Advertisement
E-Paper

এ বার রেশনে নজর পুলিশের

লকডাউনে গরিব মানুষদের খাদ্যসামগ্রী পেতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে রেশনে নিখরচায় চাল-গম বা আটা দেওয়া শুরু হয়েছে।

গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় ও পীযূষ নন্দী

শেষ আপডেট: ২১ এপ্রিল ২০২০ ০৬:১০
অভিযোগ: রেশন থেকে কম জিনিস দেওয়ার নালিশ চণ্ডীতলার নবাবপুরে। তদন্তে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র

অভিযোগ: রেশন থেকে কম জিনিস দেওয়ার নালিশ চণ্ডীতলার নবাবপুরে। তদন্তে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র

গ্রাহক-অসন্তোষ ঠেকাতে পুলিশকে হুগলির রেশন দোকানগুলিতে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দিল রাজ্য সরকার। কোথাও কোনও অভিযোগ পেলেই পুলিশকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। সেই মর্মে পুলিশের বড় কর্তারা নির্দেশিকা জারি করেছেন।

লকডাউনে গরিব মানুষদের খাদ্যসামগ্রী পেতে যাতে অসুবিধা না হয়, সে জন্য চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে রেশনে নিখরচায় চাল-গম বা আটা দেওয়া শুরু হয়েছে। হুগলিতে মোট রেশন দোকানের সংখ্যা ১২০০। সরকারি নির্দেশমতো গ্রাহকদের কার্ডপিছু নিখরচায় মাসে ২ কেজি করে চাল, ২ কেজি ৮৫০ গ্রাম

আটা বা ৩ কেজি করে গম পাওয়ার কথা। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই কম চাল-গম দেওয়ার অভিযোগ উঠতে থাকে জেলার নানা প্রান্ত থেকে। আটা না-পৌঁছনোয় ক্ষোভ-বিক্ষোভও দেখা দেয়।

সেই গ্রাহক-অসন্তোষ এখনও অব্যাহত। রবিবারই পুরশুড়ার এক রেশন ডিলারকে মারধর এবং তাঁর বাড়ি-গাড়িতে ভাঙচুর চালানোর অভিযোগ ওঠে গ্রাহকদের বিরুদ্ধে। তার আগে জাঙ্গিপাড়াতেও গ্রাহক-অসন্তোষের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। বিক্ষোভ এবং চাপে পড়ে প্রত্যেক গ্রাহককে ডেকে সঠিক ওজনে মাল দিতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্ট ডিলার।

জেলা খাদ্য দফতর যে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না, এমন নয়। ওই দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে পান্ডুয়া এবং পোলবায় দুই রেশন ডিলারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। শোকজ় করা হয়েছে অন্তত ১০ জন ডিলারকে।

জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীমকুমার নন্দী বলেন, ‘‘কোথাও কোনও অভিযোগ পেলেই কড়া পদক্ষেপ করা হবে। গ্রাহকদের সঠিক পরিমাণে জিনিস দিতেই হবে। অন্যথা করা যাবে না।’’

এই সতর্ক-বার্তা অবশ্য প্রথম থেকেই ছিল। কিন্তু তারপরেও রেশনে কম পরিমাণ চাল-গম পাওয়ার অভিযোগ উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে। কেন?

রেশন ডিলারদের জেলা সংগঠনের সম্পাদক অভিজিৎ রায় অভিযযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, ‘‘মাল কোথাও কম দেওয়া হচ্ছে না। উপভোক্তাপিছু খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ দফায় দফায় হওয়াতেই এই অশান্তি।’’

বিরোধীরা অবশ্য এ কথা মানতে নারাজ। প্রথম থেকেই তাঁরা ‘রেশন-দুর্নীতি’তে শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের একাংশের কলকাঠি নাড়া দেখছেন। তাঁদের দাবি, শাসকদলের ওই নেতারা রেশনের চাল-গম নিয়ে নিজেরাই বিলি করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে চাইছেন। কেউ বা মাল সরিয়ে রেখে খোলা বাজারে বিক্রির মতলব ফেঁদেছেন। ফলে, গ্রাহক রেশনে গিয়ে সঠিক পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী পাচ্ছেন না।

কার্ড বা কুপ‌ন না থাকায় শ্রীরামপুর শহরের বেশ কিছু নিম্নবিত্ত পরিবার রেশনে খাদ্যসামগ্রী পাচ্ছে না বলে প্রশাসন‌কে লিখিত ভাবে জানিয়েছে আরএসপি। সিপিএমের জেলা সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছি। শুধু ডিলারদের ঘাড়ে বিষয়টি চাপালে চলবে না। ওঁদের এত সাহস হবে না। এর পিছনে নিশ্চিত ভাবে স্থানীয় তৃণমূল নেতারাও রয়েছেন।’’ বিজেপি-র শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল বসু বলেন, ‘‘আমরা বারবার প্রশাসনকে বলছিলাম। সরকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় এখন আশা করছি কিছু কাজ হবে। তবে আমরাও সতর্ক আছি। ফের কোনও ঘটনা ঘটলেই আমরা প্রশাসনের নজরে আনব।’’

জেলা তৃণমূল সভাপতি দিলীপ যাদব অবশ্য রেশন দোকানে পুলিশি নজরদারির সিদ্ধান্তে সরকারি স্বচ্ছতাই দেখতে পাচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিরোধীরা অনেক কথাই বলছেন। কিন্তু সরকার যখনই গ্রাহকদের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়েছে, কালক্ষেপ না করে ডিলারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থা আরও বহুগুণ বেড়ে যাবে।’’

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy