Advertisement
E-Paper

বাবার মৃত্যুশোকে ছেলে ও মেয়ে শয্যাশায়ী, মা শুধু চা-রুটি জোগাতেন! কী ঘটে উত্তরপাড়ার বাড়িতে?

হুগলির উত্তরপাড়ায় গগনভিলার তিন বাসিন্দাকে ঘরের দরজা ভেঙে উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের কর্তার মৃত্যুশোকে কাতর ওই পরিবারের সকলে ছিলেন মৃত্যুর অপেক্ষায়! কী ঘটেছিল বাড়িতে?

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২১:১২
Uttarpara

গ্রাফিক: সনৎ সিংহ (এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।)

পরিবারের কর্তা ছিলেন কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে। দিল্লিতে ‘পোস্টিং’ ছিলেন। ছেলেও চাকরি করতেন একটি নির্মাণ সংস্থায়। বাড়ির সবাই উচ্চশিক্ষিত। সে ভাবে অর্থাভাবও নেই সংসারে। কিন্তু সেই পরিবারে বৃদ্ধ কর্তার মৃত্যু বাকি সদস্যদের এমন ভাবে নাড়িয়ে দেয় যে, নিজেদের ঘরবন্দি করে ফেলেন সবাই। প্রায় ২০ দিন ওই ভাবেই ‘স্বেচ্ছাবন্দি’ ছিলেন হুগলির উত্তরপাড়ার রাজেন্দ্র অ্যাভিনিউর ‘গগনভিলা’র তিন সদস্য। সোমবার বাড়ির দরজা ভেঙে তাঁদের উদ্ধার করে পুলিশ। তার পর তিন জনেই উত্তরপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতাল সূত্রে খবর, অশীতিপর মা কিছুটা স্থিতিশীল। তবে পঞ্চাশোর্ধ্ব ছেলে এবং মেয়ের শারীরিক পরিস্থিতি বেশ সঙ্কটজনক।

গত ৪ ফেব্রুয়ারি মারা যান অবসরপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সরকারি চাকুরে গগনবরণ মুখোপাধ্যায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, দীর্ঘ দিন ক্যানসারে ভুগছিলেন তিনি। ছেলে সৌরভ মুখোপাধ্যায় বাবার চিকিৎসার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তার পর বাবার মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি ছেলে। একই অবস্থা পরিবারের বাকি দুই সদস্যেরও। গগনের মেয়ে চুমকি এমএ পাশ করা মহিলা। বাড়িতেই থাকতেন তিনি। গগনের স্ত্রী শ্যামলী মুখোপাধ্যায়ও বয়সজনিত অসুখে আক্রান্ত। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, গগন মারা যাওয়ার পর দিন দুয়েক ছেলেকে বাইরে নানা কাজকর্ম করতে দেখেছেন। কিন্তু তার পর ওই পরিবারের কাউকেই বাড়ির বাইরে দেখা যায়নি। বেশ কয়েক বার প্রতিবেশীরা খোঁজ নিতে গিয়ে ব্যর্থ হন। তার মধ্যে এক আত্মীয় ফোনে যোগাযোগ করায় মৃত গগনের ছেলে জানান, তাঁরা সবাই মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন। এর পর খবর ছড়িয়ে যায়। স্থানীয় কাউন্সিলর থেকে পুরপ্রধান এবং পুলিশ গিয়ে বাড়ির দরজা ভেঙে অসুস্থ অবস্থায় তিন জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

মঙ্গলবার হাসপাতালের শয্যায় বসে শ্যামলী জানান, দিন কুড়ি হবে তাঁদের সঙ্গে কারও যোগাযোগ ছিল না। তাঁর দাবি, প্রতিবেশীরা কেউ খোঁজখবর রাখেননি। ঘরে খাবারদাবার যা ছিল, তা দিয়ে কোনও ভাবে কয়েক দিন খুন্নিবৃত্তি হয়েছে। কিন্তু অশীতিপর ওই বৃদ্ধা বলেন, ‘‘হাতে করে কিছু নিয়ে হাঁটতে পারি না। হাত কাঁপে। চা-রুটি করেছিলাম কয়েক দিন। ছেলে-মেয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিল। দিন কয়েক কোনও ভাবে খাবার জুগিয়েছি।’’ তবে শেষ কয়েক দিন তাঁদের কী ভাবে কেটেছে, কী খেয়েছেন, কিছুই আর মনে করতে পারছেন না বৃদ্ধা। তিনি জানান, ছেলে সম্ভবত ফোন করেছিল আত্মীয় বৈষ্ণবদাস মুখোপাধ্যায়কে। তার পরেই তাঁদের তিনজনকে উদ্ধার করেন উত্তরপাড়ার চেয়ারম্যান, স্থানীয় কাউন্সিলর এবং পুলিশ।

মঙ্গলবার উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদব হাসপাতালে যান বৃদ্ধা এবং তাঁর দুই সন্তানকে দেখতে। চিকিৎসকের সঙ্গেও কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘‘গগনবাবুর মৃত্যুর পর মানসিক অবসাদই পুরো পরিবারকে এই অবস্থায় দাঁড় করিয়ে দেয়।’’

Hooghly Uttarpara family Death Case
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy