Advertisement
E-Paper

Snakes: খেতে সাপ থেকে বাঁচতে ৮ ভাঁজের জুতোর কদর বাড়ছে

বছর চারেক আগে খেত-খামারে সাপের ভয় তাড়াতে বন্ধুকে সারের বস্তা দিয়ে বিশেষ ধরনের জুতো বানিয়ে দিয়েছিলেন গোঘাটের কামারপুকুর সিনেমাতলার বাসিন্দা শিবু দাস। তাতে ৮টি পুরু ভাঁজ ছিল। তারপরেই ম্যাজিক!

পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ ০৯:১৮
বস্তা দিয়ে তৈরি করা জুতো পরে ধানের জমিতে কীটনাশক দিচ্ছেন চাষিরা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

বস্তা দিয়ে তৈরি করা জুতো পরে ধানের জমিতে কীটনাশক দিচ্ছেন চাষিরা। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

বছর চারেক আগে খেত-খামারে সাপের ভয় তাড়াতে বন্ধুকে সারের বস্তা দিয়ে বিশেষ ধরনের জুতো বানিয়ে দিয়েছিলেন গোঘাটের কামারপুকুর সিনেমাতলার বাসিন্দা শিবু দাস। তাতে ৮টি পুরু ভাঁজ ছিল। তারপরেই ম্যাজিক!
চাষি-মহলে ওই জুতোর কদর এখন আর শুধু দশঘড়া গ্রামেই সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে পড়েছে কামারপুকুরের বিভিন্ন এলাকা, খানাকুল, পুরশুড়া, আরামবাগ এবং পাশের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল, ক্ষীরপাই, বাঁকুড়ার কোতলপুর, লোগো, মদনমোহনপুরেও। হচ্ছে কর্মসংস্থানও। শুধু কামারপুকুরেই ৪-৫টি ওই রকম জুতোর দোকান তৈরি হয়ে গিয়েছে। চাষিদের মুখে মুখে যা ‘ধানে ওষুধ ছড়ানোর জুতো’ নামে পরিচিত।

কারবারিরা জানান, ইউরিয়া বা ওই জাতীয় সারের বস্তা প্লাস্টিকের হয়। ৩-৪টি বস্তায় একজোড়া জুতো বানানো যায়। আট ভাঁজ পুরু করা হয়। সারদিনে অন্তত চার জোড়া জুতো বানানো যায়। বস্তা দেন চাষিরাই। একজোড়া জুতোর দাম পড়ে ১৮০-২০০ টাকা।

কারবারিদের মধ্যে জয়দেব আচার্য এবং পিরু রুইদাস বলেন, ‘‘সাপের জোর ছোবলেও ওই জুতোর বড়জোর দু’টি ভাঁজ পর্যন্ত পৌঁছবে বিষ দাঁত। এখনও পর্যন্ত জুতো ব্যবহার করে কারও বিপদ হয়েছে বলে শুনিনি।’’ যে সব চাষি এই জুতো ব্যবহার করছেন, তাঁদের মধ্যে আরামবাগের তিরোলের বিমান মালিক বলেন, ‘‘গামবুট পড়ে জল-কাদা ভর্তি জমিতে নেমে কাজ করা যায় না। এই জুতো পরে নিশ্চিন্তে ধানজমিতে কাজ করা যায়।’’ কামারপকুরের মানবেন্দ্র ঘোষের কথায়, ‘‘জুতোটা হাল্কা। পায়ে হাজাও হচ্ছে না।’’
বন্যাপ্রবণ আরামবাগ মহকুমায় বর্ষায় তো বটেই, সারা বছর ধরেই কমবেশি সাপের উপদ্রব নিয়ে তটস্থ থাকতে হয় মানুষকে। চার বছর আগে খেতে কাজ করতে গিয়ে সাপের ছোবল থেকে কোনও মতে বেঁচে গিয়েছিলেন দশঘড়া গ্রামের সুভাষ দোলুই। তারপর থেকে আর ভয়ে জমিতে নামতে চাইছিলেন না। বন্ধু শিবু দাস ব্যাগ ও জুতো সেলাই করতেন। তিনিই বুদ্ধি করে সারের বস্তা দিয়ে সুভাষের জন্য বিশেষ জুতো বানিয়ে দেন।

শিবু বলেন, ‘‘এখানে সাপে কাটলে ওঝা-গুনিনের কাছে যাওয়া বা নানা কুসংস্কার এখনও রয়ে গিয়েছে। সুভাষ নিজেই ওঝার কাছে ঘণ্টাতিনেক সময় নষ্ট করেছিল। বিষধর সাপ ছিল না বলে বেঁচেছে। ওঁর কথা ভেবেই নকশা করি প্লাস্টিকের জুতোর। এখন দেখছি বেশ চাহিদা। অনেককে শিখিয়েছি।’’

মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, শীতের মরসুম বাদে প্রতি মাসে গড়ে ২০-২৫ জন সর্পদষ্ট সেখানে ভর্তি হন। মৃত্যু হয় গড়ে ৬-৭ জনের। এর মধ্যে জমির ফসল পরিচর্যা করতে গিয়ে মৃত্যুর ঘটনাই বেশি। গত জুন মাস থেকে এখনও পর্যন্ত ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১২ জনই জমিতে কাজে গিয়ে সর্পদষ্ট হন।
হাসপাতালের সুপার সত্যজিৎ সরকার বলেন, “সর্পদংশনে একজনেরও মরার কথা নয়। মহকুমা হাসপাতাল-সহ সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে সাপে কাটার পর্যাপ্ত প্রতিষেধক এবং চিকিৎসার পরিকাঠামো আছে। স্রেফ সচেতনতার অভাবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। ৯০% সপর্দষ্টকেই ওঝা-গুনিন ইত্যাদি কুসংস্কার পর্ব সেরে যখন আনা হয়, তখন আমাদের কিছু করার থাকে না।”

Snakes Bite
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy