চাঁপদানি জিআইএস কটন মিলে বিশ্বকর্মা পুজো। ছবি: কেদারনাথ ঘোষ
সেই সুদিন গিয়েছে। তা সত্বেও বিশ্বকর্মা পুজোকে ঘিরে হুগলি শিল্পাঞ্চলে যে টুকু রোশনাই ছিল, করোনা-কালে তাও উধাও। বৃহস্পতিবার নমো নমো করে পালিত হল দেবশিল্পীর পুজো।শিল্পের সঙ্গে জড়িত লোকজন মনে করছেন, এমনিতেই এই শিল্পাঞ্চলে মন্দার ছায়া। বহু কারখানায় তালা পড়েছে। তার উপরে লকডাউনের সময় উৎপাদন বন্ধ থাকায় অর্থনৈতিক বুনিয়াদ ধাক্কা খেয়েছে। উৎপাদন চালু হলেও অর্থনীতির চাকা সে ভাবে সচল হয়নি। তারই প্রভাব পড়েছে বিশ্বকর্মা পুজোয়। ভদ্রেশ্বর, চাঁপদানি এলাকায় পাঁচটি জুটমিল এবং একটি কটনমিল রয়েছে। সেখানে ঘুরে মালুম হয়েছে, পুজোর জৌলুস এ বার কতটা ফিকে।
বিশ্বকর্মা পুজোর দিন এই সব কারখানা চত্বর এবং শ্রমিক মহল্লায় উৎসবের মেজাজ দেখা যায়। অনিল কুমার কাঁহার নামে চাঁপদানির ডালহৌসি জুটমিলের এক শ্রমিক বলেন, ‘‘এই একটা দিন মিলের গেট সাধারণ মানুষের জন্য খোলা থাকে। এ বার এমনিতেই কোনও রকমে পুজো হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির জন্য গেট বন্ধ রাখা হয়েছিল।’’ শ্রীরামপুর, রিষড়া, ডানকুনিতে দিল্লি রোড, দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারে ছোটবড় প্রচুর কারখানা রয়েছে। বিশেষ দিনটিতে এই সব কারখানার চৌহদ্দি আলোর রোশনাইতে ভরে ওঠে। প্যান্ডেল করা হয়। খাওয়াদাওয়া হয়। আশপাশের এলাকা থেকে সকলে ঠাকুর দেখতে আসেন। এ বার সে সবের বালাই কার্যত ছিল না। অনেক কারখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুজো সারতে যতটুকু আয়োজন না করলেই নয়, ততটুকু করা হয়েছে। প্রতিমার আকারও ছোট হয়ে গিয়েছে অনেক জায়গায়। রিষড়ার বাগখালের একটি কারখানায় দুপুরে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হত। এ বার শ্রমিকদের খালি মুখেই ফিরতে হয়েছে। অনিরুদ্ধ দাস নামে এক শ্রমিক বলেন, ‘‘আর্থিক সমস্যার পাশাপাশি শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার ব্যাপারও আছে। তাই, পুজোটুকু শুধু হয়েছে। বাকি সব আয়োজন বাতিল। বহু কারখানাতেই একই পরিস্থিতি।’’ তৃণমূলের শ্রমিক নেতা অন্বয় চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লকডাউন শিল্পক্ষেত্রে কতটা খারাপ প্রভাব ফেলেছে, পুজোর ছবি দেখেই তা পরিষ্কার। আশা করব, এ বার অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, আগামী বছর থেকে বিশ্বকর্মা চেনা চেহারায় ফিরবেন।’’
অদূর ভবিষ্যতে এই শিল্পাঞ্চলে বিশ্বকর্মা চেনা চেহারায় ফিরবেন, এমনটা অবশ্য ‘দিবাস্বপ্ন’ বলে মনে করেন বহু প্রবীণ। তাঁদের বক্তব্য, এক সময় বিশ্বকর্মা পুজোকে ঘিরে উৎসবে মেতে উঠত হুগলি শিল্পাঞ্চল। একের পর এক চটকল, কটন মিল, গাড়ি কারখানা, টায়ার কারখানা-সহ ছোট-বড়-মাঝারি কারখানা আলোর মালায় ভাসত। বর্তমানে হিন্দমোটর, ডানলপের মতো কারখানা বন্ধ। আড়াই বছর ধরে বন্ধ গোন্দলপাড়া, ইন্ডিয়া জুটমিলের মতো কারখানা। বঙ্গলক্ষ্মী, রামপুরিয়ার মতো কারখানা শুধু গুটিয়েই যায়নি, সেখানে মাথা তুলছে আবাসন প্রকল্প। বহু বন্ধ কারখানা চত্বর জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। ফলে বিশ্বকর্মা পুজো এমনিতেই জৌলুস হারিয়েছে।
শ্রীরামপুরের এক প্রবীণ বাসিন্দা বলেন, ‘‘হুগলি শিল্পাঞ্চলের সোনার দিন আর হয়তো ফিরবে না। তবু যে টুকু আছে, সেখানে সর্বাধিক মাত্রায় উৎপাদন হলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে। বিশ্বকর্মা পুজোয় ফের শ্রমিক মহল্লায় আলো পড়বে। অর্থনীতির কঠিন সময়ে এটাই আমাদের চাহিদা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy