Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

বিকল যন্ত্র, শিকেয় হাড়ের অস্ত্রোপচার

এক সাইকেল আরোহী সজোর ধাক্কা মারায় ডান পায়ের হাড় দু’টুকরো হয়ে গিয়েছিল দশ বছরের অঙ্কিতা কর্মকারের। গত ১০ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনার পরে সেই রাতেই হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বেলগাছিয়ার বাসিন্দা ওই বালিকাকে

অপেক্ষায়: চিকিৎসাধীন এক শিশু। নিজস্ব চিত্র।

অপেক্ষায়: চিকিৎসাধীন এক শিশু। নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস দাশ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:০৭
Share: Save:

এক সাইকেল আরোহী সজোর ধাক্কা মারায় ডান পায়ের হাড় দু’টুকরো হয়ে গিয়েছিল দশ বছরের অঙ্কিতা কর্মকারের। গত ১০ সেপ্টেম্বরের ওই ঘটনার পরে সেই রাতেই হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বেলগাছিয়ার বাসিন্দা ওই বালিকাকে। চিকিৎসকেরা বলেছিলেন, অবিলম্বে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন। কিন্তু গত ১৭ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও অঙ্কিতার অস্ত্রোপচার তো হয়ইনি, এমনকি বাড়ির লোকজন তাকে অন্যত্র নিয়ে যেতে চাইলেও অনুমতি দেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে চরম সমস্যায় ওই বালিকার অভিভাবকেরা।

একই অবস্থা রামরাজাতলার বাসিন্দা, সঙ্গীতা হ‌েলা নামে এক গৃহবধূর। দশ দিন আগে কোমরের নীচের হাড় ভেঙে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরে চিকিৎসকেরা তাঁকে জানিয়ে দিয়েছেন, যন্ত্র খারাপ। তাই অস্ত্রোপচার হবে না। যেতে হবে অন্য হাসপাতালে। কিন্তু, কোনও সরকারি হাসপাতালেই জায়গা পাচ্ছেন না সঙ্গীতার পরিজনেরা।

কেন এই দুরবস্থা?

হাওড়া জেলা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, হাড়ের জটিল অস্ত্রোপচার করতে হলে অপরিহার্য ‘সি-আর্ম’ নামে একটি যন্ত্র। ওই যন্ত্রে হাড়ের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের ছবি দেখে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু সবেধন সেই যন্ত্রই গত পাঁচ দিন যাবৎ বিকল। অগত্যা বন্ধ অস্ত্রোপচারও। কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, ওই যন্ত্র মেরামত না হওয়া পর্যন্ত হাড়ের কোনও অস্ত্রোপচার করা যাবে না।

কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, অঙ্কিতা ভর্তি হয়েছিল ১৭ দিন আগে। যন্ত্রটি খারাপ হয়েছে পাঁচ আগে। তা হলে ওই সময়ের মধ্যে অস্ত্রোপচার হয়নি কেন?

হাওড়া জেলা হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘অন্য সরকারি হাসপাতালের থেকে হাওড়া জেলা হাসপাতালের অস্থি বিভাগে রোগীর চাপ বহু গুণ বেশি। কিন্তু অর্থোপেডিক সার্জন আছেন মাত্র দু’জন। তাঁরা সপ্তাহে চার দিন অস্ত্রোপচার করেন।’’

অন্য চিকিৎসকদের অভিযোগ, হাওড়া শহরে থাকা বাকি সরকারি হাসপাতাল যেমন দক্ষিণ হাওড়া স্টেট জেনারেল, বেলুড়ে স্টেট জেনারেল বা টি এল জায়সবাল হাসপাতালে অন্তত এক জন করে অর্থোপেডিক সার্জন আছেন। তা সত্ত্বেও হাড়ের সমস্যায় আক্রান্ত অধিকাংশ রোগীকে ওই হাসপাতালগুলি থেকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে রেফার করা হয়। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, এত চাপ নিতে না পারায় সি-আর্ম মেশিন বিগড়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে সেটি দ্রুত সারানোর চেষ্টা হচ্ছে। তাঁদের আরও দাবি, সব রোগীকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হচ্ছে না।

হাওড়া জেলা হাসপাতালের সুপার নারায়ণ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সি-আর্ম মেশিনটি সারানোর জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নির্ধারিত সংস্থাকে জানানো হয়েছে। যে সংস্থা থেকে যন্ত্রটি কেনা হয়েছিল, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, শীঘ্রই মেশিনটি ঠিক হয়ে যাবে।’’

তত দিন উপায়? উত্তর নেই কোনও পক্ষের কাছেই!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Health Medical Trouble
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE