Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
অপরাধ বাড়ছে গ্রামীণ হাওড়ায়, দুষ্কৃতী অধরা
Shyampur

গৃহকর্তাকে জখম করে লুটতরাজ

মঙ্গলবারের ঘটনায় জড়িতদেরও খোঁজ মেলেনি। পরপর দু’টি ডাকাতিতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।

হামলা: দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত গৃহকর্তা । — ছবি সুব্রত জানা।

হামলা: দুষ্কৃতীদের হাতে আক্রান্ত গৃহকর্তা । — ছবি সুব্রত জানা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৩৪
Share: Save:

ফের মধ্যরাতে শ্যামপুর থানা এলাকার এক গৃহস্থের বাড়িতে হানা দিয়ে নগদ কয়েক হাজার টাকা ও লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না লুট করে পালাল একদল দুষ্কৃতী। বাধা দিতে গিয়ে এক দুষ্কৃতীর ছুরির খোঁচায় জখম হন প্রৌঢ় গৃহকর্তা।

মঙ্গলবারের এই ঘটনা রসুলপুরের। গত ২৩ ডিসেম্বর রাতে রসুলপুর থেকে এক কিলোমিটার দূরে এই থানা এলাকারই নবগ্রামে একই কায়দায় ডাকাতি হয়। সেই ঘটনায় এখনও দুষ্কৃতীদের নাগাল পায়নি পুলিশ। মঙ্গলবারের ঘটনায় জড়িতদেরও খোঁজ মেলেনি। পরপর দু’টি ডাকাতিতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রসুলপুরের চাষি বছর পঞ্চান্নর সরোজ দাসের বাড়ির বারান্দার গ্রিল ভেঙে ঢোকে চার দুষ্কৃতী। তাঁর স্ত্রী বাসন্তীদেবী একটি ঘরে মেয়ে ও দুই নাতিকে নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। সরোজবাবু ছিলেন পাশের ঘরে। তাঁর স্ত্রীর ঘরের দরজা ভেঙে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। তারপর সেই ঘরের স্টিলের আলমারি ভাঙার শব্দ শুনে সরোজবাবু উঠে পড়েন।

সরোজবাবু বলেন, ‘‘ওদের মুখ কাপড়ে বাঁধা ছিল। বাধা দিতে যাওয়ায় একজন ছুরি দিয়ে আমার পিঠে খোঁচা মারে। একটু ধস্তাধস্তিও হয়। দুষ্কৃতীরা টাকা, গয়না নিয়ে দু’টি মোটরবাইকে চড়ে পালায়। ওরা ছ’জন এসেছিল। বাইরে দু’জন ছিল।’’ সরোজবাবুর স্ত্রী বলেন, ‘‘স্বামীকে ওরা মারধর করছে দেখে আমি ও মেয়ে কান থেকে দুল ও হাতের চুড়ি, বালা খুলে দিই। চিৎকার করলে ওরা প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। যাওয়ার আগে ওরা আমাদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ কিছু জরুরি কাগজপত্রের

ফাইলও নিয়ে যায়।’’

দুষ্কৃতীরা চলে গেলে সরোজবাবুদের চিৎকারে পড়শিরা চলে আসেন। তাঁরাই কিছুটা দূরে রাস্তার ধার থেকে ওই ফাইল উদ্ধার করে এনে দেন সরোজবাবুদের। খবর যায় পুলিশে। হাওড়া জেলা (গ্রামীণ) পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। এলাকার সমস্ত সিসিক্যামেরার ফুটেজ সংগ্র্হ করা হচ্ছে। দু’টি ডাকাতি একই দুষ্কৃতী দলের কাজ কিনা, তা-ও

খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

হাওড়া গ্রামীণ এলাকায় চুরি-ছিনতাই, অপরাধমূলক কাজকর্ম বেড়েই চলেছে। জেলা পুলিশের কর্তারা দাবি করছেন, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত চলছে। কিন্তু এক মাসের মধ্যে ঘটে যাওয়া কোনও অপরাধেরই এখনও কিনারা হয়নি। ধরা পড়েনি কোনও দুষ্কৃতী।

গত ২৩ ডিসেম্বর নবগ্রামে যে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের বাড়িতে ডাকাতি হয়েছিল, সেই কালীপদ দত্তের ক্ষোভ, ‘‘পুলিশ কী করছে কিছুই বুঝতে পারছি না। এখনও কেউ ধরা পড়ল না।’’ ওই এলাকারই বাসিন্দা মিঠুন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘প্রতিদিন আতঙ্কের মধ্যে রাত কাটাতে হচ্ছে।’’ রসুলপুরের বাসিন্দা অশোককুমার প্রামাণিক বলেন, ‘‘৩০ বছর এখানে বাস করছি। এই ধরনের ঘটনা কখনও ঘটেনি। ভয় তো লাগবেই। পুলিশের উচিত টহলদারি বাড়ানো।’’ গ্রামীণ হাওড়ার অপরাধ বেড়ে চলায় মাঠে নেমেছে বিজেপি। তারা পুলিশকেই দুষছে। জেলা (গ্রামীণ) বিজেপি সভাপতি প্রত্যুষ মণ্ডলের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ এখন শাসক দলের নেতাদের নিরাপত্তা দিতে ব্যস্ত। পুলিশ তৃণমূলের ক্যাডার হয়ে কাজ করছে। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা দেবে কী করে? কিছু সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে পুলিশ এখন কাজ চালাচ্ছে।’’ এ কথা মানতে নারাজ জেলা (গ্রামীণ) তৃণমূল সভাপতি পুলক রায়। তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি প্রশাসনের দেখার কথা। প্রশাসন নিশ্চয়ই দেখছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Shyampur Crimainal Loot
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE