Advertisement
E-Paper

বুঝতে পারলে ওদের নিয়ে আসতাম, আফসোস মায়ের

শুক্রবার রাতে স্বরূপ (৩৭) তাঁর স্ত্রী দিপালী, সাত বছরের মেয়ে তিতলি এবং চারমাসের শিশুপুত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় সেকেন্দরাবাদে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৮ ০২:২০
শোক: মৃত দম্পতি (বাঁ দিকে) কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বরূপের মা (ডান দিকে)। ছবি: সুব্রত জানা

শোক: মৃত দম্পতি (বাঁ দিকে) কান্নায় ভেঙে পড়েছেন স্বরূপের মা (ডান দিকে)। ছবি: সুব্রত জানা

আর্থিক সঙ্কটেই সপরিবার আত্মঘাতী হয়েছেন স্বরূপ দাস— সেকেন্দরাবাদ পুলিশের বক্তব্য মেনে নিচ্ছেন তাঁর পরিবার ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

তবে হাসিখুশি ঘরের ভিতর যে এমন সঙ্কট ঘনিয়ে আসছিল ঘুণাক্ষরেও টের পাননি স্বরূপগোপাল দাসের মা চন্দনাদেবী। মাস পাঁচেক আগেই তিনি সেকেন্দরাবাদে ছেলের বাড়ি থেকে ফিরেছেন। সে বার নাতি এসেছিলে ছেলের ঘরে। খুশির ফোয়ারা ছুটেছিল। চার মাসের সেই ছোট্ট শিশুকেও যে বিষ খাওয়ানো হয়েছিল— সে কথা ভেবে পাথর হয়ে গিয়েছেন চন্দনাদেবী।

শুক্রবার রাতে স্বরূপ (৩৭) তাঁর স্ত্রী দিপালী, সাত বছরের মেয়ে তিতলি এবং চারমাসের শিশুপুত্রের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় সেকেন্দরাবাদে। স্থানীয় মহানকালী থানার পুলিশ শনিবার সকালে তাঁদের ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে চারটি দেহ উদ্ধার করে। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন স্বরূপ-দীপালি। বিষ খাওয়ানো হয়েছে শিশু দু’টিকেও। প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, আর্থিক সমস্যার জেরেই স্বরূপবাবু এবং তাঁর স্ত্রী এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন।

শনিবার বিকেলেই সেকেন্দরাবাদ পৌঁছেছেন স্বরূপের ভাই তপন তাঁর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়েরা সেকেন্দরাবাদে চলে যান। রবিবার চার জনের দেহ সেখানেই দাহ করা হয়েছে। ফোনে তপনবাবু অবশ্য বলেছেন, ‘‘কেন দাদা এই কাণ্ড করল বুঝতে পারছি না। সেকেন্দরাবাদ থেকে নিয়মিত ফোনে কথা হতো। কিন্তু কোনওদিন আর্থিক সঙ্কটের কথা বলেনি দাদা।’’

তবে সঙ্কটের ইঙ্গিত মিলেছে পরিবার সূত্রেই। বছর চারেক আগে মুম্বইতে সোনার গয়নার কাজ করতেন স্বরূপ। তখন স্ত্রী, মেয়েকে নিয়ে প্রতিবছর ডোমজুড়ের বাড়িতে আসতেন। কয়েকদিন কাটিয়ে ফিরে যেতেন মুম্বই। পারিবারিক সূত্রের খবর, তখনই মহাজনদের কাছে তাঁর অনেক টাকা দেনা হয়ে যায়। মুম্বইয়ের আস্তানা ছাড়তেও বাধ্য হন স্বরূপ। এমনকী ডোমজুড়ের বাড়িতেও হানা দিয়েছিল পাওনাদারের দল। তারপর থেকে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করাও বন্ধ করে দেন স্বরূপ। এমনকী মুম্বই ছেড়ে কোথায় গিয়েছেন— তাও জানাননি পরিবারকে।

চন্দনাদেবী এ দিন বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে ছেলে একদিন হঠাৎ ফোন করল। বলল সেকেন্দরাবাদে আছে, বৌমা আবার সন্তানসম্ভবা। সে খবর শুনে আমি চলে গিয়েছিলাম ওদের কাছে। নাতি হওয়া পর্যন্ত ছিলাম তিনটে মাস। কখনও বুঝতে পারিনি ওদের কোনও অশান্তি রয়েছে।’’ তবে পুলিশের কথায় বিশ্বাস করছেন তাঁরা। চন্দনাদেবীর আফসোস, ‘‘আর্থিক সমস্যা থাকলে আমাকে তো বলতে পারত একবার। এখানে নিয়ে চলে আসতাম। নাতি-নাতনিগুলোও চলে গেল যে!’’

স্বরূপবাবুরা দুই ভাই। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ডোমজুড়েই সোনার গয়নার কাজ শিখেছিলেন। তারপরে সোজা মুম্বই। ২০০৮ সালে পাশের গ্রাম রজকপাড়ায় বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে ফিরে যান। চন্দনাদেবী বাড়িতে একটি মুদিখানার দোকান চালাতেন। ইদানীং সে ব্যবসা দেখেন ছোট ছেলে।

শোকের ছায়া রজকপাড়ায়ও। মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনিদের হারিয়ে কার্য়ত বাকরুদ্ধ দীপালির বাবা সনৎ দাস। তিনি বলেন, ‘‘ওরা মুম্বই ছাড়ার পর থেকে আর কোনও ভাবে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। মুম্বই থেকে পাওনাদারেরা আমাদের বাড়িতে জামাইয়ের খোঁজে আসত। শনিবার ওদের মৃত্যুর খবর পেলাম।’’ তাঁর গলায়ও একই আফসোস, ‘‘কিছুদিন আগেও যদি তাদের খোঁজ পেতাম, জমিবাড়ি বিক্রি করে, যে ভাবে হোক আর্থিক সঙ্কট দূর করার চেষ্টা করতাম। সুযোগটাই দিল না।’’

financial crisis suicide
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy