ভূমিপুজো দিয়ে ত্রিবেণীতে শুরু হল অনুকুম্ভের। —নিজস্ব চিত্র।
গ্রহ-নক্ষত্রের যোগে মিলেমিশে একাকার হতে চলেছে উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজ এবং পশ্চিমবঙ্গের ত্রিবেণী। কিন্তু মৌনী অমাবস্যার শাহি স্নানে প্রয়াগরাজে যা ঘটে গিয়েছে, মাঘ সংক্রান্তির ত্রিবেণীতে তার পুনরাবৃত্তি এড়াতে সক্রিয় পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন। তাই ত্রিবেণীর কুম্ভস্থলের আশপাশের পাঁচটি স্কুল থেকে মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্র সরিয়ে নিল প্রশাসন। বুধবার ভূমিপুজোর মাধ্যমে এ বছরের ত্রিবেণী কুম্ভের সূচনা হল। শাহি স্নান ১২ ফেব্রুয়ারি। তার এক সপ্তাহ আগেই রাজ্যের মন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রস্তুতি বৈঠক সেরে নিল হুগলি জেলা প্রশাসন।
আয়োজকদের দাবি এবং কিছু ঐতিহাসিক উল্লেখ অনুযায়ী, ছয়-সাত শতাব্দী আগে প্রত্যেক মাঘ সংক্রান্তিতে শাহি স্নান হত ত্রিবেণীতে। প্রয়াগরাজের মতো ত্রিবেণীতেও তিন নদীর সঙ্গম। প্রয়াগরাজকে বলা হয় ‘যুক্তবেণী’ সঙ্গম। ত্রিবেণীকে বলা হয় ‘মুক্তবেণী’। ত্রিবেণী কুম্ভমেলার আয়োজকদের কথায়, ‘‘গঙ্গাসাগরে মকর স্নান সেরে ফেরার পথে সাধুসন্তেরা ত্রিবেণীতে কয়েক দিন বিশ্রাম করতেন। তার পর মাঘ সংক্রান্তিতে ত্রিবেণীর সঙ্গমে শাহি স্নান সেরে তাঁরা নিজেদের তপস্থলীতে ফিরতেন। বিদেশি শক্তির হাতে দেশ পরাধীন হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে ত্রিবেণী কুম্ভ জৌলুস হারাতে থাকে। এক সময়ে বন্ধও হয়ে যায়।’’ ২০২২ সাল থেকে আবার ত্রিবেণীতে মাঘ সংক্রান্তির কুম্ভমেলার আয়োজন শুরু করেছে কয়েকটি ধর্মীয় সংগঠন। বুধবার সকালে তাঁদের তরফ থেকে আলমবাজার মঠের অধ্যক্ষ স্বামী সারদাত্মানন্দ, রিষড়া প্রেম মন্দিরের অধ্যক্ষ নির্গুণানন্দ ব্রহ্মচারী, রামকৃষ্ণ বেদান্ত সোসাইটির অধ্যক্ষ স্বামী শিবেশ্বরানন্দ এবং মেলার মূল আয়োজক কাঞ্চন বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে ভূমিপুজোর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে এ বছরের মেলা শুরু হল। তবে সাধুসন্তদের মূল জমায়েত হবে ১১ ফেব্রুয়ারি। পরের দিন নগরকীর্তন সেরে তাঁরা শাহি স্নান করবেন। জমায়েত থাকবে ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।
১০ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে মাধ্যমিক পরীক্ষা। ত্রিবেণী-বাঁশবেড়িয়ায় সাধুসন্ত এবং পুণ্যার্থীদের বড় জমায়েতের জেরে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের সমস্যা তৈরি হতে পারে। তাই মেলাস্থলের আশপাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যে থাকা পাঁচটি স্কুল থেকে এ বার মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্র সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। গত বছরও মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং ত্রিবেণী কুম্ভ একই সময়ে পড়েছিল। তাই মেলা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া নিয়ে প্রশাসন দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। শেষ পর্যন্ত কঠোর পুলিশি ও প্রশাসনিক বন্দোবস্তের মধ্যে মেলা আয়োজনের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু এ বার আর একেবারেই ঝুঁকি নিতে চাইছে না হুগলি জেলা প্রশাসন। মৌনী অমাবস্যার শাহি স্নান উপলক্ষে প্রয়াগরাজে যে ভাবে পদপিষ্ট হয়ে বহু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গের প্রশাসন এ বার অনেক বেশি সতর্ক থাকতে চাইছে। কুম্ভের জমায়েত এবং মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের ভিড় যাতে এক পথে না আসতে পারে, আগে থেকেই সে ব্যবস্থা করে ফেলা হয়েছে।
বুধবার সকালে হুগলির জেলাশাসকের দফতরে প্রশাসনিক বৈঠক হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না, চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অমিত পি জাভালগি, হুগলি গ্রামীণের পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন, চাঁপদানির বিধায়ক অরিন্দম গুঁই, সপ্তগ্রামের বিধায়ক তপন দাশগুপ্ত, তারকেশ্বরে বিধায়ক রামেন্দু সিংহ রায়। ছিলেন জেলা ও মহকুমা প্রশাসনের অন্য পদস্থ কর্তা এবং স্থানীয় পুরসভাগুলির চেয়ারম্যানেরা। রেল, পূর্ত, স্বাস্থ্য দফতর এবং দমকলের প্রতিনিধিরাও বৈঠকে ছিলেন। ১১ তারিখ থেকে ত্রিবেণী কুম্ভের বড় জমায়েত এবং ছ’মাস পর তারকেশ্বরের শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে প্রশাসনিক বন্দোবস্ত কেমন থাকবে, তা নিয়ে বিশদ আলোচনা হয়েছে বৈঠকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy