জ্বর-ডেঙ্গি রোধে এ বার পুরোদমে কাজ করছে শ্রীরামপুর পুরসভা। তাই ‘পুরস্কার’ এল নিউ ইয়র্ক থেকে।
বৃহস্পতিবার সকালে নিউ ইয়র্ক থেকে শ্রীরামপুরেরই ‘ভূমিকন্যা’ শর্মিষ্ঠা সরকার ৫১ হাজার ৫০০ টাকা দিলেন শ্রীরামপুর পুরসভাকে। তাঁর হয়ে ভাই দীপঙ্কর সরকার ওই টাকার চেক তুলে দেন পুরপ্রধান অমিয় মুখোপাধ্যায়ের হাতে। পুরপ্রধান বলেন, ‘‘স্বীকৃতি আমরা সে ভাবে পাই না। মানুষ বহু সময় আমাদের সমালোচনা করেন। এই স্বীকৃতি পুরকর্মীদের সকলের কাজের মিলিত ফল। ওই টাকা জ্বর-ডেঙ্গি প্রতিরোধের কাজেই ব্যবহার করা হবে।’’
নিউ ইয়র্ক থেকে ফোনে শর্মিষ্ঠাদেবী বলেন, ‘‘আমি খুব আনন্দিত। সারা রাজ্যে যখন ডেঙ্গি ছেয়ে গিয়েছে, সেখানে শ্রীরামপুর পুরসভা এত ভাল কাজ করছে! আমি গর্বিত। ওদের এই কাজে সকলেরই সাধুবাদ জানানো উচিত।’’
রাজ্যের বহু এলাকাতেই এখন জ্বর-ডেঙ্গির প্রকোপ। ইতিমধ্যে বহু মানুষ মারা গিয়েছেন। প্রায় সব জায়গাতেই মশা নিধন নিয়ে পুরসভা, প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগও বিস্তর। সে ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম শ্রীরামপুর। গতবার কয়েক হাজার মানুষ এ শহরে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন। মৃত্যু হয়েছিল অন্তত চার জনের। তথ্য চেপে না-রেখে শ্রীরামপুরে ডেঙ্গিকে ‘মহামারি’ ঘোষণা করে স্বাস্থ্য দফতর। তার পরেই সাধারণ মানুষকে পাশে নিয়ে পুরোদমে মাঠে নামেন পুর কর্তৃপক্ষ। নিয়ন্ত্রণে আসে ডেঙ্গি। গত বারের থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বার ফেব্রুয়ারি থেকেই মশা নিধনে নামে পুরসভা। একই সঙ্গে চলতে থাকে প্রচারও। ফলও মেলে হাতেনাতে। এ বার এ শহরে জ্বর-ডেঙ্গি সে ভাবে থাবা বসাতে পারেনি। এখনও পর্যন্ত কোনও মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি।
চিকিৎসকদের একাংশ এবং বিরোধীরাও মানছেন, ‘শ্রীরামপুর মডেল’ এ বার রাজ্যের অন্যত্রও মানা হলে মৃত্যু-মিছিল দেখতে হতো না। ইন্টারনেটে শ্রীরামপুরের এই খবর পড়েই উৎসাহী হয়ে ওঠেন ডাক্তারবাগান লেনের পুরনো বাসিন্দা শর্মিষ্ঠাদেবী। দীর্ঘদিন ধরে তিনি নিউ ইয়র্কে রয়েছেন। সেখানে অসহায় মহিলাদের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানও চালান। শর্মিষ্ঠাদেবী জানান, অনেক সময়ই মেয়েরা নানা সামাজিক অত্যাচারের শিকার হন। সেই সব অসহায় মহিলা অনেক সময় আইনজীবীও পান না। তাঁর সংস্থা আইনি সাহায্য-সহ সব রকম সহায়তা নিয়ে ওই সব মেয়েদের পাশে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, ‘‘কাগজে শ্রীরামপুরের খবর দেখে মনে হল পুরসভার পাশে দাঁড়ানো উচিত। তাই সামান্য সাহায্য করেছি।’’
এই স্বীকৃতিতে পুরসভার কর্মীরাও খুশি। তাঁদের এক জন বলেন, ‘‘গতবার এখানে কয়েক জন জ্বর-ডেঙ্গিতে মারা যাওয়ায় খুব খারাপ লেগেছিল। অনেক সমালোচনা হয়েছিল। এ বার আমরা কিছুটা স্বস্তিতে আছি। এই স্বীকৃতিতে কাজের উৎসাহ আরও বাড়ল।’’