ধেয়ে আসছে সাইক্লোন ‘আফুন’। তার জন্য বিভিন্ন জেলা কৃষি দফতরের কাছে সতর্কবার্তা পাঠিয়ে বোরো ধান ও খরিফ ফসল জমি থেকে তুলে নিতে বলেছে রাজ্য কৃষি দফতর। সেই সতর্কবার্তা পেয়েও কার্যত হাত-পা বাঁধা হাওড়া জেলার বোরো চাষিদের। প্রায় ৫০ শতাংশ জমির ধান কাটার মতো অবস্থায় চলে এলেও, মজুর পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে পর্যাপ্ত ধান কাটার যন্ত্রও নেই। সব মিলিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।
হাওড়া জেলায় প্রতি বছর প্রায় ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়। তবে এ বছর আমতা-২ ব্লকে জলের অভাবে কিছুটা চাষ কম হওয়ার ফলে মোট ৩০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে। ৫০ শতাংশ জমির ধান পেকে গিয়েছে। বাকি ধানও কয়েকদিনের মধ্যে কাটার উপযুক্ত হয়ে যাবে। কিন্তু চাষিরা পড়েছেন সমস্যায়।
প্রথম দফায় যে ধান পেকে গিয়েছে সেই ধান তাঁরা এখনও কাটা শুরু করতে পারেননি লকডাউনের মধ্যে মজুর জোগাড় করতে না পারায়। যন্ত্রেও ধান কাটা হয়। এই যন্ত্র বেশ মূল্যবান বলে কৃষি দফতর কিছু সংস্থাকে এই যন্ত্র ভর্তুকি দিয়ে সরবরাহ করে। কিন্তু তারা পর্যাপ্ত ধান কাটার যন্ত্র জোগান দিতে পারেনি বলে অভিযোগ। এই সব যন্ত্রপাতি জোগাড় করে যখন চাষিরা যখন ধান কাটার পরিকল্পনা করছেন, তখন সোমবার বিকেলে আচমকা চলে আসে সাইক্লোনের সতর্কবার্তা। এই অবস্থায় তড়িঘড়ি ধান কাটার ব্যবস্থা করতে গিয়ে মাথায় হাত জেলার চাষিদের।
গত দু’দিন ধরে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি চলতে থাকায় দু’একটি বাদে ধান কাটার অধিকাংশ যন্ত্র মাঠে নামানো যায়নি। অন্যদিকে লকডাউনের ফেরে হুগলি থেকে যে সব যন্ত্র আসে সেগুলিও আসেনি। আমতা ২ ব্লকের অমরাগড়ি গ্রামের বোরোচাষি সৌরভ রায় বলেন, ‘‘মজুর নেই। যন্ত্রও নেই। ঝড়ে সব ধান নষ্ট হয়ে যাবে বলেই মনে হয়। কিছু করার নেই।’’
তবে আমতা-২ ব্লকের কিছু জমিতে মঙ্গলবার যন্ত্র নামানো হয়। ঝামটিয়া গ্রামে এ দিন বিকেল থেকে ধান কাটা শুরু হয়েছে।
হাওড়া জেলা পরিষদের কৃষি ও সেচ কর্মাধ্যক্ষ রমেশ পাল বলেন, ‘‘হাওড়া এবং হুগলি দুই জেলার কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা দুই জেলার পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছেন। হুগলি থেকে ধান কাটার যন্ত্র আসার সময়ে যাতে বাধা না দেওয়া হয় সেই আবেদন জানানো হয়েছে। আশা করা যায়, দ্রুত যন্ত্রগুলি এসে যাবে।’’
হুগলির চাষের জমির অবস্থাও তথৈবচ। জেলায় এমনিতেই বোরো ধান লাগাতে দেরি হয়েছে। জেলার বিভিন্ন ব্লকে পাকা ধান কাটার কাজ চলছে। তবে, ধানের শিস বেরোনোর পরে অধিক বৃষ্টির কারণে জমিতে কৃষিযন্ত্র দিয়ে ধান কাটা যাচ্ছে না। মাটি নরম থাকায় যন্ত্র জমিতে নামতে পারছে না। আবার লকডাউনের জেরে কৃষি শ্রমিকের অভাব রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কায় চিন্তায় চাষিরা।
হুগলি থেকে কৃষিযন্ত্র হাওড়ায় যাওয়া প্রসঙ্গে হুগলির কৃষি দফতরের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘আমাদের জেলার বিভিন্ন কৃষি সমবায় সমিতিতে কৃষিযন্ত্র ভাড়া দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। ওই সব সমবায় সমিতির যোগাযোগের নম্বর হাওড়া কৃষি দফতরকে দেওয়া হয়েছে।’’