Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

চাকরির দাবি সিঙ্গুরে, নকল ফর্মেই স্বাক্ষর

মধুমিতার মতোই ওই ফর্মে সই করতে দ্বিতীয় বার ভাবলেন না অভিজিৎ মালিক, সুরজিৎ সাধুখাঁ এবং তাঁদের মতো আরও অনেকে।

প্রতীকী: নকল ফর্মে সই করছেন সিঙ্গুরের বেকার যুবক-যুবতীরা।

প্রতীকী: নকল ফর্মে সই করছেন সিঙ্গুরের বেকার যুবক-যুবতীরা।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়
সিঙ্গুর শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৯ ০১:৫১
Share: Save:

হাতের নাগালে চাকরির ফর্ম। হোক নকল বা প্রতীকী, সেটাই পূরণ করে সই করে দিলেন মধুমিতা মালিক। একটা চাকরি যে খুব দরকার।

মধুমিতার মতোই ওই ফর্মে সই করতে দ্বিতীয় বার ভাবলেন না অভিজিৎ মালিক, সুরজিৎ সাধুখাঁ এবং তাঁদের মতো আরও অনেকে।

ওই যুবক-যুবতীরা সকলেই সিঙ্গুরের বাসিন্দা। লোকসভা ভোটের ফল প্রকাশের পরেই জমি-আন্দোলনের এই ধাত্রীভূমিতে শিল্পের জোরদার দাবি তুলেছিলেন চাষিদের একাংশ। এ বার একই দাবি তুলতে শুরু করল সিঙ্গুরের নতুন প্রজন্মও। তারই ইঙ্গিত মিলল সিঙ্গুরে টাটাদের ফিরিয়ে আনার দাবিতে সিপিএমের দুই শাখা সংগঠনের (এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই) নেওয়া তিন দিনের ওই ‘নকল চাকরি’র ফর্ম ফিল-আপ কর্মসূচিতে। শনিবার দ্বিতীয় দিনে ৩২০ জন ওই ফর্ম পূরণ করেছেন বলে দাবি করেছেন এসএফআইয়ের জেলা সভানেত্রী নবনীতা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘কর্মসূচিতে ভাল সাড়া পাচ্ছি। দু’দিনে ৫৯২ জন সই করেছেন নকল ফর্মে।’’

সিঙ্গুরের বারোহাত কালীতলার বাসিন্দা মধুমিতা এমএ প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘বেকারত্ব কাটাতে রাজ্য সরকারের উচিত সম্মেলন থেকে টাটাদের ফের সিঙ্গুরে ফেরার আহ্বান জানানো। কোনও শিল্পপতি সিঙ্গুরে শিল্পস্থাপন করলে এখানকার ছেলেমেয়েরা চাকরি পাবে।’’

এমএ পাশ করেও এখনও কোনও কাজ পাননি বাজেমিলিয়ার যুবক অভিজিৎ। তাঁর ক্ষোভ, ‘‘আমরা সাধারণ বেকার যুবক। কোনও সরকারি প্রকল্পেও কোনও সুযোগ মিলছে না। চাকরিও না।’’ গোপালনগরের যুবক সুরজিৎ সাঁধুখার গলায় খেদ, ‘‘কষ্ট করে পড়াশোনা শিখে লাভ কী হল? একটা জীবিকা নেই।’’ সুরজিৎও মনে করেন, ‘‘টাটা প্রকল্পের জমি একমাত্র কাজে লাগবে শিল্প হলে।’’

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশমতো টাটাদের গাড়ি কারখানার জন্য বাম আমলে অধিগৃহীত জমি বছর তিনেক আগেই চাষিদের ফিরিয়ে দিয়েছে বর্তমান তৃণমূল সরকার। সেই জমি ‘চাষযোগ্য’ করেই ফেরানো হয় বলেও দাবি ছিল সরকারের। কিন্তু এখনও ওই জমিতে সে ভাবে চাষ না-হওয়ায় চাষিদের ক্ষোভ বাড়ছে। কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্বীকার করেন, সিঙ্গুরের চাষিদের অনেকেই এখন চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

সিঙ্গুরের নতুন প্রজন্মের মন বুঝেই পথে নেমেছে সিপিএমের দুই শাখা সংগঠন। আগামী ১২ এবং ১৩ সেপ্টেম্বর দু’দিনের ‘সিঙ্গুর থেকে কলকাতা পদযাত্রা’রও ডাক দিয়েছে তারা। শনিবার দুই সংগঠনের সদস্যেরা মোট তিনটি দলে ভাগ হয়ে বাজেমিলিয়া, বেড়াবেড়ি এবং গোপালনগরে অভিযান চালায়।

রাজ্যের শাসকদল অবশ্য সিপিএমের দুই সংগঠনের এই কর্মসূচিকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। জমি-আন্দোলনের নেতা তথা হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক বেচারাম মান্না বলেন, ‘‘চমক দিতে ওরা নকল ফর্ম নিয়ে হাজির হচ্ছে। তৃণমূল সিঙ্গুরের পাশেই রয়েছে। তৃণমূল শিল্প-বিরোধী নয়। জোর করে জমি নেওয়ার বিরুদ্ধে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Job Singu CPIM TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE