Advertisement
১৮ মে ২০২৪
মাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষা আর দেওয়া হল না ওদের

দুর্ঘটনায় মৃত্যু পরীক্ষার্থীর, জখম ২ ছাত্রী

হেলমেট ছিল না কারও মাথাতেই। অথচ, পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর তাড়া!

শোক: বাঁদিকে মৃত ছাত্র জানবাজ আনসার। ছবি: সুশান্ত সরকার

শোক: বাঁদিকে মৃত ছাত্র জানবাজ আনসার। ছবি: সুশান্ত সরকার

নিজস্ব সংবাদদাতা
পান্ডুয়া শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৭ ০১:৫৭
Share: Save:

হেলমেট ছিল না কারও মাথাতেই। অথচ, পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর তাড়া!

জোরে মোটরবাইক চালিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে গিয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষে মারা গেল পান্ডুয়ার এক মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী। জখম হল তার সঙ্গী মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী দুই ছাত্রী। বৃহস্পতিবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে পান্ডুয়ার জি টি রোডের আত্তি মোড়ে। মৃতের নাম জানবাজ আনসার (১৬)। জখম সাহিরা খাতুন এবং নাসরিন খাতুন নামে দুই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীকে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। মাধ্যমিকের শেষ পরীক্ষা তাদের আর দেওয়া হল না।

হুগলির পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘দুঃখজনক ঘটনা। তবে, নিজের জীবনের সুরক্ষার জন্য প্রশাসনের বিধি-নিষেধ মেনে চলা উচিত। ট্রাকটির খোঁজ চলছে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জানবাজ পান্ডুয়ার মুকুল সিনেমাতলা এলাকার বাসিন্দা। শশীভূষষণ উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রটির ‘সিট’ পড়েছিল মহানাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে। প্রতিদিন মোটরবাইকেই সে যাতায়াত করছিল। সাহিরা এবং নাসরিনের বাড়ি পান্ডুয়ার শেখপুকুর এলাকায়। দু’জনেই রাধারানি স্কুলের পরীক্ষার্থী। তাদের ‘সিট’ পড়েছিল পান্ডুয়ার তিন্না উচ্চ বিদ্যালয়ে। দু’জনেই জানবাজের পরিচিত। পান্ডুয়া স্টেশনের কাছে পৌঁছতেই রাস্তায় দুই ছাত্রীকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাইক থামায় জানবাজ। দুই ছাত্রী তাকে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ জানায়। ওই ছাত্রীদের পরীক্ষাকেন্দ্র তার নিজের পরীক্ষাকেন্দ্র থেকে অনেকটা দূরে এবং অন্য দিকে হলেও জানবাজ রাজি হয়। কিন্তু আত্তি মোড়ের কাছে ওই দুর্ঘটনা।

দুর্ঘটনার অভিঘাতে তিন জনেই রাস্তার ধারে কারখানার পাঁচিলের গায়ে ছিটকে পড়ে। লোকজন ও কর্তব্যরত সিভিক ভলান্টিয়াররা তাদের প্রথমে পান্ডুয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তিন জনকেই চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মারা যান জানবাজ। আহতদের চিকিৎসার তদারকিতে হাসপাতালে আসেন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী।

দুর্ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সিভিক ভলান্টিয়ার তন্ময় দাস বলেন, ‘‘মোটরবাইকটি বেশ জোরে ছুটছিল। আরোহীদের কারও মাথায় হেলমেট ছিল না। আমরা আস্তে চালানোর কথা বলা সত্ত্বেও ছাত্রটি কান দেয়নি। তারপরই দুর্ঘটনা।’’ জানবাজের বাবা আলতাব হোসেন বলেন, ‘‘সময়মতো পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর জন্যই ছেলে মোটরবাইক নিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এ দিন যে ওই দুই ছাত্রীও ওর সঙ্গে যাচ্ছিল, জানতাম না।’’ নাসরিনের মা সারিনা বিবির আক্ষেপ, ‘‘পরীক্ষার শুরু থেকে ওদের গৃহশিক্ষকই পৌঁছে দিচ্ছিলেন। এ দিন শেষ পরীক্ষা বলে ওরা নিজেরাই যেতে চেয়েছিল। এখন মনে হচ্ছে না-ছাড়লেই ভাল হতো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

injured student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE