Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
প্রশাসনে আর ভরসা নেই, সাফ জানালেন তাঁরা

বালি চুরি রুখলেন আরামবাগের বাসিন্দারা

সোমবার গভীর রাতে চাঁদুর ভাটার মোড় সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদীর একটি অবৈধ বালি খাদে হানা দিয়ে তিনটি ট্রাক্টর আটক করলেন গ্রামের জনা পঞ্চাশ বাসিন্দা।

অবৈধ: পড়ে রয়েছে বালি তোলার নানা উপকরণ। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

অবৈধ: পড়ে রয়েছে বালি তোলার নানা উপকরণ। ছবি: সঞ্জীব ঘোষ

পীযূষ নন্দী
আরামবাগ শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৫৬
Share: Save:

বেআইনি বালি খাদান বন্ধ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কড়া নির্দেশ দিলেও আরামবাগে বালি চুরির রেওয়াজ বদলায়নি এতটুকুও। স্থানীয়দের অভিযোগ, সেচ দফতরের আধিকারিকদের দেখা মেলে না। ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরও অবরে সবরে ঢুঁ মেরে কিছু জরিমানা করে চলে যায়। পুলিশ আবার শাসকদলেরই মদতের অভিযোগ তুলে বিশেষ সক্রিয় হতে পারে না। তাই বালি লুঠ রুখতে রুখে দাঁড়ালেন আরামবাগের বাসিন্দারাই।

সোমবার গভীর রাতে চাঁদুর ভাটার মোড় সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদীর একটি অবৈধ বালি খাদে হানা দিয়ে তিনটি ট্রাক্টর আটক করলেন গ্রামের জনা পঞ্চাশ বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ, “স্থানীয় তৃণমূল নেতা শেখ স্বপনের ছেলে শেখ নিজাম এবং তাঁর দলবল সারা রাত ধরে বালি চুরি করছে দিনের পর দিন। একাধিকবার পুলিশ ও ভূমি সংস্কার দফতরে জানিয়েও কিছু কাজ হয়নি। বুঝে গিয়েছে, প্রশাসন কোনও কাজ হবে না। উল্টে নিজাম হুমকি দিয়েছে। নিজামের বাবা শেখ স্বপনের মদতেই এ সব চলছে।”

তবে চুরিতে বাধা পেয়ে খুব সহজে দমে যায়নি সেই বালি মাফিয়ারা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রথমে রুখে দাঁড়িয়েছিল চোরেরা। স্থানীয় তৃণমূল নেতার নাম বলে হম্বিতম্বিও কম করেনি। তবে মহিলারা মারমুখী হতেই তিনটি ট্রাক্টর ফেলে পালাতে বাধ্য হয় তারা। তবে তারা পালিয়েছে খান পাঁচেক বালি ভর্তি ট্রাক্টর নিয়ে।’’ এরপরেই লাগাতার বালি চুরির বিহিত চেয়ে রাত ১২টা থেকে প্রায় রাত ২টা বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। আরামবাগ এসডিপিও নির্মলকুমার দাস এবং আরামবাগ থানার আইসি ঘটনাস্থলে গিয়ে বালি বোঝাই তিনটি ট্রাক্টর আটক করেন।

আরামবাগের এসডিপিও নির্মলকুমার দাস বলেন, ‘‘বালি চুরি রুখতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এক সপ্তাহের মধ্যেই ৬ গাড়ি বালি আটক করে গাড়ির চালক এবং মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।” অন্য দিকে, আরামবাগ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক জয়ন্ত ভড় বলেন, “আমরা দফায় দফায় অভিযান চালাচ্ছি। চলতি বছরে এখনও পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করেছি। বেশ কিছু মামলা দায়ের করা হয়েছে।”

বেগতিক দেখে প্রকারান্তরে ছেলের কুকর্মের কথা কার্যত স্বীকারও করে নিয়েছেন শেখ স্বপন। তাঁর দাবি, ‘‘বালি চুরিতে আমার ছেলে যুক্ত—সেটা খুবই লজ্জার কথা। আমার ছেলে বালি ব্যবসা করে জানি। তবে চুরি করে ব্যবসা করছে কি না জানি না। প্রমাণ হলে আইনগত ব্যবস্থা নিক প্রশাসন।”

গত ২৬ নভেম্বর মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামের প্রশাসনিক সভায় বেআইনি খাদান বন্ধের কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু অভিযোগ, সেই নির্দেশের পরও যথারীতি অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। জেলা ভূমি ও ভূমি রাজস্ব দফতর সূত্রে জানা যায়, গত বছর ডিসেম্বরের ৫ তারিখে জেলা প্রশাসনের ডাকা বৈঠকে সিদ্ধান্তে হয়েছিল, নজরদারিতে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর এবং পুলিশের পাশাপশি সংশ্লিষ্ট এলাকার ব্লক প্রশাসন এবং সেচ দফতর কঠোর ব্যবস্থা নেবে। লাগাতার নজরদারি জন্য মহকুমাশাসকদের নেতৃত্বে সরকারি কর্মীদের একটি দল করার পরিকল্পনাও হয়েছিল। কিন্তু সে সব খাতায় কলমেই থেকে গিয়েছে বলে অভিযোগ।

জেলার মধ্যে নদী বেষ্টিত আরামবাগ মহকুমাতেই বালি মাফিয়াদের দাপট বেশি। আরামবাগ মহকুমার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া দামোদর, মুণ্ডেশ্বরী এবং দ্বারকেশ্বরে ১৫ টি বৈধ বালি খাদান। এবাদে অন্তত ৬০ থেকে ৭০টি জায়গা থেকে অবৈধ বালি তোলার অভিযোগ আছে স্বীকার করে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মহকুমা আধিকারিক বলেন, “বালি চুরিতে নেতারাই যুক্ত। ফলে বালি চুরি রোখা প্রশাসনের পক্ষে দূরহ। সচেতন মানুষই একমাত্র ভরসা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Sand Mafia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE