শেখ আলতাব।—নিজস্ব চিত্র।
যেন বলিউডের কোনও অ্যাকশন ছবির দৃশ্য!
রাত প্রায় ৩টে। শ্রীরামপুর-জাঙ্গিপাড়া রোড ধরে ছুটছে গরুবোঝাই একটি ছোট লরি। মোটর সাইকেলে লরিকে ধাওয়া করেছেন দুই যুবক। কারণ তাঁদের গরু নিয়েই পালাচ্ছে লরিটি। বেশ কিছুটা দূরে লরিটিকে আটকাতে দুই বাইকআরোহী সামনে যাওয়ার চেষ্টা করতেই লরিটির ধাক্কায় ছিটকে পড়লেন রাস্তার ধারে। ধাক্কা মারার পর কিছুটা গিয়েই দাঁড়িয়ে পড়ল লরিটি। তারপর পিছিয়ে এসে একজনের দেহ তুলে নিয়ে ফের ছুট লাগাল।
মঙ্গলবার রাতে হুগলির জাঙ্গিপাড়ার মাঝেরপাড়ায় গরু চুরি রুখতে গিয়ে এভাবেই মৃত্যু হয়েছে এক যুবকের। গুরুতর জখম হয়েছেন তাঁর দাদা। তিনি কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শেখ আলতাব হোসেন (৩৭)। বুধবার সকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ দেখান মৃতের পরিবার ও এলাকার লোকজন। দুষ্কৃতীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবিতে মৃতদেহ আটকে রাখেন তাঁরা। উত্তেজনা বাড়লে শ্রীরামপুরের এসডিপিও বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। দুষ্কৃতীদের ধরার আশ্বাস দিলে বিক্ষোভ থামে। পুলিশ মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
জেলার পুলিশ সুপার প্রবীণ ত্রিপাঠী জানান, পাচারের জন্য গরু চুরি করে পালাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। তা রুখতে গিয়েই মৃত্যু হয়েছে এক জনের। এ নিয়ে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তদন্ত শুরুর পাশাপাশি দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।
কী ঘটেছিল ওই রাতে?
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, দিন কয়েক পরেই ইদুজ্জোহা। প্রতি বছরই এই উপলক্ষে জাঙ্গিপাড়ায় শ্রীরামপুর-জাঙ্গিপাড়া রাস্তার ধারে গরুর হাট বসে। শিয়াখালার শোভনারার বাসিন্দা শেখ শামিম এ বারও মাঝেরপাড়ায় অস্থায়ী ছাউনি করে এক মাস ধরে গরুর ব্যবসা করছিলেন। বুধবার হাসপাতালে শুয়ে শেখ শামিম বলেন, ‘‘রোজই গরু পাহারায় কেউ না কেউ থাকি। মঙ্গলবার রাত আড়াইটা নাগাদ দেখি জনা চারেক দুষ্কৃতী একটা ছোট লরিতে এসে আমাদের চার-পাঁচটা গরু তুলে নিয়ে পালাচ্ছে। বাধা দিতে গেলে আমাকে ধাক্কা মেরেই পালায় ওরা। আশপাশেও কেউ ছিল না।’’
তিনি জানান, সঙ্গে সঙ্গে বাড়িতে ছোট ভাই শেখ আলতাবকে মোটর সাইকেলটা আনতে বলেন। এর পর দু’জনে মিলে বাইকে লরিটিকে ধাওয়া করেন। চণ্ডীতলার বনমালিপুর ইটভাটার কাছে লরিটিকে আটকানোর চেষ্টা করলে লরিচালক গতি বাড়িয়ে তাঁদের মোটর সাইকেলে ধাক্কা মারে। রাস্তার ধারে ছিটকে পড়েন দুই ভাই। তাঁর কথায়, ‘‘ছিটকে পড়ার পর ভাই আর নড়াচড়া করছিল না। আমার প্রচণ্ড লেগেছিল। দেখি লরিটা একটু দূরে গিয়ে থেমে গেল। তার পর লরি থেকে একজন নেমে ভাইয়ের দেহটা তুলে নিয়ে চলে গেল। কোনওরকমে বাড়িতে ফোন করে সব জানাই।’’ পরে বাড়ির লোকজন খোঁজাখুঁজির পরে বারুইপাড়া রেলগেটের কাছে আলতাবের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। পরিবারের অভিযোগ, গরু পাচারকারীরা তাদের ট্রাকে তুলে নিয়ে গিয়ে আলতাবকে মারধর করে। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কারণ তাঁর শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ণ রয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অবশ্য পুলিশের অনুমান, লরির সঙ্গে ধাক্কাতেই আলতাবের শরীরে আঘাত লাগে।
স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী শেখ বাবুলাল বলেন, ‘‘ইদুজ্জোহার আগে প্রতিবছরই বাইরে থেকে গরু পাচারকারীরা এখানে হানা দেয়। পুলিশ কোনও ব্যবস্থাই নেয় না। এ দিন পুলিশের টহলদারি থাকলে হয়তো এমনটা ঘটত না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy