোধ করে আমরা যেন মানুষের স্বার্থে পরিষেবা দিই। ক্লাব কমিটি সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়ে গাড়িটি আমাদের দিয়েছে। এ রকম আরও দু’টি ক্লাব আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মানুষের জন্য একের পর এক কাজ করছেন। মানুষের ভরসার জায়গাই তাই তৃণমূল। আমরা নতুন করে অ্যাম্বুল্যান্সটি তৈরি করে কম খরচে মানুষকে পরিষেবা দিতে উদ্যোগী হয়েছি।’’

অন্য দিকে, স্থানীয় বিজেপি নেতা পঙ্কজ রায়ের কটাক্ষ, ‘‘নাম পাল্টে দেওয়া তৃণমূলের দীর্ঘ দিনের অভ্যাস। একজন আইপিএস অফিসার তাঁর মায়ের স্মৃতিতে অ্যাম্বুল্যান্স কিনতে সাহায্য করলেন। আর তাঁর নামটাই মুছে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস লিখে দেওয়া হল! এটা লজ্জার।’’

আইপিএস অফিসার মিশ্রের ভাইপো রবি মিশ্র বলেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্সটি দেওয়া হয়েছিল এলাকার লোকেদের সুবিধার জন্য। আমরা জানতাম না যে অ্যাম্বুল্যান্সটি অন্য জায়গায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’’ খেদের সুরে তিনি বলেন, ‘‘আমার এক আত্মীয়ের পা ভেঙে গিয়েছিল। সে জন্য অ্যাম্বুল্যান্সের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু পেলাম না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Ambulance TMC Uttarpara
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE