Advertisement
E-Paper

বৌভাতে উপহার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তহবিলে

আসলে, নিমন্ত্রিতদের বলে দেওয়া হয়েছিল, উপহার আনা চলবে না। একান্তই দিতে হলে যেন আর্থিক সহায়তা দেন। সেই টাকা তুলে দেওয়া হবে ‘নিপীড়িত’’ শিশুদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে। সে কথা লেখা ছিল নিমন্ত্রণের কার্ডেও।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৯ ০০:২৮
স্বতন্ত্র: স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে অর্থ সাহায্য অনুষ্ঠানে। ছবি: তাপস ঘোষ

স্বতন্ত্র: স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে অর্থ সাহায্য অনুষ্ঠানে। ছবি: তাপস ঘোষ

একে একে নিমন্ত্রিতরা ঢুকছেন। কিন্তু হাতে উপহার সামগ্রী নেই। বৌভাতের অনুষ্ঠানে এ দিক সে দিক ঘুরে তাঁদের অনেকে দাঁড়াচ্ছেন নির্দিষ্ট টেবিলের সামনে। পকেট থেকে টাকা বের করে দিচ্ছেন চেয়ারে বসা যুবক-যুবতীদের হাতে।

ব্যাপারটা কী?

আসলে, নিমন্ত্রিতদের বলে দেওয়া হয়েছিল, উপহার আনা চলবে না। একান্তই দিতে হলে যেন আর্থিক সহায়তা দেন। সেই টাকা তুলে দেওয়া হবে ‘নিপীড়িত’’ শিশুদের নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে। সে কথা লেখা ছিল নিমন্ত্রণের কার্ডেও।

কয়েক মাস আগে বলিউড তারকা রণবীর সিংহ এবং দীপিকা পাড়ুকোনের বিয়েতেও নিমন্ত্রিতদের বলে দেওয়া হয়েছিল, উপহার দিতে চাইলে যেন দীপিকার স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে চেক দেওয়া হয়। সেই টাকা খরচ করা হবে অসহায় মানুষের জন্য। সোমবার একই জিনিস দেখা গেল ভদ্রেশ্বরের শিবতলার বাসিন্দা রামকৃষ্ঠ শেঠ ওরফে নয়ন এবং প্রিয়াঙ্কার
বৌভাতের অনুষ্ঠানে।

তবে নয়ন চিত্রতারকা নন। তিনি টোটোচালক। ভদ্রেশ্বর থেকে বৈদ্যবাটীর রাস্তায় টোটো নিয়ে তাঁর দেখা মেলে। শিবতলায় তাঁদের একতলা বাড়ি। একটি ঘর ঢালাই করা। অন্যটিতে টিনের চাল। লৌকিকতার যুগে শেঠ পরিবারের সিদ্ধান্তে অনেকেই সাধুবাদ দিচ্ছেন। সঙ্কোচ ভুলে নিমন্ত্রিতরা খালি হাতে এসেছেন অনুষ্ঠানে।

বিয়েতে পণ নেননি নয়ন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ যুবকটি বলেন, ‘‘লৌকিকতার জন্য নিমন্ত্রিতেরা সমস্যায় পড়েন। তাই সবাইকে বলা হয়েছে, দরকার হলে ওই সংস্থাকে সাহায্য করুন। অসহায় বাচ্চারা উপকৃত হবে।’’ বাবা রঘুনাথ শেঠ, মা মণিমালাদেবী, ঠাকুমা পুষ্পরানিদেবী সকলেই নয়নের সিদ্ধান্তে এক কথায় সায় দিয়েছেন। বলা বাহুল্য, শেঠ পরিবারের সিদ্ধান্ত বিয়েবাড়িতে অন্য মাত্রা যোগ করেছিল।

বাড়ির পাশেই ম্যারাপ বেঁধে বৌভাতের অনুষ্ঠা‌ন হয়। প্রতিবেশী অশোক ঘোষ বলেন, ‘‘আমার সত্তর বছর বয়স হল। এমনটা আগে দেখিনি। নয়ন দৃষ্টান্ত তৈরি করল। ওরা বড়লোক নয়। কিন্তু প্রমাণ করল, মানসিকতাই আসল।’’

নয়নের আত্মীয়, মেমারির বাসিন্দা সৌমেন্দ্রনাথ পালের কথায়, ‘‘এই উদ্যোগের তুলনা হয় না। আমিও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। অসহায় শিশুরা উপকৃত হবে, এটা ভেবেই ভাল লাগছে।’’

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটির তরফে তাপস শূর বলেন, ‘‘সারনিকা বিশ্বাস নামে এক সদস্যার মাধ্যমে নয়নবাবু ইচ্ছের কথা জানান। দু’দশক ধরে রেল লাইনের ধারের বস্তির ছেলেমেয়েদের উন্নয়নে কাজ করি। অনেকেই সাহায্য করেন। কিন্তু বিয়েবাড়িতে এমন আয়োজন এই প্রথম। কত টাকা উঠল, সেটা বড় কথা নয়। ওরা যে সামাজিক বার্তা দিলেন, সেটাই শিক্ষনীয়।’’ সারনিকার কথায়, ‘‘নয়নদার মানসিকতাকে কুর্নিশ না করে পারা যায়!’’

কনে প্রিয়াঙ্কা বসু অসমের দরং জেলার খারুপিটিয়া এলাকার মেয়ে। স্বামীর সিদ্ধান্তে তাঁর চোখেমুখে আনন্দ। তিনি বলেন, ‘‘আমার জন্য এমন চমক অপেক্ষা করে থাকবে, ভাবতে পারিনি। ভীষণ আনন্দ হচ্ছে।’’

Marriage Reception NGO
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy