বাঁ দিকে, চাঁপদানিতে ছবিটি তুলেছেন দীপঙ্কর দে। ডান দিকে, সাঁকরাইলে রমাপ্রসাদ গঙ্গোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।
প্রার্থীদের ভাগ্যে কী আছে, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে প্রায় দেড় মাস। আপাতত তুঙ্গে উঠেছে পথেঘাটে দেওয়াল-তরজা!
দেওয়ালে শুধু প্রার্থীর নাম আর দলীয় প্রতীক লিখেই ক্ষান্ত নন নেতারা। তার বদলে কার্টুন আর মজাদার ছড়ায় বিপক্ষকে ঘায়েল করতে চাইছেন সবাই। ডাক পড়ছে পেশাদার শিল্পীদের।
হাওড়া ও হুগলি— কলকাতার কাছের দুই জেলাতেই ভোট ঘোষণা হওয়া ইস্তক রং-তুলি হাতে দেওয়াল-যুদ্ধে নেমেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। শাসকদলের সঙ্গে সমান টক্কর চালাচ্ছেন বিরোধীরা। ফেসবুক, খবরের কাগজে তীক্ষ্ণ নজর রাখছেন সবাই। জুতসই মনে হলেই তা বিলকুল তুলে আনছেন ঘোষবাবু বা বন্দ্যোপাধ্যায়বাবুর বাড়ির দেওয়ালে। দেওয়ালে-দেওয়ালে শোভা পাচ্ছে ছোটা ভীম থেকে গোপাল ভাঁড়, নন্টে-ফন্টে, বাঁটুল দ্য গ্রেটের মতো আমবাঙালির চেনা চরিত্র। শাসকদলের দেওয়ালে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে বানানো হয়েছে ‘ভাঁড়’। আবার শাসকদলের ‘কীর্তিকলাপ’ ভোটারের চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলতে সিপিএমের দেওয়ালে ঠাঁই পাচ্ছে সারদা-কাণ্ডে অভিযুক্ত নেতাদের মুখ। অবশ্যই কার্টুনে।
বলাগড় কেন্দ্রের গুপ্তিপাড়া-আমতলা মাঠের কাছে একটি দেওয়ালে দেখা গেল, দাঁড়িপাল্লার এক দিকে সিপিএম, কংগ্রেস এবং বিজেপি-র মিলিত প্রতীক। অন্য প্রান্তে শুধু জোড়া ফুল। শিল্পীর হাতের জাদুতে অবশ্য তৃণমূলের প্রতীকের পাল্লাই ভারী হয়ে ঝুলে পড়েছে। জাঙ্গিপাড়ার সিপিএম প্রার্থী পবিত্র সিংহরায়ের সমর্থনে লেখা একটি দেওয়ালে এক মহিলার কার্টুন। তাঁর হাতের মশালে এবং শাড়ির আঁচলে আগুন। গুপ্তিপাড়ার ভট্টাচার্যপাড়ায় থাকেন সনাতন ছৈয়াল। তিনি পেশাদার শিল্পী। ভোটের মুখে বেজায় ব্যস্ত। প্রতিদিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলছে কাজ। তিনি জানান, তৃণমূল এবং সিপিএম দুই দলের তরফেই বরাত পেয়েছেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে দিনে অন্তত দশটি দেওয়াল আঁকতে হচ্ছে তাঁকে। সকালে তৃণমূল তো রাতে সিপিএম! তার মধ্যে গোটাকতক কার্টুন অথবা ছড়া সংবলিত দেওয়ালও থাকছে।
ভোট এলে উত্তরপাড়ার কোতরঙের বাসিন্দা সুকান্ত চক্রবর্তীরও ডাক পড়ে। এক সময় সব দলের হয়েই দেওয়াল লিখতেন। গত কয়েক বছর ধরে অবশ্য শাসকদলের প্রচার-লিখনেই তাঁর কেরামতি চোখে পড়ে। তাঁর হাতে দেওয়াল সঁপে নিশ্চিন্তে থাকেন শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব। ইতিমধ্যে ময়দানে নেমেও পড়েছেন ওই যুবক। বিস্তর পরিকল্পনা রয়েছে। দলের ছেলেদের বলেছেন, তাঁরা যেন ভাল কয়েকটা ক্যাপশন উপহার দেন। তা হলে সেই মতো বেছে বেছে কার্টুন এঁকে দেবেন।
কংগ্রেসকে বরাবর সিপিএমের বি’টিম বলে কটাক্ষ করে এসেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সেই কথাই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে চাঁপদানির দেওয়ালে। এ বার সেখানে সিপিএমের সমর্থনে রাজ্য কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান জোটের প্রার্থী। আর তৃণমূলের দেওয়ালে দেখা যাচ্ছে, দু’জন হাত ধরাধরি করে রয়েছে। এক জনের হাতে কাস্তে-হাতুড়ি তারা, আর অন্য জনের হাতে হাতচিহ্নের পতাকা।
কার্টুনের পাশাপাশি ছড়ার লড়াইও জমে উঠেছে গেরস্থ বাড়ির দেওয়ালে। কোথাও কাঁচা হাতে লেখা ‘চুপচাপ ফুলে ছাপ’। কোথাও তার পাল্টা ‘এ বার জোটেই দেব ভোট’। ডোমজুড়ের একটি দেওয়ালে তৃণমূল কর্মীরা লিখেছেন,
‘কংগ্রেস হারিয়ে গিয়েছে
সিপিএমে অ্যালার্জি
নির্দলকে হারাতে হবে
জিতবে মমতা ব্যানার্জি’।
পাঁচলার একটি দোকানের দেওয়ালে সিপিএম লিখেছে—
‘বোনেরা দেবে উলুধ্বনি
ভাইয়েরা দেবে তালি
বাংলা থেকে তৃণমূলকে
করব এ বার খালি’।
এমন কত যে ছড়া দেওয়ালে দেওয়ালে! হুগলির উত্তরপাড়া কোতরংয়ে ডিওয়াইএফ নেতা, শিল্পী দেবাশিস কংসবণিক দেওয়াল লেখার কাজে নিবেদিত প্রাণ। একটি দেওয়ালে তিনি লিখেছেন, ‘দিদির পায়ে হাওয়াই চটি / দিদির ভাইরা কোটিপতি’। হাওড়া জেলা (সদর) তৃণমূলের সভাপতি অরূপ রায়ের কথায়, ‘‘দেওয়াল লিখনে সরকারের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরা হচ্ছে। তবে তুলির আঁচড়ে শুধু কিছু তথ্য নয়, ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে নন্টে-ফন্টে, বাটুল দ্য গ্রেট, হাঁদা-ভোঁদা। তাদের মুখেই লেখা হচ্ছে সংলাপ।’’ ডিওয়াইএফের হুগলি জেলা কমিটির সদস্য প্রণব দাসের বক্তব্য, ‘‘কার্টুন বা ছড়ায় সাধারণ মানুষ আকর্ষিত হন বেশি। আমরা তাই দু’টি বিষয়েই জোর দিচ্ছি। ওদের অপশাসন কার্টুন, ছড়ায় ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে।’’
পথের প্রচারে দুই জেলাতেই কার্টুন-ছড়ার মারকাটারি লড়াই জমে উঠেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy