বাবার মৃত্যুর শংসাপত্রে জীবিত মাকে মৃত ঘোষণা করে ব্যাঙ্ক থেকে পেনশনের সমস্ত টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছিল ছোট ছেলের বিরুদ্ধে। অশীতিপর পঙ্গু মায়ের অভিযোগ ছিল, ছোট ছেলে তাঁকে দিনের পর দিন খেতে না দিয়ে অকথ্য নির্যাতন চালিয়েছে। মেরে পা-ও ভেঙে দিয়েছে। এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতে বড় ছেলে ও মায়ের করা মামলায় কলকাতা হাই কোর্ট অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশের পরে বৃহস্পতিবার রাতে লিলুয়ার চকপাড়ার বাসিন্দা, অভিযুক্ত ছেলে তপন দাসকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতকে শুক্রবার হাওড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, স্বামী ক্ষীরোদচন্দ্র দাসের মৃত্যুর পরে ছোট ছেলে তপনের সঙ্গে লিলুয়ার চকপাড়ার বাড়িতে থাকেন বীণাপাণি দাস নামে ৮০ বছরের ওই বৃদ্ধা। তাঁর দুই ছেলে। বড় ছেলে তাপস দাস ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তিনি হায়দরাবাদে থাকেন। ছোট ছেলে তপন পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে ভারত সরকারের টাঁকশালে কাজ করে। বৃদ্ধার অভিযোগ, স্বামীর মৃত্যুর পরে তপন তাঁর উপরে নির্যাতন শুরু করে। খেতে না দিয়ে মারধর করত। গালিগালাজ করতেও ছাড়ত না।
ওই বৃদ্ধা জানান, ১৯৯৬ সালে তাঁর স্বামী কেন্দ্রীয় আবগারি দফতর থেকে অবসর নেওয়ার পরে পেনশন অ্যাকাউন্টে অনেক টাকা জমে যায়। ২০১৮ সালে স্বামীর মৃত্যুর পরে সেই অ্যাকাউন্টটি বীণাপাণি দাসের নামে চালু হয়। দাদা তাপস বাইরে থাকার জন্য অ্যাকাউন্টটি দেখাশোনা করত তপন। বৃদ্ধার অভিযোগ, স্বামীর মৃত্যুর পরে তাঁর মৃত্যুর শংসাপত্রে ছোট ছেলে তাঁকে মৃত বলে উল্লেখ করে এবং পেনশনের নমিনি হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে পেনশন অ্যাকাউন্টে থাকা সব টাকা আত্মসাৎ করে।
বীণাপাণি এ দিন বলেন, ‘‘যখন বিষয়টা আমি এবং বড় ছেলে জানতে পারি, তখন লিলুয়া থানার পুলিশকে সব জানাই। কিন্তু পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বড় ছেলে আদালতে মামলা করে। সেই মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ তপনকে গ্রেফতার করেছে। আমি আজ খুশি।’’
যদিও ধৃত তপন তার বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এ দিন সে আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে বলে, ‘‘আমার বিরুদ্ধে বড়দা চক্রান্ত করছে। দায়িত্ব নিয়ে মায়ের দেখাশোনা করতাম। কোনও দিন মারধর করিনি।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)