Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ব্যান্ডেল চার্চের প্রাচী‌ন পর্তুগিজ মাস্তুলের ঠাঁই সংগ্রহশালায়

প্রশাসন সূত্রের খবর, দামি কাঠের তৈরি মাস্তুলটি ৩৫ ফুট লম্বা।

দ্রষ্টব্য: প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে মাস্তুলটি। ছবি: তাপস ঘোষ

দ্রষ্টব্য: প্রদর্শনীর জন্য রাখা হয়েছে মাস্তুলটি। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
ব্যান্ডেল শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০১:৪৮
Share: Save:

সাড়ে তিন শতক ধরে ব্যান্ডেল চার্চে সংরক্ষিত একটি পর্তুগিজ জাহাজের মাস্তুল কয়েক বছর আগে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভেঙে গিয়েছিল। মেরামতের পরে চার্চেই সংগ্রহশালা গড়ে এই ‘পুরাকীর্তি’কে ফের সাধারণ মানুষের দেখার ব্যবস্থা করা হল। বড়দিনের আগে এই বিশেষ ব্যবস্থায় খুশি চার্চ কর্তৃপক্ষ।

প্রশাসন সূত্রের খবর, দামি কাঠের তৈরি মাস্তুলটি ৩৫ ফুট লম্বা। শুক্রবার এটির প্রদর্শশালার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে উপস্থিতি ছিলেন রাজ্য পুরাতত্ত্ব ও সংরক্ষণ বিভাগের অধিকর্তা দিলীপ দত্তগুপ্ত, হুগলি জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক মন্দাক্রান্তা মহলনাবিশ, চার্চের ফাদার ফ্রান্সিস-সহ অন্যেরা। বিভিন্ন স্কুলের কচিকাঁচা থেকে নানা বয়সের মানুষ মাস্তুলটি দেখতে আসেন। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘পুরাতত্ত্বের দিক থেকে মাস্তুলটির গুরুত্ব রয়েছে। মেরামতের পরে এটিকে ভাল ভাবে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হল। রাজ্য তো বটেই, দেশ-বিদেশের বহু মানুষ ব্যান্ডেল চার্চে আসেন। তাঁরা মাস্তুলটি দেখতে এবং এটির সম্পর্কে জানতে পারবেন।’’ ফাদার ফ্রান্সিসের কথায়, ‘‘এটি সত্যিই দর্শনীয় বস্তু। যে দিন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভেঙে গিয়েছিল, খুব খারাপ লেগেছিল। পুরনো চেহারায় ফেরায় আমরা খুব খুশি।’’

কী ভাবে ওই গির্জায় এল মাস্তুলটি?

সেই তথ্য জানতে পিছিয়ে যেতে হবে ১৬৫৫ খ্রিস্টাব্দে। ব্যান্ডেলে তখন পর্তুগিজদের উপনিবেশ। চার্চ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বছর এক দিন একটি পর্তুগিজ জাহাজ বঙ্গোপসাগরে প্রবল ঝড়ের মধ্যে পড়ে। বাঁচার জন্য নাবিক ঈশ্বরের শরণাপন্ন হন। তিনি কুমারী মারিয়ার (মাতা মেরি) কাছে প্রার্থনা করে জানান, জাহাজ রক্ষা পেলে যাত্রাপথে তিনি প্রথম যে গির্জা দেখতে পাবেন, সেখানেই কৃতজ্ঞতার প্রতীক হিসেবে মাস্তুলটি দান করবেন। এক সময় সাগরের বুকে ওঠা ঝড় থেমে যায়। জাহাজ রক্ষা পায়। নাবিক জাহাজ নিয়ে গঙ্গাবক্ষে হুগলিতে পৌঁছন। এক সকা‌লে নাবিক গঙ্গার ধারে ব্যান্ডেল চার্চ দেখতে পান। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি জাহাজের পাল লাগানোর ওই বড় খুঁটি বা মাস্তুল খুলে ব্যান্ডেল চার্চে দান করেন। তার পরে জাহাজ নিয়ে ফিরে যান।

সেই দিনটি ছিল মাতা মেরির মূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার উৎসব। তখন থেকেই গির্জার মূল প্রবেশপথের সামনে দাঁড় করানো মাস্তুলটি দ্রষ্টব্যবস্তু হয়ে ওঠে। সেটি স্পর্শ করে পুণ্যার্থীরা মনস্কামনা পূরণের জন্য প্রার্থনা করতেন। কয়েক বছর আগে মাস্তুলটি পুরাকীর্তির মর্যাদা পায়। ফাদার ফ্রান্সিস জানান, ২০১০ সালের ৯ মে সন্ধ্যায় প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি হয়। ঝড়ের দাপটে একটি গাছ ভেঙে পড়ে মাস্তুলের উপরে। তাতে মাস্তুলটি ভেঙে কয়েক টুকরো হয়ে যায়। চার্চ কর্তৃপক্ষ মাস্তুলের ভাঙা অংশ সরিয়ে রাখেন। বছর কয়েক আগে তাঁদের আবেদনক্রমে রাজ্যের পুরাতত্ত্ব বিভাগ এবং তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর মাস্তুলটির পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং সংরক্ষণের কাজ শুরু করে। সেই কাজই সম্প্রতি শেষ হয়েছে। প্রদর্শশালায় বিশাল একটি কাচের বাক্সে মাস্তুলটিকে সংরক্ষণ

করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Portuguese Mast Bandel Church Museum
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE