Advertisement
E-Paper

বে-তার তানপুরা, সুর কেটেছে শিল্পের

নোটবন্দি এবং জিএসটি-র ধাক্কায় আগে থেকেই নড়বড়ে অবস্থা ছিল ছোট শিল্প-কারখানার। লকডাউনে এসে তা মুখ থুবড়ে পড়েছে। মালিকেরা অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন। দেওয়ালে পিঠ ঠেকছে শ্রমিকদের। কবে ঘুরে দাঁড়াবে অর্থনীতি, তার কোনও দিশা দেখতে পাচ্ছেন না বিশেষজ্ঞেরাও। কেমন আছেন ওই সব শিল্প-কারখানার শ্রমিক-মালিকেরা? খোঁজ নিল আনন্দবাজার।স্বাধীনতার আগে থেকেই গঙ্গাপাড়ের বৈদ্যবাটীতে ছোট ছোট কারখানায় বাদ্যযন্ত্রের তার তৈরির শিল্প গড়ে ওঠে।

কেদারনাথ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২০ ০১:৩৯
সুরহীন: কাজ বন্ধ বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারখানায়। —নিজস্ব চিত্র

সুরহীন: কাজ বন্ধ বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারখানায়। —নিজস্ব চিত্র

এখন সবই বে-তার। সবই সুরহীন।

সেতার, বেহালা, সরোদ, তানপুরা, বীণা, একতারা— সব।

এক এক যন্ত্রের এক এক সুর। সেই সুর বেঁধে দেওয়ার জন্য তারও এক এক রকমের।

স্বাধীনতার আগে থেকেই গঙ্গাপাড়ের বৈদ্যবাটীতে ছোট ছোট কারখানায় বাদ্যযন্ত্রের তার তৈরির শিল্প গড়ে ওঠে। কিন্তু লকডাউনের জেরে এখন কাজ বন্ধ। ধুঁকতে শুরু করেছে এই ক্ষুদ্রশিল্প। সঙ্কটে হাজার দেড়েক শ্রমিক।

এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকজন জানান, কয়েক বছর ধরেই মন্দা চলছিল। নোটবন্দি এবং জিএসটি-র প্রভাবে ধাক্কা খায় এই শিল্প। তবে, লকডাউনের জেরে যে পরিস্থিতি হয়েছে, এত খারাপ অবস্থা আগে হয়নি।

কেন?

কারিগররা জানান, এই শিল্পের জন্য ভাল মানের কাঁচামাল আমদানি করতে হয় জার্মানি এবং আমেরিকা থেকে। সুরাট থেকেও আসে কাঁচামাল। কিন্তু বিশ্বজুড়ে করোনা-জুজুর কারণে কাঁচামাল আমদানি বন্ধ। তাই কাজ করার উপায় নেই। বরাতও নেই।

একটি কারখানার মালিক জয়দীপ মুখোপাধ্যায় এবং সন্দীপ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘লকডাউনের ধাক্কায় এই শিল্প বন্ধের মুখে এসে দাঁড়িয়েছে। আমাদের কারখানার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ৪০টি পরিবার যুক্ত। আজ তারা কর্মহারা।’’

পরিস্থিতির জেরে অদূর ভবিষ্যতে কর্মচ্যুত হতে হবে কিনা, সেই আশঙ্কায় কাঁটা শ্রমিকেরা। বনমালি খাঁড়া নামে শহরের কাজিপাড়ার এক শ্রমিক বলেন, ‘‘আগে কোনও দিন এত খারাপ পরিস্থিতি হয়নি। কাজ না থাকায় পেট চালাতে অনেকেই ভ্যান ভাড়া নিয়ে পাড়ায় পাড়ায় মাছ বিক্রি করছেন। আমার বয়স সত্তর পেরিয়েছে। আমি কী করব, কী করে সংসার চালাব— ভেবে পাচ্ছি না। রাতে দু’চোখের পাতা এক করতে পারছি না।’’

সন্দীপ বলেন, ‘‘শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন আমরা মিটিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে, আমাদের জানা নেই।’’

অনেকেই জানান, কাজ না-হওয়ায় আগামী মাসে বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। অংশুমান দেব নামে এক কারখানা-মালিকের বক্তব্য, ‘‘কাজই যদি না হয় টাকা আসবে কোথা থেকে? শ্রমিক বা মালিক— সকলেরই এক অবস্থা হবে বলে আশঙ্কা হচ্ছে। লকডাউনে আমাদের শিল্পের খুব ক্ষতি হয়ে গেল।’’

শ্রমিক-মালিক দু’পক্ষই মনে করছে, শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের হস্তক্ষেপ জরুরি। এক কারখানা-মালিক বলেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রীয় ও রাজ্য দুই সরকারকেই পরিস্থিতির কথা জানাব। সরকার হস্তক্ষেপ না করলে শিল্পটা মুখ থুবড়ে পড়বে।’’

Baidyabati Small Industries
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy