E-Paper

পাখা বাঁচাচ্ছে অর্থ-বিদ্যুৎ, কারখানা দুই বোনের

সম্পূর্ণা বলছেন, তাঁরা চান এমন কিছু করতে যা গরিব মানুষের কাজে লাগবে। তাতেই দক্ষ মেকানিকাল এবং রিসার্চ দল নিয়ে এই কাজে নামা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:০০
বাঙালি দুই বোন উদ্যোগী পাখা তৈরি কারখানা। কারখানায় কাজ চলছে। চুঁচুড়া

বাঙালি দুই বোন উদ্যোগী পাখা তৈরি কারখানা। কারখানায় কাজ চলছে। চুঁচুড়া

বনবন গতি। দাম নাগালে। বিদ্যুৎ খরচ তিন ভাগ! ফলে হাওয়া জোরদার, পকেট এবং পরিবেশেরও বাঁচোয়া।

হুগলির সুগন্ধ্যার পুরুষোত্তমবাটীতে এই পাখা তৈরির কারখানা গড়লেন সম্পূর্ণা ও সম্রাজ্ঞী ঘোষ নামে দুই বোন। শ’দু’য়েক মহিলা-পুরুষ কাজ করছেন। ভগিনীদ্বয়ের লক্ষ্য, আরও কর্মসংস্থান।

দেখতে সাধারণ পাখার মতো হলেও এটি ‘বিএলডিসি’ (ব্রাসলেস ডিরেক্ট কারেন্ট) পদ্ধতিতে চলে। মোটরে ব্রাসের পরিবর্তে ‘চিপ’ থাকে। সম্পূর্ণা-সম্রাজ্ঞীর দাবি, বাজার পরীক্ষায় (টেস্ট মার্কেটিং) তাঁরা গত এক বছরে প্রায় ৬২ হাজার পাখা বেচেন। দেখেন, সাধারণ পাখায় যেখানে ৭০-৮০ ওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন, এতে ২৮-৩০। পুরোদমে চলেও সারা মাসে বিদ্যুৎ খরচ যৎসামান্য। পাখায় এলউডি আলো থাকছে, প্রয়োজনে জ্বালানো যায়। টিভির মতো রিমোট কন্ট্রোলেই চালানো বা গতির হেরফের করা যায়। সমীক্ষার পরেই কারখানা গড়েন।

বছর আঠাশের সম্পূর্ণা আইনজীবী। বাইশের সম্রাজ্ঞী সেন্ট জ়েভিয়ার্সের এমবিএ ছাত্রী।

এই ব্যবসায় কেন?

সম্পূর্ণা বলছেন, তাঁরা চান এমন কিছু করতে যা গরিব মানুষের কাজে লাগবে। তাতেই দক্ষ মেকানিকাল এবং রিসার্চ দল নিয়ে এই কাজে নামা। তাঁর কথায়, ‘‘বর্তমানে বিদ্যুৎ বাঁচানো জরুরি। ফলে বিএলডিসি পাখাই ভবিষ্যৎ। তবে বাজারে এর দাম যথেষ্ট। আমাদের পাখা নিম্নবিত্তেরাও কিনতে পারবেন। সিলিং ও টেবিল পাখাদুইই হচ্ছে। দাম ৯৯৯ থেকে ৬০০০ টাকা।’’ সম্রাজ্ঞী বলেন, ‘‘দৈনিক তিন হাজার পাখা তৈরি হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য, আরও আধুনিক যন্ত্র বসিয়ে দৈনিক ১০ হাজার তৈরি। তাতে আরও কর্মসংস্থান হবে।’’

সম্প্রতি কারখানার উদ্বোধনে এসে রাজ্যের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, ‘‘শুধু চাকরির কথা ভেবে বসে থাকলে চলবে না। ছোট বড় শিল্পের কথা ভাবতে হবে। তবেই ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এগোবে। কর্মসংস্থান হবে। সম্পূর্ণা-সম্রাজ্ঞী এটাই করছেন।’’ মন্ত্রী বেচারাম মান্না, জাভেদ খান, হুগলির জেলা সভাধিপতি রঞ্জন ধারাও এসেছিলেন।

শ্রীরামপুর কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক দীপঙ্কর ঘোষ জানান, সাধারণ পাখার মোটরে কার্বন বা গ্রাফাইটের ব্রাস থাকে চৌম্বক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনার জন্য। ঘোরার সময় ঘর্ষণে তা ক্ষয়ে যায়, বদলাতে হয়। বিদ্যুৎ খরচ ভালই। বিএলডিসি পাখায় চৌম্বক ক্ষেত্র পরিবর্তনের জন্য ব্রাসের পরিবর্তে বৈদ্যুতিন চিপ বা মাইক্রো কন্ট্রোলার থাকে। এতে বিদ্যুৎ খরচ কম তো বটেই, টেকসইও বেশি। তাঁর কথায়, ‘‘পরবর্তী সময়ে এতটা সাশ্রয় যে, আমার মতে দাম একটু বেশি হলেও বিএলডিসি পাখা নেওয়াই যুক্তিযুক্ত। দাম নাগালেহলে তো আরও ভাল! পরিবেশের ভাল তো বটেই।’’

সম্রাজ্ঞীরা থাকতেন চুঁচুড়ার সতীশ মুখার্জি রোডে। এখন বালিগঞ্জে। তাঁদের কথায়, ‘‘মেয়েরা কোনও কাজে পিছিয়ে নেই। আমরা কখনও ছেলে-মেয়ের পার্থক্য বুঝিনি। ভেবেছি, উদ্ভাবন দরকার। তাই এই কাজে উদ্যোগী হয়েছি।’’

নানা উদ্যোগে সব মেয়েদের ভাগ্যের চাকা ঘুরুক, চান দুই কন্যা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chinsurah Pocket Friendly

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy