Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Ganga Erosion

গঙ্গার ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে রাজ্যের কাছে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত

জেলা পরিষদের সেচ কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তী জানান, পরিদর্শনে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলের গভীরতাও অনেক।

An image of Ganga

ভাঙন আটকাতে জোড়াতাপ্পি। মঙ্গলবার গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটে। নিজস্ব চিত্র।

প্রকাশ পাল
গুপ্তিপাড়া শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৩ ০৬:১০
Share: Save:

নতুন করে গুপ্তিপাড়ায় পাড় ভাঙতে শুরু করেছে গঙ্গা। ভাঙনের বহর দেখে গঙ্গাপাড়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। শ্মশানঘাট থেকে ফেরিঘাটের জেটি, ইটভাটা সবই সঙ্কটে। প্রাথমিক ভাবে জোড়াতাপ্পি দিয়ে ভাঙন ঠেকাতে রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে জেলা সেচ দফতর। প্রশাসনের একাংশের বক্তব্য, পঞ্চায়েত ভোটের আগেই দরপত্র ডাকা দরকার। না হলে নির্বাচন ঘোষণা হয়ে গেলে ওই প্রক্রিয়ায় অনেক দেরি হয়ে যেতে পারে।

জেলা পরিষদের সেচ কর্মাধ্যক্ষ মনোজ চক্রবর্তী জানান, পরিদর্শনে দেখা গিয়েছে, প্রায় ৫০০ মিটার এলাকা ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জলের গভীরতাও অনেক। এখনই ঠেকা দিতে না পারলে, বিঘের পর বিঘে জমি তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গোটা বিষয়টি রাজ্য সেচ দফতরের প্রধান সচিবকে জানানো হয়েছে।

মনোজ বলেন, ‘‘ঠিক হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে ওই কাজের জন্য রাজ্য সেচ দফতরের কাছে ২০ লক্ষ টাকার প্রস্তাব পাঠানো হবে দফতরের নিম্ন দামোদর বিভাগের (২) পক্ষ থেকে। দরপত্র করে দ্রুত কাজ শুরুর চেষ্টা করা হবে।’’ মনোজ আরও জানান, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দলকে নিয়ে এসে ভাঙনের মাত্রা পরিদর্শন করে পাকাপাকি ভাবে কী করে তা ঠেকানো যায়, সেই পরামর্শ নেওয়া হবে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, শনিবার থেকে গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতের ফেরিঘাট সংলগ্ন সূর্যমন্দির থেকে চরকৃষ্ণবাটী পঞ্চায়েত এলাকার বেনালি চর পর্যন্ত ভাঙন দেখা দিয়েছে। স্থানীয় তিনটি ইটভাটা ও সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় বাঁশের খাঁচা, আধলা ইট, বালির বস্তা ফেলে কোনওক্রমে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা শুরু হয়। ব্লক প্রশাসনের তরফে বিষয়টি সেচ দফতরে জানানো হয়। সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার সোমবার সরেজমিনে পরিস্থিতি দেখেন। ভাঙনের এলাকা মাপজোক করা হয়।

গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ জানান, এলাকাবাসী এবং ইটভাটার তরফে ভাঙন ঠেকাতে পাড়ে ইট এবং বাঁশের খাঁচা ফেলার কাজ মঙ্গলবারেও হয়েছে। তবে, তাতে যে বিশেষ কাজ হওয়ার নয়, সংশ্লিষ্ট সব পক্ষই মানছেন। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, শীঘ্রই পাকাপোক্ত ব্যবস্থা না নিলে গুপ্তিপাড়া ফেরিঘাটের জেটি ভেসে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে গুপ্তিপাড়া থেকে নদিয়ার শান্তিপুরের মধ্যে ফেরি পরিষেবা প্রশ্নের মুখে পড়বে।

শুধু গুপ্তিপাড়া বা চরকৃষ্ণবাটী নয়, বলাগড় ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভাঙনের সমস্যা রয়েছে। জিরাটের চর খয়রামারিতে গঙ্গার কিনারে এসে দাঁড়ানো একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় কয়েক মাস আগে বন্ধ করে দেওয়া হয় কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে। তাঁর আদেশে তড়িঘড়ি অস্থায়ী স্কুল তৈরি করে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়। নতুন বিদ্যালয় ভবন তৈরির কাজ চলছে। মনোজের কথায়, ‘‘বড় ভাঙন ঠেকাতে কেন্দ্রীয় সরকার সাহায্য না করলে রাজ্যের একার পক্ষে তা করা মুশকিল।’’

পঞ্চায়েত সূত্রের বক্তব্য, শান্তিপুরের দিকে আন্তঃরাজ্য জলপথ পরিবহণ দফতরের একটি জেটি রয়েছে। ছোট জাহাজ দাঁড়ানোর সুবিধার জন্য ওই দফতরের তরফে সেখানে কিছুটা ড্রেজিং করা হয়েছিল। অভিযোগ, নিজেদের সুবিধামতো অল্প অংশ তারা ড্রেজ়িং করে। সেই অংশেরও সব পলি, বালি না-তোলায় সেগুলি জমে চর পড়েছে। তাতে স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গুপ্তিপাড়ায় পাড় ভাঙছে। বিশ্বজিৎ বলেন, ‘‘ভাল ভাবে ড্রেজ়িং করা হলেও পরিস্থিতি অনেকটা সামাল দেওয়া যাবে। জমিজিরেত বাঁচাতে আমরা পোর্ট ট্রাস্টেরও দ্বারস্থ হব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE