Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Uluberia

চোলাই ঠেকাতে এ বার রাতপাহারায় প্রমীলা-বাহিনী

প্রমীলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, কয়েক বছর আগে গ্রামে চলছিল চোলাই তৈরি। সংসারে যে’টুকু সঞ্চয় থাকত বাড়ির পুরুষরা চোলাই ঠেকে গিয়ে সেই টাকা উড়িয়ে আসত।

মহিলাদের রাতপাহারায় উদ্ধার হওয়া চোলাইয়ের প্যাকেট। নিজস্ব চিত্র

মহিলাদের রাতপাহারায় উদ্ধার হওয়া চোলাইয়ের প্যাকেট। নিজস্ব চিত্র

সুব্রত জানা
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ১৯ অক্টোবর ২০২২ ০৮:৩৫
Share: Save:

দিনের সঙ্গে এ বার জুড়ল রাতও।

এই গ্রামে চোলাই ঠেকের কথা জানে সকলেই। পুলিশও প্রায়ই অভিযান চালায়। কিন্তু চোলাই বিক্রি থামানো যাচ্ছে না কিছুতেই। তাই চোলাই ঠেক ভাঙতে দল বেঁধেছেন উলুবেড়িয়ার রাজাপুর থানার তুলসীবেড়িয়া গ্রামের জনা ৭০ মহিলা। দিনে তো নজরদারি চালান তাঁরা। কিন্তু অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে নজর এড়িয়ে প্রায়ই গ্রামে ঢুকছে চোলাই। সেই ব্যবস্থা আটকাতে এ বার রাতও জাগতে শুরু করেছে প্রমীলা বাহিনী।

খড়দহ, কুমারচক, গোবিন্দচক, সোনামুই, খানপুর, কামিনা-সহ আটখানা গ্রামের ওই বাহিনীর সদস্যরা জানান, সোমবার রাতে প্রায় ১৫০ লিটার চোলাই নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। এর আগে গত তিন মাসে তাঁরা প্রায় শ’দেড়েক চোলাই ঠেক ভেঙেছেন। প্রায় ৪০০ লিটার চোলাই উদ্ধার করে পুলিশের হাতে তুলেও দিয়েছেন।

কেন চোলাই রুখতে এমন মরিয়া তুলসীবেড়িয়ার মহিলারা?

প্রমীলা বাহিনীর সদস্যরা জানান, কয়েক বছর আগে গ্রামে চলছিল চোলাই তৈরি। সংসারে যে’টুকু সঞ্চয় থাকত বাড়ির পুরুষরা চোলাই ঠেকে গিয়ে সেই টাকা উড়িয়ে আসত। তার জন্য সংসারে লেগে থাকত অভাব। আর অশান্তি ছিল নিত্যসঙ্গী। শুধু তাই নয়, চোলাইয়ের নেশায় মহিলাদের উপর মারধরও চলত দেদার। তারই প্রতিবাদে ধীরে ধীরে জোট বাঁধছিলেন গ্রামের মহিলারা। প্রথমে কয়েক জন দল বেঁধে গ্রামে চোলাই তৈরির ব্যবসা বন্ধ করান তাঁরা।

কিন্তু চোলাই এত সহজে পিছু ছাড়েনি তাঁদের। এ বার প্রতি পাড়ায় গজিয়ে উঠতে শুরু করে চোলাই ঠেক। ফলে ফের লড়াই শুরু করেন গ্রামের মহিলারা। এ বার তাঁদের পাল্লা ভারী হতে শুরু করে। এখন দলে প্রায় ৭০ জন সদস্য। চোলাই ঠেক হলেই তাঁরা প্রথমে পুলিশে খবর দেন। পুলিশ না এলে প্রমীলা বাহিনীই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় ঠেক। দলের অন্য এক সদস্যর কথায়, ‘‘আগে তো গ্রামে চোলাই তৈরি হত। আমরা প্রতিবাদ করায় সেটা বন্ধ হয়েছে। আশা করি, চোলাই ঠেকও আমরা বন্ধ করতে পারব। না হলে সংসার বাঁচাতে পারব না।’’

তবে পুলিশির সাহায্য সব সময় পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ প্রমীলা বাহিনীর। ওই দলের সদস্য বছর চল্লিশের কল্যাণী বলেন, ‘‘আমরা গ্রামের মেয়েরা কোথায় চোলাই ঠেক চলে, সেটা জানি। পুলিশ কেন তাদের ধরতে পারে না! আমরা অভিযোগ জানালেও পুলিশ অধিকাংশ সময়ই কথায় গুরুত্ব দেয় না। তাই বাধ্য হয়ে মেয়েরা রুখে দাঁড়াচ্ছি।’’ অন্য এক সদস্যর ক্ষোভ, ‘‘পুলিশের কাছে রাতপাহারা দেওয়ার জন্য টর্চ ও লাঠি বহুবার চাওয়া হয়েছে। কোনও সহযোগিতা মেলেনি।’’

তবে অভিযোগ মানতে নারাজ আবগারি দফতর ও পুলিশ। জেলার এক আবগারি কর্তা বলেন, ‘‘তুলসীবেড়িয়া গ্রামে নিয়মিত অভিযান চালানো হয়। ধরা হয়েছে অনেককে। লাগাতার অভিযান নিশ্চয়ই সুফল মিলবে। তবে ঠেক খুঁজে বের করতে মহিলাদের ভূমিকা প্রশংসার যোগ্য।’’

হাওড়া গ্রামীণ জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘শুধু ওই গ্রাম নয়, সারা জেলা জুড়ে লাগাতার চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হয়। ধৃতদের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা করা হয়। তবে আগামী দিনে আরও বেশি বেশি নজরদারি চালানো হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uluberia Drug
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE