Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

শিশু-পড়ুয়াদের ইংরেজি দক্ষতায় মুগ্ধ ডিএম

ইংরেজির ক্লাস। হাজির স্বয়ং জেলাশাসক। তিনি প্রশ্ন করছেন ইংরেজিতে।

সহপাঠী: ইছাপুর প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের সঙ্গে বসে জেলাশাসক (নীল শাড়ি)। নিজস্ব চিত্র

সহপাঠী: ইছাপুর প্রাথমিক স্কুলে পড়ুয়াদের সঙ্গে বসে জেলাশাসক (নীল শাড়ি)। নিজস্ব চিত্র

নুরুল আবসার
শ্যামপুর শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০৩
Share: Save:

একটুও ঘাবড়ায়নি ওরা।

কতই বা বয়স হবে? বড়জোর ৬-৭ বছর। সবে প্রথম শ্রেণি।

ইংরেজির ক্লাস। হাজির স্বয়ং জেলাশাসক। তিনি প্রশ্ন করছেন ইংরেজিতে। কচিকাঁচারাও ইংরেজিতেই বলছে তাদের নাম, বাবার নাম, ঠিকানা। বোর্ডেও লিখছে ইংরেজিতে।

কোনও শহুরে ঝাঁ চকচকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল নয়। হাওড়া জেলার শ্যামপুর-১ ব্লকের ধানধালি পঞ্চায়েতের সাদামাটা ইছাপুর প্রাথমিক স্কুলের ওই কচিকাঁচাদের ইংরেজি দক্ষতা দেখে বৃহস্পতিবার অবাক জেলাশাসক (ডিএম) মুক্তা আর্য। তাঁর কথায়, ‘‘একটি প্রত্যন্ত গ্রামের প্রাথমিক স্কুলের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার মান দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। ওরা ইংরেজি বলতে ও লিখতেও পারে। আমি নিজে সব দেখলাম। শ্যামপুরে লেখাপড়ার মান বেশ ভাল।’’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের নিয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে ব্লক পর্যায়ের পর্যালোচন‌া বৈঠক শুরু করেছেন জেলাশাসক। বৃহস্পতিবার তিনি গিয়েছিলেন উলুবেড়িয়া-১ ব্লকের তপনা পঞ্চায়েতে। শুক্রবার তিনি ওই বৈঠক করেন শ্যামপুর-১ ব্লকের বালিচাতুরি পঞ্চায়েতে। এ দিন আর জন-শুনানি করেননি। তবে, বৈঠক শুরুর আগে সপার্ষদ বালিচাতুরি লাগোয়া ধানধালি পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সরাসরি বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন। খোঁজ নেন, রেশনে আটা ঠিকমতো মিলছে কিনা, কারও জ্বর হচ্ছে কিনা, বাংলা আবাস যোজনা প্রকল্প ঠিকমতো রূপায়িত হচ্ছে কিনা।

এরপরেই জেলাশাসকের কনভয় ঢুকে পড়ে ওই স্কুলে। প্রথমেই জেলাশসকের চোখ পড়ে বন্ধ শৌচাগারে। সেখান থেকে এক ছাত্রী বেরিয়ে আসতেই জেলাশাসক তাকে জিজ্ঞাসা করেন, সে হাত ধুয়েছে কিনা। ছাত্রীটি ‘হ্যাঁ’ বলতেই জেলাশাসক তাকে নিয়ে কলঘরের কাছে যান। সেখান থেকে সাবান নিয়ে নিজেই তার হাত ধুইয়ে দেন। রোজ এ ভাবেই হাত ধোয়ার পরামর্শও দেন তিনি।

এতেই না-থেমে জেলাশাসক এরপরে স্কুলের সব কিছু খুঁটিয়ে দেখেন। মিড-ডে মিলের রান্নাঘরে যান। রাঁধুনিদের ‘মেনু’ জিজ্ঞাসা করেন। এ দিন ডিম ডিম। কী কী মশলা ব্যবহার করা হয়, তা-ও খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসা করেন। এমনকি, ব্যবহৃত মশলার প্যাকেট কোথায় ফেলা হয় সেটাও জানেন রাঁধুনিদের কাছ থেকে। রাস্তার ধারে সেই প্যাকেট ফেলতে নিষেধ করে তিনি বর্জ্য ফেলার নির্দিষ্ট জায়গায় তা ফেলার পরামর্শ দেন। খাওয়ার আগে-পরে ছাত্রছাত্রীদের হাত ধোওয়ার জন্য ‘হ্যান্ডওয়াশ’ ব্যবহারেরও নির্দেশ দেন।

এরপরেই ঢোকেন শ্রেণিকক্ষে। প্রায় পনেরো মিনিট ধরে তিনি মনোযোগ দিয়ে শিক্ষিকাদের ইংরেজি পড়ানো শোনেন। তারপরে নিজেই প্রশ্ন করেন। ছাত্রছাত্রীদের উত্তরে সন্তোষ প্রকাশ করে জেলাশাসক বেরিয়ে যাওয়ার পরে হাঁফ ছাড়েন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। ওই স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা শুভ্রা মণ্ডল বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত অফিস থেকে আমাকে জানানো হয়েছিল জেলাশাসক আসতে পারেন। তার কয়েক মিনিটের মধ্যে তিনি এসে হাজির। তাঁকে কিন্তু আমরা জেলাশাসক নয়, স্কুলের একজন অভিভাবকের ভূমিকায় পেলাম। কিছু মূল্যবান পরামর্শ উনি দিয়েছেন। সেগুলি মেনে চলব।’’

স্থানীয় এক বাসিন্দা মনে করছেন, যে কাজ স্কুল পরিদর্শকের করার কথা, সেটা করতে হল জেলাশাসকের। তাঁর মতে, ‘‘স্কুল পরিদর্শক যদি ওই কাজ করতেন, তা হলে গ্রামের স্কুলগুলির পঠনপাঠনের মান অনেক উন্নত হতো।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

School Students English
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE