Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus Lockdown

পঞ্জাব থেকে ব্যান্ডেলে এল বিশেষ ট্রেন, হাজার জনের প্রত্যাবর্তন

শিশু থেকে তরুণী, যুবক থেকে বৃদ্ধা— কে নেই সেই ভিড়ে! সকলের চোখমুখে স্বস্তি। ফেরা গেল।

বাড়ি ফেরার আনন্দে। ব্যান্ডেল স্টেশনে। ছবি: তাপস ঘোষ

বাড়ি ফেরার আনন্দে। ব্যান্ডেল স্টেশনে। ছবি: তাপস ঘোষ

প্রকাশ পাল
ব্যান্ডেল শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০২০ ০২:০০
Share: Save:

রাত তখন সাড়ে ৯টা। ট্রেনের ভিতর থেকে কয়েকশো জোড়া চোখ জানলা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে।

শিশু থেকে তরুণী, যুবক থেকে বৃদ্ধা— কে নেই সেই ভিড়ে! সকলের চোখমুখে স্বস্তি। ফেরা গেল। ট্রেনের জানলা দিয়ে হাত নাড়ছিল কচিকাঁচারা। বড়রা মোবাইলে ছবি তুলতে ব্যস্ত।

অবশেষে লকডাউনে পঞ্জাবে আটকে পড়া এ রাজ্যের প্রায় এক হাজার মানুষ শনিবার ২৪ কামরার বিশেষ ট্রেনে ব্যান্ডেল স্টেশনে এসে পৌঁছলেন। সেই দলে পরিযায়ী শ্রমিক এবং পর্যটকেরাও ছিলেন। জেলা প্রশাসনের হিসেবে, হুগলি, কলকাতা, হাওড়া-সহ মোট ১১টি জেলার প্রায় এক হাজার মানুষ। এর মধ্যে হুগলিরই শ’পাঁচেক বাসিন্দা রয়েছেন।

প্রশাসনিক প্রস্তুতি সারাই ছিল। পালা করে এক একটি কামরা থেকে যাত্রীদের ধীরে ধীরে নামিয়ে আনা হয়। নির্দিষ্ট দূরত্ব মেনে ৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে তাঁরা লাইন দিয়ে দাঁড়ান। স্যানিটাইজ়ার দিয়ে তাঁদের হাত ধুতে হয়। ‘থার্মাল গান’ দিয়ে প্রত্যেকের শরীরের তাপমাত্রা মাপেন বর্মবস্ত্রে ঢাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা। তার পরে তাঁদের বাড়ি যাওয়ার ছাড়পত্র মেলে। তাঁদের ফেরার জন্য ৪২টি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বাসে ওঠার আগে যাত্রীদের টিফিন এবং জলের বোতল দেওয়া হয়। রাতেই দমকলের তরফে গোটা স্টেশন চত্বর স্যানিটাইজ় করা হয়।

জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও গোটা ব্যবস্থা তদারক করেন। হুগলির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শুভ্রাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ব্যান্ডেলে ওই ট্রেনযাত্রীদের কারও শরীরেই করোনার লক্ষণ মেলেনি। তাই নির্দেশিকা অনুযায়ী সবাইকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে।’’

জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, পরিবর্তিত সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী গুজরাত, মহারাষ্ট্র এবং রাজস্থান থেকে যাঁরা আসবেন, তাঁদের প্রত্যেকের লালারসের নমুনা করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে। অন্যান্য রাজ্যের ক্ষেত্রে প্রাথমিক শারীরিক পরীক্ষায় লক্ষণ মিললে তবেই ওই পরীক্ষা হবে।

যাত্রীরা জানান, তাঁদের কাউকেই টিকিট কাটতে হয়নি। তবে, শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ অমৃতসর থেকে ট্রেনে ওঠার সময়ে রেলের তরফে তাঁদের হাতে টিকিট দিয়ে দেওয়া হয়। তার আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। জলের বোতল এবং শুকনো খাবারও দেওয়া হয়। তবে, ট্রেনের শৌচাগার অপরিষ্কার থাকা এবং জল না-থাকা নিয়ে যাত্রীদের একাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ দিন ব্যান্ডেলে যাত্রীদের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব।

ওই যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন তারকেশ্বরের সর্দারপুরের মইনুদ্দিন মল্লিক। দীর্ঘদিন ধরে তিনি অমৃতসরে সোনার কাজ করেন। ব্যান্ডেল স্টেশনে পা দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বাঁচলাম। ওখানে কোনওক্রমে দিন কাটছিল। ফিরতে পারব কিনা, ভেবে পাচ্ছিলাম না। ট্রেন ছাড়ার খবর পেয়ে অমৃতসর স্টেশনে চলে আসি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Special Train Bandel Punjab
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE