E-Paper

বোমায় হতাহত তিন বালকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ

দুই কিশোরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সম্প্রতি সাত লক্ষ টাকা করে সরকারি ক্ষতিপূরণ পেয়েছে দুই পরিবার। অভাবী পরিবার দু’টির আশা, উপযুক্ত চিকিৎসায় যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে দুই কিশোর।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২৫ ০৯:৩৯

—প্রতীকী চিত্র।

ফুটবল খেলছে বন্ধুরা। মাঠের ধারে বসে দেখছে সৌরভ চৌধুরী। সেও খেলতে পারত। কিন্তু বোমা বিস্ফোরণ তার পা থেকে ফুটবল কেড়ে নিয়েছে। ডান পা হাঁটুর নীচ থেকে নেই। বন্ধু রূপম বল্লভের বাঁ হাতের পাঞ্জা বাদ গিয়েছে। শরীর জুড়ে বিস্ফোরণের চিহ্ন। তারও কৈশোরের ছন্দ উধাও!

দুই কিশোরের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের জন্য সম্প্রতি সাত লক্ষ টাকা করে সরকারি ক্ষতিপূরণ পেয়েছে দুই পরিবার। অভাবী পরিবার দু’টির আশা, উপযুক্ত চিকিৎসায় যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে দুই কিশোর।

২০২৪ সালের ৬ মে লোকসভা ভোটের সময় পান্ডুয়ার তিন্না নেতাজি পল্লি কলোনিতে বাড়ির কাছে খেলছিল সৌরভ-রূপম। সঙ্গে মামাবাড়িতে বেড়াতে আসা পূর্ব বর্ধমানের পাল্লা রোডের বালক রাজ বিশ্বাস।গাছতলায় দু’টি ব্যাগে বোতল পড়েছিল। সুগন্ধী মনে করে একটি খুলতেই বিস্ফোরণ। ঘটনাস্থলেই মারা যায় রাজ। রাজের পরিবার দু’লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ পেল। তার বাবা অভিজিৎ আনাজ ব্যবসায়ী।

সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ও আহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণের জন্য গত বছরের ২৪ জুলাই হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের (ডিএলএসএ) কাছে আবেদন জানান তদন্তকারী পুলিশ অফিসার, মগরার সার্কেল ইনস্পেক্টর সৌমেন বিশ্বাস। তার ভিত্তিতে তৎকালীন জেলা বিচারক শান্তনু ঝাঁয়ের কার্যালয়ে অপরাধমূলক কারণে আঘাতের ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বোর্ডের (ক্রিমিনাল ইনজুরিজ় কমপেনশেসন বোর্ড বা সিআইসিবি) বৈঠক হয় গত বছরের সেপ্টেম্বরে। জেলা বিচারক ডিএলএসএ এবং ওই কমিটিরও চেয়ারপার্সন। তিনি বাদেও বৈঠকে ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক তথা ডিএলএসএ-র সচিব মানালি সামন্ত, অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) অমিতেন্দু পাল, হুগলি গ্রামীণের ডিএসপি (ডিইবি) সৌম্যশান্ত পাহাড়ি, ডেপুটি সিএমওএইচ (২) দেবযানী বসু মল্লিক, জেলা সমাজকল্যাণ আধিকারিক নিলয়কান্তি দত্ত ও তদন্তকারী অফিসার।

বৈঠকে ক্ষতিপূরণের অঙ্ক নির্ধারিত হয়। ডিএলএসএ-র তরফে রাজ্য আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষকে (এসএলএসএ) বিষয়টি জানানো হয়। দ্রুত ওই অর্থের জন্য তদ্বিরও করা হয়। তৎপর হন এসএলএসএ-র সদস্য সচিব সত্য অর্ণব ঘোষাল, উপ-সচিব দিব্যেন্দু নাথ। সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট তিন পরিবারের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা ঢোকে। দিন কয়েক আগে ফের সৌরভ-রূপমের চিকিৎসার ব্যাপারে খোঁজ নেন ডিএলএসএ-র সচিব।

পুলিশ সূত্রে খবর, এফআইআর-এ নাম থাকা এক ব্যক্তি ও এক মহিলাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁরা জামিন পান। হুগলির অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারকের (প্রথম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট) এজলাসে মামলা চলছে। চার জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছ। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ আগামী ২৭ নভেম্বর।

সৌরভের বাবা গৌতম চৌধুরী মারা গিয়েছেন। মা অরুণার বুকে পেসমেকার। বিড়ি বাঁধেন। রূপমের বাবা শুকদেব ভ্যানচালক। সৌরভ পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে, রূপম অষ্টম। শারীরিক কারণে নিয়মিত স্কুলে যাওয়া হয় না। শুকদেব বলেন, ‘‘যন্ত্রণা না থাকলেও ছেলের ডান ঊরুতে বোমার স্‌প্লিন্টার নিয়ে চিন্তা হয়। যদিও ডাক্তাররা বলেছেন, তেমন সমস্যা নাও হতে পারে।’’

অরুণা বলেন, ‘‘ছেলে ফুটবল ভালবাসত। কোচিং ক্লাসে দিয়েছিলাম। তার ছ’মাস পরেই ওই কাণ্ড। বন্ধুরা সাইকেলে স্কুলে নিয়ে যায়, ঘুরিয়ে আনে। ওকে বোঝাই, পা না থাকলেও অনেকে জীবনে সফল হয়েছে। সেই পথে চলতে হবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

compensation Injury Pandua

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy