Advertisement
E-Paper

ক্ষোভে উত্তাল বিরোধীরা, ত্রাহি ত্রাহি জেলা তৃণমূলে

তৃণমূল নেতাদের টাকা নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হওয়ার পরে তাকে হাতিয়ার করে ক্রমশই সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। হাওড়া, হুগলি দুই জেলাতেই সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, পথ অবরোধ।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৬ মার্চ ২০১৬ ০৩:১৪
নারদ-বিক্ষোভ। এসএফআইয়ের বিক্ষোভ উলুবেড়িয়ায় (বাঁদিকে)। ডানদিকে, চুঁচুড়ায় পথ অবরোধ বিজেপি-র। —সুব্রত জানা, তাপস ঘোষ।

নারদ-বিক্ষোভ। এসএফআইয়ের বিক্ষোভ উলুবেড়িয়ায় (বাঁদিকে)। ডানদিকে, চুঁচুড়ায় পথ অবরোধ বিজেপি-র। —সুব্রত জানা, তাপস ঘোষ।

তৃণমূল নেতাদের টাকা নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ প্রকাশিত হওয়ার পরে তাকে হাতিয়ার করে ক্রমশই সুর চড়াচ্ছে বিরোধীরা। হাওড়া, হুগলি দুই জেলাতেই সোমবার থেকেই শুরু হয়েছে সিপিএম, বিজেপি, কংগ্রেসের বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ, পথ অবরোধ।

নারদ কাণ্ডে জড়িত তৃণমূল নেতাদের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার উলুবেড়িয়া গরুহাটা মোড়ে ওটি রোড অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই, ডিওয়াইএফ। দু’টি সংগঠনের পক্ষেই স্টিং অপারেশনে যাঁদের টাকা নিতে দেখা যাচ্ছে তাঁদের শাস্তি দাবি করা হয়। এদিন বিকেলে সারা ভারত মহিলা সমিতির পক্ষ থেকে বাগনানের নুন্টিয়াতে একই দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হয়। সন্ধ্যায় বাকসিহাটে কংগ্রেস এবং সিপিএমের যৌথ মিছিলে ঘুষকাণ্ডে অভিযুক্তদের শাস্তি দাবি করা হয়।

সিপিএমের হাওড়া জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, ‘‘এটা অত্যন্ত লজ্জার যে আমাদের জেলার দুই সাংসদকে এ ভাবে টাকা নিতে দেখা গেল। তাঁরা জেলার প্রতিনিধি। তাঁদের এই কাজে জেলার মানসম্মান নষ্ট হয়েছে। আমাদের দাবি, সংসদ পৃথক কমিটি গড়ে ওই ঘটনার তদন্ত করুক। দোষী প্রমাণিত হলে সাংসদের পদ খারিজ করা হোক।’’ একই সুরে জেলা কংগ্রেস সভাপতি কাজি আব্দুল রেজ্জাক বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে ঘুষখোর সাংসদের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’’ বিজেপির (গ্রামীণ) সভাপতি অনুপম মল্লিক বলেন, ‘‘তৃণমূলের ছোট, বড়, মেজ সব স্তরের নেতারাই টাকা খান। এটা একটা বাচ্চা ছেলেও জানে। নারদ কাণ্ডের পরে এটা খোলাখুলি দেখা গেল। এর বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলনে নামব।’’

হুগলিতেও দু’জায়গায় মঙ্গলবার অবরোধ হয়। এদিন ডানকুনিতে বিকেলে সিপিএম একটি মিছিল বের করে। জনাইয়ে পথসভা হয়। বিধানসভা ভোটের মুখে বিরোধীরা এ ভাবে হাতে অস্ত্র পেয়ে যাওয়ায় শাসক দল অস্বস্তিতে পড়েছে।

এ দিন দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ চুঁচুড়ার রবীন্দ্রনগর মোড়ে জিটি রোড অবরোধ করেন বিজেপি-র কর্মী-সমর্থকেরা। মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দলের অন্য নেতাদের ছবি সংবলিত কার্টুন নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করা হয়। অবরোধের জেরে রাস্তায় যানজট হয়ে যায়। বিজেপির রাজ্য ওবিসি মোর্চার সভাপতি স্বপন পাল বলেন, ‘‘ভিডিও ফুটেজে যা দেখা গিয়েছে, সেটা সামান্য অংশ। আসলে শুধু রাজ্য নেতারাই নন, রাজ্যের প্রতি কোণাতেই তৃণমূল নেতাদের পকেট না ভরলে কারও কোনও কাজ হয় না। যাঁদের ছবি প্রকাশিত হয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’’ স্বপ‌নবাবুর কটাক্ষ, ‘‘বিভিন্ন প্রান্তে দলের কর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তৃণমূল নেতাদের এই গুণের কথা প্রচার করবেন।’’

শ্রীরামপুরের বটতলায় পাঁচমাথার মোড়ে সিপিএম এবং কংগ্রেস একত্রে পথ অবরোধে সামিল হয়। সিপিএমের যুব সংগঠন ডিওয়াইএফের জেলা সম্পাদক তীর্থঙ্কর রায় বলেন, ‘‘তৃণমূলের নেতারা যে জনগণের টাকা লুঠ করছেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরেই তা বলে আসছি। এ বার তা মানুষের সামনে এল। ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি আমরা।’’ সারদা কাণ্ডে তৃণমূল নেতাদের ভূমিকা নিয়ে সবচেয়ে যাঁরা সোচ্চার হয়েছেন, আব্দুল মান্নান তাঁদের অন্যতম। স্বভাবতই নারদ কান্ডেও তিনি সরব হয়েছেন। সোমবারেই শেওড়াফুলিতে দলীয় কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে মান্নান সংশ্লিষ্ট তৃণমূল নেতাদের পদত্যাগের দাবি তোলেন।

তৃণমূলের জবরদোস্ত প্রার্থী তথা বিদায়ী বিধায়ক ইকবাল আহমেদের বিরুদ্ধে খানাকুলে এখনও সিপিএম বা তাদের জোট প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তাই বলে প্রচারে কোনও ঘাটতি নেই। অঞ্চল ধরে ধরে কর্মীসভা চলছিলই। সোমবার ‘নারদ’ কাণ্ডে এলাকার বিধায়ক ইকবাল আহমেদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় প্রার্থী ঘোষণা না হওয়া সত্ত্বেও তৃণমূলের বিরুদ্ধে আক্রমণের ঝাঁঝ হাজার গুণ বাড়িয়ে‌ দিয়েছে সিপিএম।

খানাকুলে সিপিএমের জোনাল নেতা ভজহরি ভুঁইয়ার কথায়, ‘‘এখন আমাদের প্রচারের সিংহভাগ জুড়েই থাকছে তৃণমূলের এই লুঠের কারবার। এদের ক্ষমতাচ্যুত করতে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ডাক দেওয়া হবে।” খানাকুলের প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বংশী মৈত্র বলেন, ‘‘তৃণমূলের কাণ্ডকারখানা দেখতে গ্রামকে গ্রাম সবাই টিভি খুলে বসে আছে। আমাদের ফোন করছে। বিভিন্ন এলাকা গেলেই মানুষ বলছেন, ‘তোমরাই ভাল ছিলে’। আমার বিশ্বাস এ বার ভোটের ফল অন্য কথা বলবে।”

নারদ কাণ্ড নিয়ে যুযুধান তৃণমূল এবং সিপিএম স্বাভাবিক লড়াই লড়লেও এলাকার মানুষের মুখে মুখে এখন শুধুই ‘নারদ’ চর্চা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পোল গ্রামের এক প্রৌঢ় বলেন, “মহা সঙ্কট। ভাল লোকরা কি সত্যিসত্যি আর রাজনীতি করছে না!”

নতিবপুরের এক যুবকের কথায়, ‘‘ঘটনাটা সত্যি ভাবতে কষ্ট হচ্ছে। আমাদের এখানে বিধায়কের ভাবমূর্তি ভাল। কিন্তু যা দেখছি তাতে সর্বত্রই কী চোরের আড়ত!” বিস্ময় ঘোষপুর, নন্দনপুর, বন্দর সহ বিভিন্ন এলাকার মানুষেরও।

কি বলছেন স্বয়ং ইকবাল আহমেদ?

‘‘বিষয়টা একেবারেই সাজানো। ভোটের মুখে বিজেপি নোংরা রাজনীতি ক রছে। ওদের সঙ্গে সিপিএম আর কংগ্রেসও জুটে গিয়েছে। মানুষ সেটা বুঝতেও পেরেছেন।”

মানুষ কি বুঝছেন, এখন তারই অপেক্ষা।

Assembly Election TMC Congress
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy