Advertisement
০২ মে ২০২৪
Bride

লুকিয়েও লাভ হল না, নাবালিকা বধূ হোমে

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মেয়েটির বয়স সাড়ে ১৬ বছর। তার বাড়ি কিশোরপুরেই।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খানাকুল শেষ আপডেট: ০৩ জুন ২০২১ ০৫:৩৭
Share: Save:

ট্যাপকল থেকে জল পড়ে যাচ্ছে। নির্মীয়মাণ ঘরে জানলার ফ্রেম বসানোর কাজ হঠাৎ যেন বন্ধ! বালি-সিমেন্ট মাখা পড়ে রয়েছে। অথচ, গোটা বাড়িতে লোক নেই!

গত সোমবার এক নাবালিকা-বধূর খোঁজে খানাকুলের কিশোরপুরের একটি বাড়িতে গিয়ে প্রথমে আশ্চর্য হয়েছিলেন চাইল্ড লাইন এবং পুলিশ প্রশাসনের লোকেরা। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পরে প্রথমে বাড়ির যুবক ছেলেকে তাঁরা পুকুরপাড় ধরে ফিরতে দেখেন। পাশের বাড়ি থেকে বেরোয় শাড়ি এবং শাঁখা-সিঁদুর পরা তাঁর নাবালিকা স্ত্রী। যুবকের বাবা-মাও ফেরেন। আসেন রাজমিস্ত্রি। নাবালিকাকে শ্বশুরবাড়ি থেকে উদ্ধার করে হোমে পাঠানো হয়।

চাইল্ড লাইনের আধিকারিক সুস্মিতা কোলে এবং সুজাতা দাস জানান, তাঁদের আসার খবর আগে থেকেই কোনও ভাবে পেয়ে গিয়েছিল পরিবারটি। তাই সকলে সরে পড়েন। নাবালিকা-বধূকেও লুকিয়ে পড়তে বলা হয়। সু্স্মিতাদেবী বলেন, ‘‘ওই বাড়ির উঠোনে ওঁদের একটি মোবাইল ফোন পড়েছিল। তাতে বেশ কয়েকটি ফোন আসে। আমরা ফোন ধরলে উল্টোদিক থেকে ওই যুবকের নাম করে বলা হয়, তিনি যেন স্ত্রীকে নিয়ে সরে পড়েন।’’

প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রের খবর, মেয়েটির বয়স সাড়ে ১৬ বছর। তার বাড়ি কিশোরপুরেই। তবে সে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটালে মামাবাড়িতে থাকত। সে একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। গত ২৫ এপ্রিল মামাবাড়িতে মেয়েটির বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। প্রশাসনের তরফে বিয়ে আটকানো হয়। কিন্তু ঘাটাল চাইল্ড লাইনের আধিকারিকরা পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, খানাকুলে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে মেয়েটির বিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তাঁরা হুগলি চাইল্ড লাইনে জানান।

চাইল্ড লাইন সূত্রের দাবি, মেয়েটির মামাবাড়ি থেকে তার বাড়ির তথ্য বিশেষ জানানো হয়নি। তার বাবার নামও ভুল বলা হয়েছিল। ফলে, প্রশাসনের তরফে প্রথমে মেয়েটির বাড়ি খুঁজে পাওয়া যায়নি। গত সোমবার চাইল্ড লাইনের তরফে কিশোরপুর-১ পঞ্চায়েতে গিয়ে খোঁজখবর করা হয়। সেখান থেকে ওই নাবালিকার বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ির এলাকা জানা যায়। তাঁরা জানতে পারেন, বছর পঁচিশের এক যুবকের সঙ্গে দেখাশোনা করেই মেয়েটির বিয়ে হয়েছে। ছেলেটি বেঙ্গালুরুতে গয়নার কাজ করেন। তাঁর বাবা চাষ করেন।

ওই দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, পাড়াভর্তি লোক। যদিও, যুবকের বাড়ি কেউ দেখাতে চাননি। অনেক চেষ্টাচরিত্র করে ছেলের বাড়িতে পৌঁছে দেখা যায়, ঘরদোর খোলা থাকলেও লোক নেই। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান সন্দীপ বর ঘটনাস্থলে পৌঁছন। শেষে, প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে একে একে বাড়ির লোকেরা সবাই ফেরেন। বাবাকে ডেকে পাঠিয়ে মেয়েকে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার মেয়েটিকে ‘ভার্চুয়াল’ ভাবে চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটির সামনে হাজির করানো হয়। কমিটির নির্দেশে তাকে হোমে পাঠানো হয়েছে।

হুগলি জেলা চাইল্ড লাইনের কো-অর্ডিনেটর গোপীবল্লভ শ্যামল বলেন, ‘‘কম বয়সে মেয়ের বিয়ে হলে আখেরে তাঁর ক্ষতির সম্ভাবনা এবং নাবালিকা-বিয়ের আইনি নিষেধাজ্ঞার কথা জেনেও অনেকে এই ভুল করেন। তখন অনেকেই প্রশাসনের থেকে সত্যিটা আড়াল করার চেষ্টা করেন। এ ক্ষেত্রেও সেই চেষ্টাই হয়েছে প্রতি পদে।’’ পঞ্চায়েত প্রধানের কথায়, ‘‘মেয়েদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে রাজ্য সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্প রয়েছে। গরিব পরিবারের মেয়ের বিয়ের জন্য রূপশ্রী প্রকল্প রয়েছে। কেউ যাতে কম বয়সে মেয়ের বিয়ে দেওয়ার কথা না ভাবেন, সে ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ানো হবে। তা সত্বেও নাবালিকার বিয়ে হলে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bride
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE