টাকা এসে পড়ে রয়েছে। কিন্তু হাওড়ায় উন্নয়নমূলক কাজে গতি নেই। কারণ, জিএসটি-র জেরে তাঁদের লাভ কমবে, এই আশঙ্কায় ঠিকা সংস্থাগুলি বেঁকে বসেছে বলে জানিয়েছে বিভিন্ন পঞ্চায়েত সমিতি।
হাওড়া জেলায় মোট ১৪টি পঞ্চায়েত সমিতি রয়েছে। ওই সব সমিতিতে উন্নয়নের জন্য চতুর্দশ কেন্দ্রীয় অর্থ কমিশন, তৃতীয় রাজ্য অর্থ কমিশন, আইএসজিপি প্রভৃতি নানা প্রকল্পের টাকা এসেছে। গড়ে প্রায় ৮ কোটি টাকা করে। কিন্তু টেন্ডারে অংশ নিতে চাইছে না ঠিকা সংস্থাগুলি।
পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্য অর্থ দফতর সম্প্রতি জিএসটি সংক্রান্ত নির্দেশিকায় জানিয়েছে, আগামী দিনে যে সব কাজ হবে, তার বিলে ঠিকা সংস্থাগুলির পাওনা থেকে ১২ শতাংশ হারে জিএসটি কেটে নিতে হবে। এর জেরেই আশঙ্কায় ভুগছে ঠিকা সংস্থাগুলি। তা ছাড়া, বিভিন্ন কাজের বকেয়া টাকাও পায়নি অনেক সংস্থা। কারণ, জিএসটি চালু হওয়ার আগে যে সব কাজ হয়েছে, তার জন্য কত শতাংশ হারে জিএসটি কাটা হবে সে বিষয়ে অর্থ দফতর থেকে কোনও নির্দেশিকা আসেনি।
ঠিকা সংস্থাগুলির বক্তব্য, জিএসটি চালু হওয়ার আগে তাদের কর দিতে হতো ৬ শতাংশ হারে। ১২ শতাংশ হারে কর দিতে হলে তাদের লভ্যাংশ অনেকটা কমে যাবে। সেই ক্ষতি তারা কী ভাবে পূরণ করবে, এটাই এখন প্রশ্ন। পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা ঠিকা সংস্থাগুলির যুক্তি মেনে নিয়েছেন। একাধিক কর্তা জানান, তাঁরা সমস্যাটির কথা জেলা প্রশাসনকে বলেছেন। জেলা প্রশাসনের কর্তারা অবশ্য জটিলতার কথা মানেননি। তাঁদের বক্তব্য, জিএসটি নিয়ে অর্থ দফতরের নির্দেশিকা পঞ্চায়েত সমিতিগুলিকে পাঠানো হয়েছে। তার পরেও যদি কোনও সমস্যা থাকে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাতে পারে।
ঠিকা সংস্থাগুলি কাজের ‘শেডিউল’ পরিবর্তনেরও দাবি তুলেছেন। ‘শেডিউল’ কী? জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, কোনও কাজ করতে গেলে তার দরপত্র এমন ভাবে নির্ধারণ করতে হয় যাতে ঠিকা সংস্থার লাভ ১৫ শতাংশের কম না হয়। শ্রমিকের মজুরি কত হবে, উপকরণের দাম কত— এইসব নির্ধারণ করে দেওয়ার পদ্ধতিকেই ‘শেডিউল’ বলে।
এই ‘শেডিউল’ তৈরি করে দেয় রাজ্য পূর্ত দফতর। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর সেই ‘শেডিউল’ মেনেই উন্নয়নমূলক কাজ করে। ‘শেডিউল’ এমন ভাবে তৈরি হয় যাতে কর দিয়েও ঠিকা সংস্থা ১৫ শতাংশ লাভ করতে পারে।
এক ঠিকা সংস্থার কর্ণধারের প্রশ্ন, ‘‘নতুন ‘শেডিউল’ তৈরি না করে পুরনো ‘শেডিউল’ রেখেই যদি শুধুমাত্র জিএসটির হার জানিয়ে দেওয়া হয়, তা হলে বাড়তি টাকা উসুল হবে কী ভাবে?’’ কিন্তু ‘শেডিউল’ পরিবর্তনের ব্যাপারে এখনও তাদের কাছে কোনও নির্দেশিকা আসেনি বলে পঞ্চায়েত সমিতিগুলি জানিয়েছে।
পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা জানান, ঠিকা সংস্থাগুলি টেন্ডারে অংশ নিতে চাইছে না। অথচ, রাজ্য সরকারের তরফ থেকে বার বার চাপ দেওয়া হচ্ছে বাকি থাকা সব কাজ চলতি সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করার জন্য। চাপের মুখে পড়ে একটি পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারা জানান, ঠিকা সংস্থাগুলিকে কোনও মতে রাজি করিয়ে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে বলা হয়েছে। তাদের বলা হয়েছে, এর মধ্যে যদি ‘শেডিউল’ পরিবর্তন না-হয়, তা হলে তারা না হয় কাজ করবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy