Advertisement
E-Paper

রক্তসঙ্কট ডেকে আনল করোনা

শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে গত কয়েক দিন ধরেই পর্যাপ্ত রক্ত মিলছে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২০ ০৪:৩৫
রক্তের আকাল ব্লাডব্যাঙ্কে। জানান দিচ্ছে বিজ্ঞপ্তি।

রক্তের আকাল ব্লাডব্যাঙ্কে। জানান দিচ্ছে বিজ্ঞপ্তি।

চৈত্রের শুরুতেই রক্তের আকাল হুগলির বিভিন্ন হাসপাতালে। নেপথ্যে— করোনা। এই ভাইরাসের আবহে রক্তদান শিবির বাতিল করছেন উদ্যোক্তারা। কোথাও শিবির হলেও রক্তদাতাদের সংখ্যা নগণ্য। সঙ্কট কাটাতে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন জানানো হচ্ছে ব্লাডব্যাঙ্কের তরফে।

শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালের ব্লাডব্যাঙ্কে গত কয়েক দিন ধরেই পর্যাপ্ত রক্ত মিলছে না। পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিজেরাই রক্তদান শিবিরের আয়োজন করছেন। সামাজিক মাধ্যমে ‘পোস্ট’ দিয়ে, ফোন করে পরিচিতদের রক্ত দেওয়ার আবেদন জানানো হয়। শনিবার হাসপাতালে শিবির হয়। সেখানে ৩২ জন রক্ত দিয়েছেন। হাসপাতালের কর্তা-কর্মীদের পরিচিতরা ছাড়াও রোগীর আত্মীয়েরা রক্ত দেন। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘করোনা-পরিস্থিতিতে রক্তের জন্য এ ভাবে আরও শিবির করতে হবে মনে হচ্ছে।’’ তিনি জানান, রবিবার এবং আগামী ৫ এপ্রিল মৌখিক ভাবে দু’টি শিবিরের কথা বলেছিল দু’টি সংগঠন। দু’টিই বাতিল হয়েছে। আগামী রবিবারও একটি শিবির বাতিল করেছেন উদ্যোক্তারা।

নার্সিংহোমে ভর্তি আত্মীয়ের জন্য শনিবার দুই ইউনিট ‘বি পজিটিভ’ রক্তের প্রয়োজন ছিল শ্রীরামপুরের সৌমেন গঙ্গোপাধ্যায়ের। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতাল থেকে তিনি এক ইউনিট রক্ত পান। দ্বিতীয় ইউনিট রক্তের জন্য চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতাল এবং চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালে যোগাযোগ করেন। দুই জায়গা থেকেই জানানো হয়, রক্ত নেই। শ্রমজীবী হাসপাতালে রক্ত মেলে। সেখানে শিবিরে রক্তও দেন তিনি। হরিপালের অমরেন্দ্রনাথ মাণ্ডিও ওই হাসপাতালে নিজে রক্ত দিয়ে স্ত্রী-র জন্য এক ইউনিট রক্ত সংগ্রহ করেন। তার আগে কলকাতার মানিকতলা এবং হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে খালি হাতে ফিরতে হয় তাঁকে।

শনি ও রবিবার চুঁচুড়া ইমামবাড়া এবং চন্দননগর মহকুমা হাসপাতালের দু’টি করে রক্তদান শিবির বাতিল হয়েছে। ইমামবাড়া কর্তৃপক্ষ হাসপাতাল চত্বরে পোস্টার সাঁটিয়ে জানিয়েছেন, করোনাভাইরাসের জন্য অনেক শিবির বাতিল হচ্ছে। কারও রক্তের প্রয়োজন হলে তাঁরা যেন নিজেরা রক্ত দিয়ে তা নেন। চন্দননগর, আরামবাগ হাসপাতালের তরফেও একই কথা বলা হচ্ছে।

আরামবাগ হাসপাতাল সূত্রের খবর, করোনা-আতঙ্কে গত পাঁচ দিনে এখানে দু’টি রক্তদান শিবির বাতিল হয়েছে। দু’-একটি শিবির হলেও ২০-৩০ ইউনিটের বেশি রক্ত মিলছে না। ‘বি পজিটিভ’ গ্রুপ বাদে ব্লাডব্যাঙ্ক কার্যত শূন্য। আগামী দশ দিনে আরও পাঁচটি শিবির বাতিল হয়েছে। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত সুপার সুশান সিংহ বলেন, “অধিকাংশ শিবির বাতিল হওয়ায় রক্তের সঙ্কট দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে রক্তদানের আবেদন করা হচ্ছে।” এই ব্লাডব্যাঙ্কের উপরে মহকুমা হাসপাতাল বাদেও গোটা পঞ্চাশ নার্সিংহোম নির্ভরশীল। মহকুমা হাসপাতালেই প্রতিদিন গড়ে ১২ থেকে ১৫ জন থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী রক্তের জন্য ভর্তি হন। পাশের হাওড়া, বর্ধমান, বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুরের রোগীদের একাংশও এই ব্লাডব্যাঙ্কের উপরে নির্ভরশীল।

রক্তের সঙ্কট হতে পারে আঁচ করে থ্যালেসেমিয়া আক্রান্তদের নিয়ে কাজ করা শ্রীরামপুরের একটি সংগঠন সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে সাধারণ মানুষকে রক্তদানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে। ওয়ালশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবশ্য দাবি, রক্তের জোগান স্বাভাবিক রয়েছে।

হুগলির বিভিন্ন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইছেন, করোনা-পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষ রক্তদান করতে এগিয়ে আসুন। তা হলেই সঙ্কট মিটবে।

Coronavirus
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy