ডিজে বাজানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চলেছে হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভা। শুক্রবার পুর কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের এক বৈঠকে ঠিক হয়েছে, আসন্ন পুজো মরসুমে কোথাও ডিজে বক্স বাজানো হলে আইনি পদক্ষেপ করবে প্রশাসন। একই নিষেধাজ্ঞা জারি হচ্ছে শহরের কোনও অনুষ্ঠান এমনকি বিয়ের মতো সামাজিক অনুষ্ঠানেও।
হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার প্রধান গৌরীকান্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ কয়েক বছর আগেই ওই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। কিন্তু সচেতনতা নেই। এ বার আমরা পুজোর অনুমতি দেওয়ার সময়ই আবেদনপত্রে উল্লেখ রাখছি বিষয়টি।’’
অর্থাৎ, পুজো উদ্যোক্তাদের কার্যত মুচলেকা দিতে হবে যে, মণ্ডপে বা নিরঞ্জন শোভাযাত্রায় বিধি লঙ্ঘন করে তারস্বরে ডিজে বক্স ব্যবহার করা যাবে না। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পক্ষ থেকে ডিজে বাজানোর উপর নিষেধাজ্ঞায় শব্দমাত্রা ৬০ ডেসিবেল পর্যন্ত বাঁধা ছিল। কিন্তু আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তারস্বরে ডিজে বাজে বিয়ে বাড়ি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে। পুজোর পর প্রতিমা নিরঞ্জনের শোভাযাত্রায় ক্রমশ অপরিহার্য হয়ে উঠছে ডিজে বক্স। অভিযোগ, ওই সব শোভাযাত্রায় নাভিশ্বাস ওঠে এলাকার বাসিন্দাদের। বাড়িতে বয়স্ক মানুষ থাকলে তো কথাই নেই।
হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের পুজো কমিটি, অনুষ্ঠান উদ্যোক্তা, ক্লাবগুলিকে বিধি মেনে চলার ফরমান জারি করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। এ ছাড়া পুজোর আগে মাইকে প্রচার করা হবে। তার পরেও আইন ভাঙলে পুলিশ পদক্ষেপ করবে।
চন্দননগরের পুলিশ কমিশনার অজয়কুমার বলেন, ‘‘পুলিশ আগেও অভিযান চালিয়েছে। এ বার পুরসভা সঙ্গে থাকলে আরও সুবিধা হবে।’’
যদিও এই ফরমানে প্রমাদ গুনছেন ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসন আর উদ্যোক্তা— দুইয়ের মাঝখানে তাঁদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। চুঁচুড়ার ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা নির্দিষ্ট ডেসিবেলের মধ্যেই গান চালানোর চেষ্টা করি। কিন্তু উদ্যোক্তারা আমাদের চাপ দেন। তারস্বরে গান না বাজলে অনেক সময়ই ভাড়ার টাকা মেলে না। এমনকি ভেঙে দেওয়া হয় যন্ত্রপাতি। আবার পুলিশ অভিযান চালালে সেই আমাদের যন্ত্রপাতিই আটক হয়।’’
আর এক ব্যবসায়ী পাপাই সরকার বলেন, ‘‘আলোর সঙ্গেই আমরা বক্স ভাড়া দিই। প্রচুর যুবকের কর্মসংস্থান নয়। এ ভাবে চলতে থাকলে ব্যবসাই উঠে যাবে মনে হয়।’’ পুলিশ কমিশনার অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘বিধি ভাঙলে পুজো উদ্যোক্তাদের বিরুদ্ধেই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
তবে পুরসভার সিদ্ধান্তে খুশি এলাকার বাসিন্দারা। দশম শ্রেণির ছাত্রী সুচরিতা বসু বলে, ‘‘পুজোর পরেই পরীক্ষা। ওই চিৎকার চেঁচামেচি চলে পুজো হয়ে যাওয়ার পরও খুব অসুবিধা হয় প্রত্যেক বছর। এ বার না হলেই বাঁচি।’’ আর এক বাসিন্দা তপন গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাড়িতে অসুস্থ মা রয়েছেন। দু’বছর আগে একবার নিষেধ করায় নোংরা কথা শুনিয়েছিল একদল যুবক। এ বার যদি তার প্রতিকার হয় তো ভাল।’’
তবে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন পুরসভার এই পদক্ষেপ কতখানি ফলপ্রসূ হবে তা নিয়ে। তাঁদের দাবি, মাইক বাজলে ডেসিবেল মাপতে আসবে কে? অভিযোগ জানানো তো হয়েছে এর আগে অনেক বার। এ বার কি তার থেকে আলাদা কিছু হবে?
যদিও আশাবাদী রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের প্রাক্তন কর্তা এবং পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘‘অনেক আগেই শব্দের নির্দিষ্ট মাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। বিধি ভাঙলে কড়া আইনি পদক্ষেপের কথাও ছিল। মানুষ সে সব মানেন না। থাকে রাজনৈতিক চাপও। পুরসভা আর পুলিশ পাশাপাশি থাকলে তাই ভাল কিছু হতেও পারে।’’