অজ্ঞাতবাসেও রেহাই নেই!
অভিযোগ, ভিন্ জেলায় বাপের বাড়িতে গিয়ে হুগলির গোঘাটের বিজেপির এক মহিলা প্রার্থীকে মারধর করে তুলে এনে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করেছে তৃণমূলের লোকজন। গোঘাট-২ পঞ্চায়েত সমিতির আসন থেকে মিন্টু মণ্ডল নামে ওই মহিলা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেছেন মঙ্গলবার। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
মনোনয়ন দাখিল পর্বে হুগলির আরামবাগ মহকুমায় তেমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু তারপরে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বিরোধীদের উপরে শাসক দলের চাপ বাড়তে থাকে বলে অভিযোগ। মঙ্গলবার ছিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।
গোঘাটের বিজেপি বিধায়ক বিশ্বনাথ কারকের অভিযোগ, সোমবার সকালে কামারপুকুরের মধুবাটী গ্রামে মিন্টুর বাড়িতে হামলা করে তৃণমূলের লোকেরা। প্রার্থিপদ টিকিয়ে রাখতে দলের তরফে তাঁকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত অন্যত্র থাকতে বলা হয়। তিনি পাশের বাঁকুড়া জেলার সুন্দরপুরে বাপের বাড়ি চলে যান। অভিযোগ, তৃণমূল কর্মী মহম্মদ ফিরোজের নেতৃত্বে মঙ্গলবার দুপুরে সেখানেগিয়ে তাঁর উপরে চড়াও হয় বাইক বাহিনী। বাইকে চাপিয়ে বেলা১টা নাগাদ বিডিও অফিসে তুলে আনা হয়। পরে আবার বাইকে তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়। বিশ্বনাথের অভিযোগ, ‘‘বাপের বাড়িতে গিয়ে ওঁকে মারধর করে তৃণমূলের ছেলেরা। মনোনয়ন তোলা ছাড়া উপায় ছিল না।’’
মিন্টুর স্বামী মারা গিয়েছেন। মেয়ে এবং প্রতিবন্ধী ছেলেকে নিয়ে থাকেন। সন্ধ্যায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘শরীর-মন খুব খারাপ। এ নিয়ে আর কিছু বলতে চাই না। ছেলেমেয়েকে নিয়ে শান্তিতে থাকতে চাই।’’ ফিরোজের দাবি, ‘‘মহিলাকে চিনিই না। কাউকেই চাপ সৃষ্টির প্রশ্নই নেই।’’ ব্লক তৃণমূল সভাপতি অরুণকুমার কেওড়ার কথায়, ‘‘বিরোধীদের প্রার্থিপদ তুলতে কোনও রকম চাপ দেওয়া হয়নি।’’
তবে মধুবাটীতেই সিপিএমের পঞ্চায়েত প্রার্থী শম্পা মণ্ডলকে শাসক দলের লোকেরা হুমকি দিয়েছে বলে অভিযোগ। আরামবাগের তিরোল, মায়াপুর-২, হরিণখোলা ১ ও ২ পঞ্চায়েতেও এমন অভিযোগ রয়েছে। মায়াপুর-২ পঞ্চায়েতের কাস্টদহিতে বিজেপি প্রার্থী প্রশান্ত সামুইয়ের বাড়িতে চড়াও হলে তাঁর মা ও স্ত্রী কাটারি নিয়ে তৃণমূলের বাইক বাহিনীকে তাড়ায় বলে খবর। কোনও ক্ষেত্রেই তৃণমূল অভিযোগ মানেনি।
শাসক দলের লাগাতার ‘সন্ত্রাস’ নিয়ে এ দিন আরামবাগের মহকুমাশাসক, এসডিপিও, বিডিওকে স্মারকলিপি দেয় সিপিএম। এসডিপিও অভিষেক মণ্ডলের দাবি, ‘‘প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিযোগ পাওয়া মাত্র পুলিশ ঘটনাস্থলে যাচ্ছে, আইনগত পদক্ষেপ করছে।’’ দলীয় নেতৃত্ব প্রকাশ্যে অভিযোগ অস্বীকার করলেও মহকুমার এক তৃণমূল নেতার কথায়, ‘‘আমরা তো বোমা-বন্দুক নিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করাচ্ছি না। রাজ্যের নানা সুয়োগ-সুবিধার কথা স্মরণ করিয়ে ভালবেসে, বিনয়ী হয়ে কিছুটা কাজ হাসিল করেছি।’’
এ দিকে, চুঁচুড়া-মগরা ব্লকের কোদালিয়া-২ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রার্থী বেলা ঘোষ মাঝি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। অভিযোগ, একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী সিপিএমের মিঠু কর্মকারকে ভয় দেখিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারে বাধ্য করে তৃণমূলের লোকেরা। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। এই ব্লকের দেবানন্দপুর পঞ্চায়েতের সিপিএম প্রার্থী মমতাজ বিবিকে গত শনিবার রাতে বাড়িতে গিয়ে তৃণমূলআশ্রিত দুষ্কৃতীরা হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। মমতাজ বলেন, ‘‘ওরা আমাকে ডাকাডাকি করে। দরজা খুলিনি। মনোনয়ন তুলে নিতে বলে চলে যায়। দলের জেলা নেতৃত্ব পাশে থাকায় ভয় কাটিয়ে প্রচারে নেমে পড়েছি।’’ হুমকি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে শাসক দল।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)