Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Lockdown

রাশ একটু আলগা হতেই বিধি ভাঙার ‘উৎসব’ শুরু হাওড়ায়

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে হাওড়া শহরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা সাতশোর নীচে নেমে এলেও দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা সে ভাবে কমছে না।

প্রত্যাবর্তন: কড়াকড়ি খানিক শিথিল হতেই হাওড়ার মল্লিক ফটকে ফিরল ভিড়ের সেই পুরনো ছবি। দূরত্ব-বিধি মানার বালাই নেই, অনেকের মুখে নেই মাস্কও।

প্রত্যাবর্তন: কড়াকড়ি খানিক শিথিল হতেই হাওড়ার মল্লিক ফটকে ফিরল ভিড়ের সেই পুরনো ছবি। দূরত্ব-বিধি মানার বালাই নেই, অনেকের মুখে নেই মাস্কও। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

নিজস্ব সংবাদদাতা
হাওড়া শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০২১ ০৬:৫৮
Share: Save:

প্রশাসনের তরফে কড়াকড়ি চালু হওয়ার পরে কিছু দিন নিয়ম মানতে বাধ্য হয়েছিলেন সকলেই। কিন্তু সেই বিধিনিষেধ একটু শিথিল হতেই হাওড়া ফিরে এসেছে হাওড়াতেই। সকাল থেকেই সারা দিনের জন্য খুলে যাচ্ছে সমস্ত দোকানপাট। কোভিড-বিধি উড়িয়ে ভিড় উপচে পড়ছে বিভিন্ন বাজারে ও রাস্তায়। অটো, টোটো, ট্যাক্সি-সহ সব ধরনের যানবাহনই দিনভর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হাওড়া শহর জুড়ে। ভাবটা এমন, যেন করোনা চলে গিয়েছে। আর হাওড়াবাসীর এই প্রবণতা দেখেই শঙ্কিত জেলা প্রশাসন থেকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা। তাঁদের সকলেরই আশঙ্কা, প্রথম ঢেউয়ের পরে মানুষের বেপরোয়া মনোভাব যে ভাবে দ্বিতীয় ঢেউকে ডেকে এনেছিল, এ বারও সেই মনোভাবই হয়তো তৃতীয় ঢেউ আসার পথ প্রশস্ত করে দেবে।

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বর্তমানে হাওড়া শহরে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা সাতশোর নীচে নেমে এলেও দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা সে ভাবে কমছে না। ২ জুনের সরকারি বুলেটিন অনুযায়ী, হাওড়ায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৬৭০ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। সংখ্যার হিসেবে যা রাজ্যের মধ্যে তৃতীয়। মৃত্যুর সংখ্যার নিরিখে এক নম্বরে আছে উত্তর ২৪ পরগনা, তার পরেই কলকাতা।

বৃহস্পতিবার হাওড়া শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেল, সকাল থেকেই হাওড়া ময়দান, বঙ্গবাসী, মল্লিক ফটক, নেতাজি সুভাষ রোড, পঞ্চাননতলা রোড, ফাঁসিতলা মোড় এবং বটানিক্যাল গার্ডেন থানা এলাকার ক্যারি রোডে কোভিড-বিধির তোয়াক্কা না-করে হাজার হাজার মানুষ পথে নেমে পড়েছেন। দোকানপাট খুলে যাওয়ায় এবং পুলিশি বাধা না-থাকায় রাস্তায় বেরিয়ে পড়েছে অসংখ্য অটো, টোটো এবং ট্যাক্সি। অটো বা টোটোর অধিকাংশ চালকের মুখেই মাস্ক নেই। মাস্ক পরছেন না বাজারের বিক্রেতারাও। এ দিন দুপুরে মল্লিক ফটক এবং জিটি রোড এলাকায় দেখা গিয়েছে এমনই ছবি। যেন কোভিড সত্যিই চিরবিদায় নিয়েছে।

হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বলেন, ‘‘মানুষের এই বেপরোয়া মনোভাবের জন্য পরিস্থিতি ফের খারাপ হতে পারে। এ ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’ হাওড়া সিটি পুলিশের পদস্থ কর্তাদের একাংশের মতে, আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত কড়া বিধিনিষেধ থাকলেও ৩১ তারিখ নোটিস দিয়ে জানানো হয়েছিল, বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত খুচরো জিনিসের ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে রাখতে পারবেন। ওই নোটিস জারি হওয়ার পর থেকেই নিয়ম ভাঙার এই হিড়িক দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। খুচরো জিনিসের ব্যবসায়ী কারা, নোটিসে তা স্পষ্ট করে উল্লেখ না-থাকায় সব দোকানই খুলে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে বেলা ১২টা থেকে বিকেল ৩টে পর্যন্ত মদের দোকানও খুলে যাওয়ায় দূরত্ব-বিধি না মেনে লম্বা লাইন দিচ্ছেন লোকজন।

হাওড়া জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিতাই মণ্ডল বলেন, ‘‘হাওড়ায় কোভিড যখন ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসছে, তখনই সমস্ত দোকানপাট খুলে গেল এবং রাস্তায় ভিড় করা শুরু হল। আরও অন্তত এক মাস এই নিয়ন্ত্রণ থাকলে ভাল হত। সংক্রমণ কিন্তু ফের বেড়ে যেতে পারে।’’

হাওড়া সিটি পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘মানবিকতার খাতিরে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। যাঁরা এখন রাস্তায় বেরোচ্ছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই পেটের তাগিদেই বেরোচ্ছেন। তবে এ ভাবে চললে খুব শীঘ্রই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভাবা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE