E-Paper

পরিযায়ীর সুড়ঙ্গে আটকানো নিয়ে ফের প্রশ্নে কর্মসংস্থান

শিল্প সম্মেলন থেকে রাজ্যে হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প ঘোষণা হয় বছরের পর বছর। এ দিকে, প্রতি বছর বাংলার হাজার হাজার যুবক কাজের খোঁজে পাড়ি দেন দেশ-বিদেশে। জেলায় কর্মসংস্থানের পরিস্থিতি কেমন, খোঁজ নিল আনন্দবাজার

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০২৩ ০৮:১৯
উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকেরা।

উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকেরা। —ফাইল চিত্র।

প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠতে শুরু করেছিল করোনার সময় থেকে। যখন, দলে দলে শ্রমিক ভিন্‌ রাজ্য থেকে ঘরে ফিরেছিলেন অসহায় অবস্থায়। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন রাজ্যে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে সেখানে কাজে যাওয়া বহু শ্রমিক। দশ দিন আগে উত্তরকাশীর সুড়ঙ্গে এ রাজ্যের তিন শ্রমিকের আটকে পড়ার ঘটনা নতুন সংযোজন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ রাজ্যের কর্মসংস্থানের হাল নিয়ে ফের প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। প্রশাসন সূত্রের খবর, অক্টোবর মাসে দুয়ারে সরকার শিবিরে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্ত করা হয়। সেখানে হুগলি জেলায় ১৪ হাজারের বেশি শ্রমিক নাম নথিভুক্তির জন্য আবেদন করেন।

উত্তরকাশীতে আটকে পড়া ওই তিন নির্মাণ শ্রমিকের মধ্যে জয়দেব পরামাণিক এবং শৌভিক পাখিরার বাড়ি হুগলির পুরশুড়ায়। বুধবার তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিল আরএসপির প্রতিনিধি দল। দলের জেলা সম্পাদক মৃন্ময় সেনগুপ্তের অভিযোগ, ‘‘এক দিকে চাকরি দেওয়ার নামে বেকার যুবক-যুবতীদের থেকে কোটি কোটি টাকা লুট হয়েছে এ রাজ্যে। আর কাজ না পেয়ে যুবকেরা অন্য রাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কর্মসংস্থানের অভাবে হুগলি থেকে বহু ছেলে পরিযায়ী শ্রমিক হতে বাধ্য হচ্ছেন। উত্তরকাশীর ঘটনা আবার তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাল।’’

জয়দেবের বাড়ি ডিহিবাতপুর পঞ্চায়েতের নিমডাঙিতে। বাবা ছোট চায়ের দোকান চালান। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ে বছরখানেক আগে জয়দেব ভিন্‌ রাজ্যে পাড়ি দেন। বছর চব্বিশের শৌভিকের বাড়ি কেলেপাড়া পঞ্চায়েতের হরিণাখালি গ্রামে। তিনি কাজে যান মাস দেড়েক আগে।

মৃন্ময়ের দাবি, গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জেনেছেন, দুই গ্রামেই বহু ছেলে কাজের খোঁজে ভিন্‌ রাজ্যে যাচ্ছে। কৃষি কাজে আয় নেই। বিকল্প রুজির ব্যবস্থা নেই। তাই বাড়ছে পরিযায়ী শ্রমিক। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য উভয় সরকারের সমালোচনা করেন তিনি।
পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের নানা দফতরে চিঠিচাপাটি দিয়েছেন চন্দননগর শ্রমিক কল্যাণ সমিতি। সংস্থার উপদেষ্টা বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়ের ক্ষোভ, যখন কোনও দুর্ঘটনা ঘটে বা করোনার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়, শুধুমাত্র তখন ভিন্‌ রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকদের নিয়ে হইচই শুরু হয়। তাঁদের সামাজিক সুরক্ষা থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথাযথ ভাবে থাকে না। পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ওই সংস্থা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছে। এর পরে রাজ্য কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেছে।

বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে রাজ্য, কেন্দ্র দু'পক্ষই সম্পূর্ণ উদাসীন। শুধু লোকদেখানো পদক্ষেপ করলে চলবে না। প্রকৃত পক্ষেই যাতে শ্রমিকেরা ভাল থাকেন, তেমন ব্যবস্থা করতে হবে।’’

রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী তথা তৃণমূলের মুখপাত্র স্নেহাশিস চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বড় শরিক সিপিএমের সঙ্গে আরএসপি তো বছরের পর বছর রাজ্যের ক্ষমতায় ছিল। তখন কি পরিযায়ী কম ছিল? বেকারত্বের হার কত ছিল? ওদের মুখে কর্মসংস্থানের কথা! আর, অন্য রাজ্য থেকেও কত শ্রমিক আমাদের রাজ্যে আসেন, সেই হিসেব করে দেখুন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এখন কর্মসংস্থানের অবস্থা বাম আমলের থেকে অনেক ভাল। একশো দিনের কাজের টাকা কেন্দ্র মিটিয়ে দিলে গ্রামের মানুষের অবস্থা আরও ভাল হবে।’’ স্নেহাশিসের দাবি, বাম আমলের তুলনায় বর্তমানে বেকারত্বের হার ৪০ শতাংশ কমেছে৷ বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফের এই তথ্য দিয়েছেন।

এর পাল্টা বিজেপি নেতা স্বপন পাল বলেন, ‘‘তৃণমূলের স্বভাবই কেন্দ্রের ঘাড়ে দোষ চাপানো।
ওদের চুরি, তোলাবাজির জন্যই কর্মসংস্থান এবং রাজ্যের হাল আরও করুণ হয়েছে।’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Chinsurah migrant labour Unemployment

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy