Advertisement
E-Paper

আগাছায় ঢেকে যাওয়া মন্দিরে পুজো পান বিন্ধ্যবাসিনী

রেল স্টেশন থেকে দূরত্ব সাকুল্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার। ফেরিঘাট থেকেও তাই। কিন্তু টোটো ‘অত দূর’ যায় না। কারণ, রাস্তা খারাপ। অতএব, বেশ কিছুটা রাস্তা হাঁটা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ১০ নভেম্বর ২০১৬ ০১:৪৫
গুপ্তিপাড়ার বিন্ধ্যবাসিনী।

গুপ্তিপাড়ার বিন্ধ্যবাসিনী।

রেল স্টেশন থেকে দূরত্ব সাকুল্যে সাড়ে তিন কিলোমিটার। ফেরিঘাট থেকেও তাই। কিন্তু টোটো ‘অত দূর’ যায় না। কারণ, রাস্তা খারাপ। অতএব, বেশ কিছুটা রাস্তা হাঁটা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

শুধু রাস্তাই নয়, অন্যান্য পরিকাঠামোও তথৈবচ। হুগলির প্রত্যন্ত জনপদ গুপ্তিপাড়ার বিন্ধ্যবাসিনী মন্দির বছরভর কার্যত অনাদরে, অবহেলায় পড়ে থাকে বাংলার প্রথম বারোয়ারির গৌরব গায়ে মেখে! এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ রয়েছে। কিন্তু বছরের পর বছর পরিস্থিতির কোনও বদল হয় না। সেই ক্ষোভ নিয়েই ফের একবার বিন্ধ্যবাসিনী পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দেবী জগদ্ধাত্রী এখানে ‘বিন্ধ্যবাসিনী’ নামেই পূজিত হন।

গ্রামের প্রবীণ মানুষেরা জান‌ান, আগে পুজো হতো মূলত রাজবাড়ি, জমিদার বাড়ি বা বনেদি বাড়িতে। এই পুজোর প্রচলন ১১৬৮ সাল নাগাদ। ওই বছর গ্রামের ১২ জন যুবক একটি বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো পুজো দেখতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোনও কারণে তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। এর পরেই তাঁরা গ্রামে পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন। যেমন ভাবা, তেমনই কাজ! ওই বছরেই জগদ্ধাত্রী পুজো আরম্ভ করেন তাঁরা। ১২ জন বন্ধু অর্থাৎ ‘ইয়ার’ মিলে পুজো করায় সেই থেকেই ‘বারোয়ারি’ শব্দটির প্রচলন হয়। বাংলার সেই প্রথম বারোয়ারি বিন্ধ্যবাসিনীর পুজো আজও নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে হয়ে আসছে।

বর্তমানে স্থানটি যথেষ্ট অবহেলিত বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। তাঁদের বক্তব্য, বিন্ধ্যবাসিনী মন্দিরে যাতায়াতের কার্যত কোনও মাধ্যমই নেই। বহু বছর ধরে ভরসা ছিল শুধু ভ্যান। বছর খানেক ধরে টোটো পরিষেবা চালু হয়েছে। কিন্তু রাস্তার হাল খুবই খারাপ। রাস্তা সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতরে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কাজ হয়নি।

গুপ্তিপাড়াবাসীর খেদ, মন্দিরের পরিকাঠামো ঢেলে সাজা নিয়েও কারও মাথাব্যথা নেই। মন্দিরের আশপাশ আগাছায় ভর্তি হয়ে থাকে। মন্দির চত্বরে আলোর কোনও বালাই নেই। সূর্য ডুবলেই অন্ধকারে ঢেকে যায় মন্দির সংলগ্ন এলাকা। অথচ, বছরভর গুপ্তিপাড়ায় অসংখ্য পর্যটক আসেন। তাঁরা মন্দিরও দেখে যান।

বিন্ধ্যবাসিনী পুজো কমিটির কর্তা প্রতাপ নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কৌশিক পালেরা বলেন, ‘‘সীমিত অর্থ এবং সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব আমরা করার চেষ্টা করি। বছর দু’য়েক আগে মন্দির রং করা হয়েছিল। কিন্তু সার্বিক ভাবে মন্দির সংস্কার বা উন্নয়ন করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’’ বলাগড়ের বিধায়ক অসীম মাঝি সমস্যার কথা মেনে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে রাস্তার সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করছি। বাকি পরিকাঠামো ঢেলে সাজার চেষ্টা করা হবে।’’

গ্রামবাসীরা চান, প্রয়োজনে আড়াই শতকের এই মন্দির পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ রক্ষণাবেক্ষণ করুক। মন্দির চত্বর সুন্দর করে সাজানো হোক। রাস্তাঘাট সংস্কার থেকে আলোর বন্দোবস্ত করা হোক। একমাত্র তা হলেই পর্যটকদের কাছে সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে বাংলার প্রথম বারোয়ারি।

Jagatdhatri Puja Old Temple archeology
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy