Advertisement
E-Paper

নকশা ফুটছে না শাড়িতে

নোটবন্দি এবং জিএসটি-র ধাক্কায় আগে থেকেই নড়বড়ে অবস্থা ছিল ছোট শিল্প-কারখানার। লকডাউনে এসে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। মালিকেরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। দেওয়ালে পিঠ ঠেকছে শ্রমিকদের। কবে ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি, তার কোনও দিশা দেখতে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞেরাও। কেমন আছে ওই সব শিল্প-কারখানার শ্রমিক-মালিকেরা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।শ্রীরামপুরে সিল্ক প্রিন্টিংয়ের মন্দদশা শুরু হয়েছে কয়েক বছর ধরেই।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১৪ এপ্রিল ২০২০ ০২:৪১
হাতে-গোনা: অল্প লোকেই চলছে কাজ। —নিজস্ব চিত্র

হাতে-গোনা: অল্প লোকেই চলছে কাজ। —নিজস্ব চিত্র

শেষ চৈত্রের বিকেল। রোদ আছে। তেজ নেই। কারখানার লম্বাটে ফাঁকা টেবিলের দিকে ফ্যালফ্যা‌ল করে তাকিয়ে রয়েছেন সঞ্জীব। দৃষ্টিতে শুধুই শূন্যতা।

বছরের এই সময় তাঁদের দম ফেলার ফুরসত থাকে না। উৎসবের মরসুমের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। তাঁদের হাতের মু্ন্সিয়ানায় একটার পর একটা শাড়িতে ফুটে ওঠে বাহারি নকশা। এ বার হাতে কাজ নেই। অযাচিত অবসরে তাই মন ভাল নেই সঞ্জীবদের।

শ্রীরামপুরে সিল্ক প্রিন্টিংয়ের মন্দদশা শুরু হয়েছে কয়েক বছর ধরেই। তবুও সঞ্জীব দাসের মতো বহু মানুষ এখনও প্রত্যক্ষ ভাবে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। লকডাউনের ধাক্কায় তাঁরা দিশেহারা। তাঁদের শিল্পই এখন চ্যালেঞ্জের মুখে।

শ্রীরামপুরের তারাপুকুর, তালপুকুর, মরাদান, মান্নাপাড়া, লঙ্কার বাগান, শেওড়াফুলি এবং বৈদ্যবাটীতে সিল্ক প্রিন্টিংয়ের ছোটবড় কয়েকশো কারখানা আছে। লকডাউনে এই শিল্পেও তালা পড়েছে। মরাদানের বাসিন্দা রাজীব চক্রবর্তী প্রায় কুড়ি বছর ধরে এই পেশায় যুক্ত। তাঁর দু’টি ইউনিট চলে। দিনে দু’-তিনশো শাড়ি ছাপা হয়। জনা চোদ্দো কর্মচারী আছেন।

রাজীবের কথায়, ‘‘করোনার জন্য আগেই সর্বত্র একটা অদ্ভুত পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। সেই কারণে কাজের অবস্থা ভাল ছিল না। এখন লকডাউনে কাজের প্রশ্নই নেই। আমাদের ব্যবসাটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। যাঁদের কাছে আমরা শাড়ি পাঠাই, সেই কারবারিরা বলছেন, আরও কয়েক মাস না গেলে এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করবেন না। যে সব শাড়ি তৈরি হয়ে রয়েছে সেগুলোও আপাতত নেবেন না। বিপদে পড়ে গিয়েছি।’’

স্থানীয়েরা শুধু নন, ভিন্‌ রাজ্য থেকেও অনেকে এখানে কাজ করতে আসেন। লকডাউনে তাঁদের অনেকে বাড়ি ফিরতে পারেননি। সঞ্জীবও তেমনই। তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পে শ্রমিকের কাজ করেন। বাড়ি বিহারে। সেখানে পরিবার রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘উপার্জন কিছু নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বসে রয়েছি। বাবু (মালিক) কারখানায় থাকতে দিয়েছেন। কেউ চাল-আলু দিচ্ছেন। বাবুও কিছু সাহায্য করছেন। কিন্তু এই ভাবে কী চলে? কবে সব স্বাভাবিক হবে?’’

এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছে গোটা শিল্প। শ্রীরামপুর ‘সিল্ক প্রিন্টার ওনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক প্রদীপ বণিক বলেন, ‘‘ব্যবসার হাল খুব খারাপ। শ্রমিকদের বাঁচাতে মালিকদের অনেকেই অল্পস্বল্প টাকা দিচ্ছেন। কিন্তু কাজ না-থাকলে তাঁরাই বা কোথায় পাবে‌ন? তাঁদেরও তো সংসার আছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘নোটবন্দি, জিএসটি-র ধাক্কার পরে এখন লকডাউন। আমাদের কপালে কী আছে কে জানে!’’ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেকে মনে করছেন, চটজলদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া কঠিন।

এক সময় এই শিল্পের রীতিমতো রমরমা ছিল। সেই দিন অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে। এক কারখানা-মালিকের বক্তব্য, মেয়েদের মধ্যে শাড়ি পড়ার চল কমেছে। তার উপরে অন্যান্য রাজ্য প্রযুক্তিতে পশ্চিমবঙ্গকে ছাপিয়ে অনেক উন্নত। সব মিলিয়ে এখানকার শিল্পে মন্দা চলছিলই। গত কয়েক বছরে অনেক কারখানা বন্ধ হয়েছে। ছাঁটাই হয়েছে শ্রমিক। রাজ্য সরকার সিল্ক-প্রিন্টিং হাব তৈরির গালভরা আশ্বাস দিয়েও তা করে উঠতে পারেনি। তা সত্ত্বেও নিজের জায়গা ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল এই শিল্প। কিন্তু লকডাউনের ধাক্কা তাকে আরও গাড্ডায় ফেলে দিল।

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy