গত বছরের সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল আরামবাগ মহকুমা। জল নামার পর থেকেই মহকুমার নদ-নদীর ভাঙা বাঁধ ও পার সংস্কারে দাবি ওঠে। কয়েকটি ক্ষেত্রে গত অক্টোবর মাসের গোড়া থেকে কাজ শুরু হলেও অধিকাংশ ‘ক্ষত’ মেরামতে এখনও হাত পড়েনি। তা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে গ্রামবাসীদের।
ক্ষোভ বেশি দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধের ভাঙন ও ধস নিয়েই। ঝাড়খণ্ড ও পুরুলিয়ায় অতিরিক্ত বৃষ্টি হলেই বাঁকুড়া অববাহিকা থেকে আসা জলে এই নদ একাই বিধ্বস্ত করে দেয় আরামবাগ শহ-সহ মহকুমার ১৫টি পঞ্চায়েত এলাকাকে। এ বারও তাই হয়েছে। খানাকুল ১ ব্লকের কিশোরপুর ১ পঞ্চায়েতের ময়লা গ্রাম সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদের ধসে যাওয়া বাঁধটি অবিলম্বে সংস্কারের দাবি করে এলাকায় ক্ষোভ-বিক্ষোভও শুরু হয়েছে।
প্রসেনজিৎ ঘোড়ুই, উত্তম রাণা, মৃত্যুঞ্জয় প্রামাণিক প্রমুখ গ্রামবাসীর অভিযোগ, বাঁধটির বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্রায় অর্ধেক অংশ ধসে গিয়েছে। এখন থেকে সংস্কার না করলে বর্ষার আগে তা মজবুত হবে না। ওই বাঁধ ভাঙলে তিনটি পঞ্চায়েত (কিশোরপুর ১, ঘোষপুর এবং ঠাকুরানিচক) এলাকা সম্পূর্ণ জলমগ্ন হবে। প্রসেনজিতের খেদ, “বিষয়টি নিয়ে গ্রামবাসীদের তরফে সেচ দফতরে একাধিকবার দরবার করলেও কোনও সাড়া মেলেনি।” মুণ্ডেশ্বরী নদীতে বাঁধ নেই। সবটাই পার। পারের ধস নিয়ে মানুষের উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
জেলা সেচ দফতরের এক বাস্তুকার বলেন, “বাঁধের ভাঙন বা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির প্রকল্প রচনা করে রাজ্য প্রশাসনের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন হলেই কাজ হবে।” তিনি জানান, ময়ালে ওই বাঁধের অংশটি প্রায় ১ কিমি জুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ওই এক কিমি বাঁধ মজবুত ভাবে বাঁধানোর কাজে আনুমানিক খরচের হিসাব হয়েছে প্রায় দেড় কোটি টাকা।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বন্যায় খানাকুল ১ ও ২ ব্লক মিলিয়ে দ্বারকেশ্বর নদের তিনটি এবং রূপনারায় নদে একটি জায়গার বাঁধ সম্পূর্ণ ভেঙে যায়। এ ছাড়াও বহু জায়গায় ধস-সহ ছোট-বড় ক্ষত হয়েছে। গত অক্টোবর মাস থেকে ভাঙনগুলি সংস্কারের কাজ চলছে। তা প্রায় শেষের মুখে। সেগুলি হল— খানাকুল ১ ব্লকের কিশোরপুর ২ পঞ্চায়েত এলাকার তালিতের ১২৫ মিটার, কিশোরপুর ১ পঞ্চায়েতের বন্দিপুরে ১২০ মিটার, খানাকুল ২ ব্লকের ধান্যগোড়ি পঞ্চায়েতের ধান্যগোড়ি গ্রামের খুঁটেপাড়ায় ১৬০ মিটার এবং একই গ্রামের রূপনারায়ণ নদের বেড়াপাড়ায় ১০০ মিটার বাঁধ।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)