Advertisement
০৬ মে ২০২৪
রাত নামলেই স্টেশনে বসে মদ-গাঁজার আসর

সন্ধে হলেই নেশায় মজে ওঠে স্টেশন

রাত হলে হুগলির নানা স্টেশন হয়ে ওঠে নেশার ঠেক! মদ, গাঁজা থেকে নেশার সামগ্রীর বিকিকিনি চলে দেদার। কী ভাবে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার। আজ পান্ডুয়া।দিন কয়েক আগের সন্ধে। আপ বধর্মান লোকাল থেমেছে পান্ডুয়া স্টেশনের দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে। বছর কুড়ির এক যুবক ট্রেন থেকে নেমেই সেই প্ল্যাটফর্মের শেষ দিকে ঝুপড়িতে ছুটে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে যখন ফিরলেন, তখন তাঁর পা টলোমলো। মুখে অনর্গল ইংরেজি। হাতে সিগারেট।

মৌতাত: সন্ধে নামলে পান্ডুয়া স্টেশন ও ফুটব্রিজের চেনা ছবি এটাই।  এভাবেই প্রকাশ্যে চলে নেশা। নিজস্ব চিত্র

মৌতাত: সন্ধে নামলে পান্ডুয়া স্টেশন ও ফুটব্রিজের চেনা ছবি এটাই। এভাবেই প্রকাশ্যে চলে নেশা। নিজস্ব চিত্র

সুশান্ত সরকার
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৭ ০১:৪৬
Share: Save:

দিন কয়েক আগের সন্ধে। আপ বধর্মান লোকাল থেমেছে পান্ডুয়া স্টেশনের দু’নম্বর প্ল্যাটফর্মে। বছর কুড়ির এক যুবক ট্রেন থেকে নেমেই সেই প্ল্যাটফর্মের শেষ দিকে ঝুপড়িতে ছুটে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে যখন ফিরলেন, তখন তাঁর পা টলোমলো। মুখে অনর্গল ইংরেজি। হাতে সিগারেট। তাঁর অসংলগ্ন চিৎকারে অতিষ্ঠ স্টেশনের যাত্রীরা।

এ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ওই স্টেশনের নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, রাত যত বাড়ে, প্ল্যাটফর্ম এবং স্টেশন চত্বরে ততই জমে ওঠে মদ-গাঁজার গোপন ব্যবসা। মাদকের কটূ গন্ধে ভরে ওঠে স্টেশন। ১ ও ২ নম্বর প্ল্যাটফর্মে সন্ধ্যা হতেই অপরিচিত মানুষের আনাগোনা বাড়ে। স্টেশনে বেআইনি কাজ যাতে না হয়, তার জন্য রেল পুলিশ রয়েছে। প্ল্যাটফর্মে তাঁদের নজরদারিও চোখে পড়ে। তা সত্ত্বেও কী ভাবে নেশার আসর বসে? নিত্যাত্রীদের অনেকেরই অভিযোগ, পুলিশের একাংশের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের গোপন বোঝাপড়া রয়েছে। তাই অবাধে তারা ব্যবসা করছে। এমনকী, প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে অন্ধকারে দেহ ব্যবসাও চলে বলে অভিযোগ।

রেল পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, কিছু অবাঞ্ছিত লোক প্রতিদিন সন্ধ্যায় স্টেশনে আসে, ঠিকই। কিন্তু নেশা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ তারা পায়নি। মাদক বিক্রেতাদের সঙ্গে রেল পুলিশের কর্মীদের বোঝাপড়ার অভিযোগও তারা মানছে না। একই সুরে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রও বলেন, ‘‘পান্ডুয়া স্টেশনে পর্যাপ্ত আলো রয়েছে। জিআরপি-আরপিএফ আছে। গত তিন মাসে নেশা নিয়ে কোনও অভিযোগ আসেনি।’’ নিত্যযাত্রীরা মানছেন, নেশাগ্রস্তদের হাতে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা রেল পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান না।

সপ্তাহে পাঁচ দিন সন্ধ্যায় ওই স্টেশন হয়ে বাড়ি ফেরেন এক কলেজ ছাত্রী। বাবা তাঁকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। ওই কলেজ ছাত্রী বলেন, ‘‘একা ফিরতে ভয় লাগে। কিছু যুবক ওভারব্রিজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকে। কটূক্তি করে। প্রতিবাদ করেও লাভ হয় না। তাই বাবা আমাকে নিতে আসে।’’

আর এক নিত্যযাত্রী বলেন, ‘‘প্ল্যাটফর্মের শৌচাগারে যাওয়া যায় না। ওখানেও নেশা চলে। বিশেষ করে প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে অন্ধকারের মধ্যেই অবাধে নেশার আসর বসে। স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে চলে আসে মদের বোতল। গাঁজার পুরিয়া।’’ একই কথা জানিয়েছেন কিছু হকারও। কিন্তু তাঁরাও ভয়ে এ সবে মাথা ঘামান না।

বাধা দেওয়ার কেউ নেই। তাই পান্ডুয়া স্টেশন এখন নেশার ঠিকানা হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছেন যাত্রীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pandua Railway Station Addiction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE