Advertisement
০৬ মে ২০২৪
বাগনানে খুন ঘিরে রহস্য, বেপাত্তা অভিযুক্তেরা

বন্ধুর ঘর থেকে মিলল ছাত্রীর দেহ 

পরনে সালোয়ার-কামিজ। চটের বস্তা দিয়ে মাথা ঢাকা। গলায় ফাঁসের দাগ। মাথার পিছনে গভীর ক্ষত থেকে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছিল। পা দু’টি নাইলনের দড়িতে বাঁধা।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের মা । ছবি: সুব্রত জানা

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন নিহতের মা । ছবি: সুব্রত জানা

নিজস্ব সংবাদদাতা
বাগনান শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৮ ০১:০২
Share: Save:

বন্ধুর ঘরের প্লাস্টিকের টেবিলের নীচে উপুড় হয়ে পড়েছিল মৃতদেহটা। পরনে সালোয়ার-কামিজ। চটের বস্তা দিয়ে মাথা ঢাকা। গলায় ফাঁসের দাগ। মাথার পিছনে গভীর ক্ষত থেকে রক্ত চুঁইয়ে পড়ছিল। পা দু’টি নাইলনের দড়িতে বাঁধা।

বুধবার বিকেলে বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে আর ফেরেনি ঈশিতা দত্ত (১৪) নামে বাগনানের এনডি ব্লকের নবম শ্রেণির ওই ছাত্রী। বৃহস্পতিবার সকালে নবাসন গ্রামে বন্ধুর তালাবন্ধ ভাড়া বাড়ি থেকে ওই অবস্থায় ঈশিতার মৃতদেহ উদ্ধারকে ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছে। বেপাত্তা শুভময় মণ্ডল নামে ওই বন্ধু এবং তার মা সুস্মিতা।

এই মৃত্যু নিয়ে অন্ধকারে পুলিশ এবং ঈশিতার পরিবারের লোকেরাও। শুভময় এবং তার মায়ের বিরুদ্ধে থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন ঈশিতার বাবা বিমলবাবু। একই সঙ্গে তিনি বাগনান থানার বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও তুলেছেন। কিন্তু কেন তাঁর মেয়েকে খুন করা হল, এ নিয়ে কিছু বলতে পারেননি।

বালিশে রক্তের দাগ (উপরে) ঈশিতা দত্ত (ইনসেটে)। ছবি: সুব্রত জানা।

বিমলবাবুর কথায়, ‘‘কিছু বুঝতে পারছি না। পরিচয় থাকলেও মেয়ে শুভময়কে দাদার মতো দেখত। পুলিশ তদন্ত করুক। মেয়ে ফিরে না-আসার কথা বুধবার রাতেই পুলিশকে বলেছিলাম। রাতেই পুলিশ ওই ঘরে হানা দিলে হয়তো মেয়েকে বাঁচানো যেত।’’ বাগনান থানার কর্তারা এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পু‌লিশ সুপার গৌরব শর্মা বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। মেয়েটিকে খুনের কারণ স্পষ্ট নয়। খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে। পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’ তদন্তকারীদের ধারণা, মেয়েটিকে কিছু দিয়ে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুনের চেষ্টা করা হতে পারে। তাই গলায় দাগ রয়েছে। কোনও ভাবে সেই চেষ্টা সফল না-হওয়ায় স্ক্রু-ড্রাইভার জাতীয় কিছু দিয়ে তার মাথায় আঘাত করা হয়।

ঈশিতারা আদতে হুগলির খানাকুলের বাসিন্দা। বিমলবাবু বাগনানের একটি সোনার দোকানের কারিগর। সেই কারণে তাঁরা বাগনান এনডি ব্লকে ভাড়া থাকেন। ওই পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার বিকেল ৪টে নাগাদ মেয়েটি টিউশন নিতে বেরোয়। সন্ধে ৬টা নাগাদ তার ফেরার কথা ছিল। কিন্তু না-ফেরায় মা মিঠুদেবী খোঁজখবর শুরু করেন। পরে সুস্মিতাকে ফোন করে জানতে পারেন, মেয়ে তার সঙ্গে তাদের বাড়িতেই গিয়েছে। তিনি মেয়েকে দ্রুত বাড়ি পাঠানোর জন্য সুস্মিতাকে বলে দেন। কিন্তু রাত ৮টা পর্যন্ত ঈশিতা না-ফেরায় মিঠুদেবী ফের সু্স্মিতাকে ফোন করেন। কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল। এরপরে তিনি স্বামীকে নিয়ে নবাসনে গিয়ে দেখেন শুভময়দের ঘর তালাবন্ধ। সু্স্মিতাকেও তাঁরা আর ফোনে পাননি।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুভময়দের বাড়ি শ্যামপুরের ঝুমঝুমিতে। নবাসনে সোমা সাঁতরার বাড়ির একতলার একটি ঘর ভাড়া নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকত শুভময়। তার বাবা মহীতোষবাবু ইলাহাবাদে সোনার দোকানে কাজ করেন। সেখানেই থাকেন। বছর আঠারোর শুভময় নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে স্কুলছুট হয়ে যায়। ঈশিতা যে স্কুলে পড়ে, তার সামনেই একটি দোকানে সে কাজ করত। সেই সূত্রেই ঈশিতার সঙ্গে তার আলাপ। মাসতিনেক আগে দোকানের কাজ ছেড়ে দেয় শুভময়।

মেয়েকে না-পেয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ঈশিতার বাবা ঝুমঝুমিতে শুভময়দের বাড়ির দিকে রওনা দেন। পথে তিনি সোমাদেবীর কাছ থেকে খবর পান, জানলা থেকে ওই তালাবন্ধ ঘরে ঈশিতার দেহ দেখতে পাওয়া গিয়েছে। বিমলবাবু সেখানে যান। আসে পুলিশ।

ঈশিতার মৃত্যু-রহস্য নিয়ে কিছু বলতে পারেননি সোমাদেবীও। তিনি জানান, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত শুভময় এবং ওর মা ঘরেই ছিলেন। বাইরে মেয়েদের একজোড়া জুতো ছিল। সেটি যে ঈশিতার, তা সুস্মিতাই তাঁকে জানান। সোমাদেবী বলেন, ‘‘৭টা নাগাদ একবার বাইরে যাই। তখনও শুভময়েরা ঘরে ছিল। সাড়ে ৭টা নাগাদ ফিরে দেখি ওই ঘর তালাবন্ধ। ঈশিতার মায়ের কাছ থেকে সব ঘটনা জানার পরে আমিও বহুবার শুভময়ের মাকে ফোন করি। ফোন বন্ধ ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Crime Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE