Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
উপপ্রধানের বিরুদ্ধে সুর চড়ছে সাঁওতায়
Crime

নিহত প্রতিবাদীর দেহ গ্রামে আসতেই অবরোধ

শাসক দলের একাংশ অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসী।

হাসিবুলের মৃতদেহ গ্রামে আসতেই ভিড় জনতার।

হাসিবুলের মৃতদেহ গ্রামে আসতেই ভিড় জনতার। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
পুরশুড়া শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২১ ০৭:০১
Share: Save:

পেরিয়ে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টারও বেশি সময়। সোমবার বিকেল পর্যন্ত পুরশুড়ার সাঁওতা গ্রামের প্রতিবাদী শেখ হাসিবুল হোসেনকে পিটিয়ে খুনে মূল অভিযুক্ত শ্রীরামপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান শেখ সাদ্দাম হোসেনকে ধরতে পারেনি পুলিশ। নতুন করে ধরা পড়েনি অন্য কোনও অভিযুক্তও। ফলে, ক্ষোভ বাড়ছে গ্রামবাসীদের।

শাসক দলের একাংশ অভিযুক্তদের আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন গ্রামবাসী। টোকিপুর গ্রামে অভিযুক্তদের কয়েকজনকে লুকিয়ে রাখা হয়েছে, এই দাবিও তুলেছেন কেউ কেউ। তাঁদের মধ্যে তৃণমূলের একাংশও রয়েছেন। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে হাসপাতালে ময়নাতদন্তের পরে এ দিন সন্ধ্যায় হাসিবুলের দেহ গ্রামে আনার সময়ে সাঁওতা মোড়ে প্রায় আধ ঘণ্টা অবরোধ হয়। তৃণমূলের ওই উপপ্রধান-সহ দোষীদের গ্রেফতার এবং কঠোর সাজার দাবি তোলেন অবরোধকারীরা। এলাকার তৃণমূল কর্মীরাও তাতে শামিল হন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবকে ঘটনাস্থলে এসে উপপ্রধান ও তার সঙ্গীদের দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করতে হবে, এমন দাবিও ওঠে।

দিলীপ আসেননি। পুলিশ পরিস্থিতি সামলায়। দিলীপ বলেন, ‘‘দলীয় স্তরে কিছু অভিযোগ এসেছে। দোষী প্রমাণিত হলে সে যে-ই হোক, পুলিশকে যেমন কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে, তেমনই দলও তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে। কেউ অপরাধীকে আড়াল করার বা পালিয়ে যেতে সাহায্য করলে তাকে ছাড়া হবে না।” জেলা পুলিশ সুপার অমনদীপ বলেন, ‘‘ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”

১০০ দিনের কাজে প্রকল্পে দুর্নীতি এবং তোলাবাজির প্রতিবাদ করায় উপপ্রধানের নেতৃত্বে কিছু তৃণমূল কর্মী শনিবার সকালে সাঁওতা গ্রামের কয়েকজন শ্রমিককে মারধর করে বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলে আসার পথে হাসিবুলও আক্রান্ত হন। তাঁকে লাঠি, রড, এবং লোহার আঁকশি দিয়ে পেটানো হয়। দাদাকে মারতে দেখে বাধা দিতে হাসিবুলের ভাই শেখ কিতাবুলও আক্রান্ত হন। তিনি বর্তমানে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন।

ওই ঘটনায় মোট ১৪ জনের নামে থানায় অভিযওগ দায়ের হয়েছিল। তার মধ্যে শনিবার রাতে তিন জনকে ধরা হয়। আদালতের নির্দেশে ধৃতদের চার দিনের পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে এসডিপিও (আরামবাগ) অভিষেক মণ্ডল জানান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক বুথ সভাপতি বলেন, ‘‘একজনকে পিটিয়ে মারা হল। আর একজন মৃত্যুর মুখে। এই সময় অভিযুক্তদের পুলিশের হাতে তুলে না দিয়ে দলের প্রভাবশালীরা লুকিয়ে রেখে পালিয়ে যেতে সাহায্য করল। আমরা পুরো ঘটনা দলের রাজ্যে ও জেলা নেতৃত্বকে জানাব।”

তৃণমূলের একাংশের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই সরকারি নানা প্রকল্পে উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা আদায়, নানা অজুহাতে তোলা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে উপপ্রধান ও তার লোকজনের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি হাসিবুলের কাছ থেকে তাঁদের গরু ব্যবসার জন্য উপপ্রধান ২০ হাজার টাকা দাবি করে বলে অভিযোগ। হাসিবুল বিরোধিতা করেন। কোনও অজুহাতে কেউ যাতে তাঁকে টাকা না দেন, তা নিয়ে গ্রামবাসীদের পরামর্শও দিচ্ছিলেন তিনি। তার জেরেই তাঁকে খুন হতে হল বলে মনে করছেন অনেকেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Lynching
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE