কেটে গিয়েছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময়। রিষড়ায় স্কুল শিক্ষিকা নিতু সিংহকে (২৪) খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত তাঁর ভাই অমিতকে বুধবার রাত পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। উদ্ধার করা যায়নি খুনে ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্রটি। এ দিনও এলাকাবাসীর আলোচনায় ঘুরে-ফিরে এসেছে সোমবারের ঘটনার কথা।
হুগলি জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, অভিযুক্তের হদিস পাওয়া যায়নি। তার মোবাইল বন্ধ রয়েছে। তার খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
রিযড়ার শ্রীকৃষ্ণনগরের নয়াবস্তি এলাকায় নিতুদের একতলা ছিমছাম বাড়ি। মোটামুটি সচ্ছল পরিবার। এলাকাটিতে হিন্দিভাষী মানুষের বাস। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে নিতু ছিলেন মেজো। দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। অমিত সকলের ছোট। অষ্টম শ্রেণির পরে সে পড়াশোনায় ইতি টানে। তাঁদের বাবা উমেশের কলকাতায় বৈদ্যুতিন সরঞ্জামের দোকান রয়েছে।
ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অমিতের পরিচিত এক যুবকের সঙ্গে এক সময়ে নিতুর বিয়ের কথা হয়েছিল। তাই এক সেনাকর্মীর সঙ্গে দিদির সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি অমিত। ওই সম্পর্কে অবশ্য নিতুর বাবা-মায়ের কোনও আপত্তি ছিল না। কিন্তু মানতে না-পারায় অমিত এ নিয়ে মাঝেমাঝেই দিদির সঙ্গে তর্কে জড়াত। সেই ঝগড়ার জেরে সোমবার গভীর রাতে অমিত দিদিকে গুলি করে খুন করে বলে অভিযোগ।
নিতু বরাবরই পড়াশোনায় ভাল। কিন্তু এলাকাবাসীর অনেকের মতে, সচ্ছল পরিবারের ছেলে হয়েও অমিত অসৎ-সঙ্গে পড়েছিল। সঙ্গদোষেই সে দিদিকে খুন করতে দ্বিধা করেনি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, খুব কাছ থেকে নিতুর কপালের ডানদিকে গুলি করা হয়। তাঁর ডান দিকের চোখ বেরিয়ে এসেছিল। মঙ্গলবার শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে ময়না-তদন্তের সময় গুলি বের করেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক। ময়না-তদন্তের পরে দেহটি আর বাড়িতে আনা হয়নি। ওই রাতেই শ্রীরামপুরের একটি ঘাটে নিতুর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
কিন্তু সচ্ছল পরিবারের ছেলে আগ্নেয়াস্ত্র পেল কোথায়? অমিতের পরিবারের লোকজন এ দিন কোনও কথা বলতে রাজি হননি। তবে, তদন্তকারীদের অনুমান, দিল্লি রোড লাগোয়া শ্রীকৃষ্ণনগর, প্রভাসনগর এবং আশপাশের এলাকার যে সব অপরাধীদের আনাগোনা রয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অমিতের। সেই সূত্রেই সে আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করে। উমেশবাবু আগেই বলেছিলেন, ‘‘সোমবার মাঝরাতে একটা আওয়াজ পাই। তার পরেই মেয়ের ঘরে গিয়ে দেখি, ওর শরীর রক্তে ভাসছে। ছেলে আমাকে ঠেলে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।’’
এলাকার যে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে নিতু পড়াতেন, সেখানকার শিক্ষক সুনীলকুমার রায় প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি ওই ঘটনা। তিনি বলেন, ‘‘নিতু ইংরেজিতে এমএ। আমাদের স্কুলে ইংরাজি এবং সমাজবিজ্ঞান পড়াতেন। সব অর্থেই তিনি দক্ষ শিক্ষিকা ছিলেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy