Advertisement
০২ মে ২০২৪
Pursurah 1

ইস্তফা দিতে চেয়ে চিঠি দিলেন প্রধান

দলের কোন্দল প্রকাশ্যে আসায় বিড়ম্বনায় শাসকদলের জেলা নেতৃত্বও। সমস্যা যে রয়েছে, তা অস্বীকার করতে পারেননি দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবও।

পুরশুড়া- ১পঞ্চায়েত অফিস।

পুরশুড়া- ১পঞ্চায়েত অফিস।

পীষূষ নন্দী
পুরশুড়া শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০২:০১
Share: Save:

দলেরই দুই পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে তৃণমূল জেলা সভাপতির কাছে ইস্তফাপত্র পাঠালেন পুরশুড়া ১ পঞ্চায়েতের প্রধান সমীর দাস। সোমবার থেকে পঞ্চায়েত কার্যালয়ে আসা বন্ধ করেছেন তিনি। তৃণমূল জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব জানিয়‌েছেন, পঞ্চায়েত সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা নেওয়া হবে। আগেও একাধিক বার ওই পঞ্চায়েতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। তৃণমূল সূত্রের খবর, প্রতিটি ক্ষেত্রেই হামলার নেপথ্যে ছিল দলীয় ‘কোন্দল’। এমনকী, প্রধানের উপরে চড়াও হয়ে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। শাসকদলের গোষ্ঠী কাজিয়ায় কার্যত শিকেয় উঠেছে উন্নয়নের কাজ। পঞ্চায়েত প্রধান ইস্তফা দিতে চাওয়ায় সঙ্কট আরও গভীর হল বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। সমীরবাবু জানিয়েছেন, পুড়শুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মমিনউদ্দিন মিদ্দার কাছেও তিনি ইস্তফাপত্র পাঠিয়েছেন।

কেন এই পদক্ষেপ?

প্রধানের অভিযোগ, ‘‘গুরত্বপূর্ণ পদে থেকে দলেরই কিছু সদস্য ক্রমাগত অশান্তি করে চলেছে। মানুষকে পরিষেবা দিতে পারছি না। প্রধানের পদে বসার পরে থেকে সাত বার মার খেয়েছি। কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নেই।’’ গত রবিবার বিকেলে পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য দিলীপ পণ্ডিত, খগেন্দ্রনাথ জানা এবং তাঁদের অনুগামীরা বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁকে মারধর করেন বলে অভিযোগ সমীরবাবুর। এমনকী, প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে তাঁর দাবি। সমীরবাবুর আরও অভিযোগ, ‘‘ওই দুই পঞ্চায়েত সদস্য জনস্বার্থ-বিরোধী সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইছেন। তাঁদের মাধ্যমেই কাজ করাতে হবে বলে হুমকি দিচ্ছেন। মানুষের জন্য কাজই যদি করতে না পারি, তবে পদে থেকে কী হবে!” তাঁর আক্ষেপ, ‘‘নিজের পাড়াতেই পানীয় জলের কল বসাতে পারিনি। বোর্ড গঠন হওয়ার পরে থেকেই এমন ঘটনা ঘটে চলেছে। দল এবং ব্লক প্রশাসনের কাছে একাধিক বার মৌখিক ভাবে সব কথা বলেছি। কিছু হয়নি।’’ তাই প্রধানের সাফ বক্তব্য,

‘‘হয় আমাকে অব্যহতি দিতে হবে, না-হলে দলীয় স্তরে ওঁদের (দলীয় দুই পঞ্চায়েত সদস্য) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সেই ব্যবস্থা না-নেওয়া পর্যন্ত অফিসে যাব না।”এ দিকে, অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য দিলীপের দাবি, “মারধরের অভিযোগ মিথ্যা। এই নিয়ে (প্রধান) চার বার পদত্যাগের নাটক করলেন।’’ সমীরের বিরুদ্ধে তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘পঞ্চায়েত সদস্যদের অন্ধকারে রেখে, টেন্ডার না ডেকে বিভিন্ন জায়গায় গ্রাম উন্নয়নের নামে দুর্নীতি করেছেন। এ নিয়ে সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ আছে। মানুষও সরব হয়েছেন। অপরাধ বোধ থেকেই পদত্যাগ করতে চাইছেন প্রধান।” প্রধানের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ তুলেছেন খগেন্দ্রনাথও। তাঁর দাবি “দুর্নীতি ছাড়াও পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল তছনছ করছেন প্রধান। জবকার্ড দিতেও টাকা নিচ্ছেন বলে প্রমাণ আছে আমাদের কাছে।” এই বিষয়ে পঞ্চায়েত প্রধানের প্রতিক্রিয়া, ‘‘দুর্নীতির প্রমাণ থাকলে তাঁরা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করুন।”

দলের কোন্দল প্রকাশ্যে আসায় বিড়ম্বনায় শাসকদলের জেলা নেতৃত্বও। সমস্যা যে রয়েছে, তা অস্বীকার করতে পারেননি দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদবও। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ওই পঞ্চায়েতে বেশ কিছু সমস্যা আছে। পঞ্চায়েত সদস্যদের নিয়ে খুব শীঘ্রই বসব। তারপর যা করা উচিত, তা করা হবে।” আর বিডিও (পুরশুড়া) অচিন্ত্য ঘোষের মন্তব্য, “পঞ্চায়েতে অশান্তি নিয়ে অতীতে কিছু অভিযোগ সেছিল। নতুন করে কোনও অভিযোগ পাইনি। প্রধানের কোনও চিঠি প্রশাসনিক স্তরে আসেনি।”শাসকদল সূত্রে খবর, বোর্ড গঠনের পর থেকেই পঞ্চায়েত পরিচালনা নিয়ে দুই গোষ্ঠীর বিবাদ জারি রয়েছে। প্রধানের সমর্থনে রয়েছেন পাঁচ জন। ছ’জন রয়েছেন দিলীপের পক্ষে। তবে এই সদস্যেরা আবার মাঝেমধ্যেই গোষ্ঠী পরিবর্তন করেন। দু’পক্ষের মধ্যে একাধিক বার মারপিটও হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pursurah Panchayat Prodhan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE