অবশেষে বাড়ি ফিরলেন পানপাতিয়া চৌধুরী।
গত কয়েক বছর ধরে তাঁর ঠিকানা ছিল জাঙ্গিপাড়ার বাগান্ডায় ‘জনশিক্ষা প্রচার কেন্দ্র’ নামে একটি হোম। বুধবার বিকেলে দিদি সূরযী দেবী এবং জামাইবাবু প্রভু চৌধুরীর হাত ধরে ঝাড়খণ্ডে ফিরে গেলেন তিনি।
পুলিশ সূত্রে খবর, স্বামী-সন্তানকে নিয়ে থাকতেন ওই যুবতী। তবে এক সময় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। প্রায় দেড় দশক আগে ছেলেকে নিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে ট্রেনে উঠে পড়েন। ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়লে কেউ তার ছেলেকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। শেষে ভবঘুরে মেয়েটির ঠাঁই হয় হুগলির গুড়াপের দুলাল স্মৃতি সংসদ হোমে। ২০১২ সালে ওই হোমে গুড়িয়া নামে এক আবাসিকের পচাগলা দেহ উদ্ধার হয় মাটি খুঁড়ে। এর পরেই সেখানকার আবাসিক মহিলাদের উপর অত্যাচারের কাহিনি সামনে আসে। রাজ্য সরকার হোমটি বন্ধ করে দেয়। সেখানকার ৪২ জন আবাসিককে জাঙ্গিপাড়ার জনশিক্ষা প্রচার কেন্দ্রে পাঠানো হয়। সেই দলেই ছিলেন পানপাতিয়া।
গুড়িয়াকে খুনের দায়ে দু’জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। ওই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী ছিলেন পানপাতিয়া। জাঙ্গিপাড়ার হোমে অনেকটাই সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। হোম কর্তৃপক্ষ জানান, বাড়ি ফেরার জন্য ছটফট করতেন। হোমের তরফে বাড়িতে যোগাযোগ করলেও লাভ হয়নি। শেষ পর্যন্ত হুগলি জেলা আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষ বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন। ঝাড়খণ্ডের আইনি পরিষেবা কর্তৃপক্ষের সাহায্যে তাঁরা পানপাতিয়ার দিদি-জামাইবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কয়েক মাস আগে তাঁরা হুগলিতে আসেন। ডালসার সচিব সৌনক মুখোপাধ্যায় পানপাতিয়াকে তাঁর দিদি-জামাইবাবুর হাতে তুলে দেওয়ার সুপারিশ করেন চুঁচুড়ার মহকুমাশাসকের কাছে। মহকুমাশাসকের নির্দেশেই গুড়াপের হোম থেকে জাঙ্গিপাড়ার হোমে তাঁকে পাঠানো হয়েছিল। সেই কারণেই ওই অনুমতি চাওয়া হয়। সম্প্রতি মহকুমাশাসক অনুমতি দেন।
শুধু পানপাতিয়াই নন, রেশমি দেবী নামে পানপাতিয়ার বাপের বাড়ির এলাকার এক মহিলাও বেশ কিছু দিন এই হোমে ছিলেন। ডালসার মধ্যস্থতায় এবং প্রশাসনের প্রয়োজনীয় অনুমতি পেয়ে তিনিও এ দিন বাড়িতে ফিরে গেলেন। তাঁর বাবা দশরথ চৌধুরী এবং শাশুড়ি কেতরি দেবী তাঁকে নিতে এসেছিলেন। হোমের সম্পাদক অসীম মুখোপাধ্যায়, রেশমির সঙ্গে তাঁর নাবালক সন্তানও ছিল। তাকে ফেরৎ পাঠানোর ব্যাপারে বুধবারই জেলার চাইল্ড ওয়েলফেয়ার কমিটি নির্দেশ দেন। এর পরেই তাঁদের নিয়ে রওনা হয়ে যান বাড়ির লোক।
হোমের তরফে গাড়ি ভাড়া করে তাঁদের হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে দেওয়া হয়। হোম ছেড়ে যাওয়ার সময় দুই আবাসিকই কেঁদে ফেলেন। হোমের কাউন্সিলর-সহ অন্যদের চোখও তখন জলে ভেজা।