Advertisement
E-Paper

গোলমালে বন্ধ ধান কেনা, বিপাকে চাষি

চাষিদের অভিযোগ, প্রতি কুইন্টালে প্রায় ৭ কিলোগ্রাম বেশি ধান দিতে বলেছিল চালকল। তার প্রতিবাদ করতেই ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছে তারা। সরকার প্রতি এলাকায় চালকলগুলির মাধ্যমেই ধান কেনে। ফলে ধান কেনার প্রক্রিয়াটিই স্থগিত হয়ে গিয়েছে।

নুরুল আবসার

শেষ আপডেট: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০১:২৪
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

মুখ্যমন্ত্রী চা‌ষিদের অভয় দিয়েছেন সরাসরি সরকারের কাছে ধান বিক্রি করলেই মুক্তি মিলবে ‘ফড়ে-রাজ’ থেকে। বাঁচবেন চাষিরা। কিন্তু বার বারই সেই সরকারি ক্রয়ে উঠছে নানা অভিযোগ। গোলমালের জেরে গত এক সপ্তাহ ধরে ধান কেনাই বন্ধ হয়ে রয়েছে হাওড়ার শ্যামপুর ১ ও ২ ব্লকে।

কেন এমন হল?

চাষিদের অভিযোগ, প্রতি কুইন্টালে প্রায় ৭ কিলোগ্রাম বেশি ধান দিতে বলেছিল চালকল। তার প্রতিবাদ করতেই ধান কেনা বন্ধ করে দিয়েছে তারা। সরকার প্রতি এলাকায় চালকলগুলির মাধ্যমেই ধান কেনে। ফলে ধান কেনার প্রক্রিয়াটিই স্থগিত হয়ে গিয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, দু’টি পঞ্চায়েত সমিতির তরফেই জেলাশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এটা চলতে দেওয়া যায় না। অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার জন্য জেলা খাদ্য নিয়ামককে বলছি।’’

সরকার চাষিদের থেকে সরাসরি ধান কিনে তা চালকলকে দিয়ে দেয়। এক একটি জেলার জন্য এক বা একাধিক চালকলকে দায়িত্ব দিয়েছে সরকার। হাওড়া জেলার দু’টি ব্লকেই সরাসরি ধান কিনছে জেলা খাদ্য ও সরবরাহ দফতর। সেই ধান সংগ্রহ করছে একটি চালকল। সেই চালকল কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারি ভ্রান্তনীতির ফলই ভুগছেন চাষিরা।

শ্যামপুর-১ ও ২ ব্লকে বিডিও অফিস সংলগ্ন মাঠে খাদ্য দফতরের কর্মীরা চাষিদের কাছ থেকে ধান কিনছেন ১৭৫০ টাকা প্রতি কুইন্টাল দরে। এ ছাড়াও প্রতি কুইন্টালে অতিরিক্ত ২০ টাকা করে উৎসাহ ভাতাও পাচ্ছেন চাষিরা।

চাষিরা জানিয়েছেন, ভেজা ধান বা ধুলোর জন্য প্রতি কুইন্টালে ৫ কিলোগ্রাম ধান বেশি দিতে হয়। কিন্তু এ বার চালকল কর্তৃপক্ষ দাবি করেছেন সরু চালের ধানের জন্য কুইন্টাল প্রতি ৭ কিলোগ্রাম করে অতিরিক্ত হিসাবে তুলে দিতে হবে। মোটা ধানের ক্ষেত্রে অবশ্য পাঁচ কিলোগ্রাম অতিরিক্ত দেওয়ার নিয়মই বহাল আছে।

চাষিদের দাবি, শ্যামপুরে সরু ধানের ফলনই বেশি। এই অবস্থায় চালকলে সরু ধানের জন্য প্রতি কুইন্টালে সাত কিলোগ্রাম অতিরিক্ত ধান দিতে হলে তাঁদের লোকসান হয়ে যাবে। চাষিরা অতিরিক্ত সাত কিলোগ্রাম ধান দিতে রাজি না হওয়ায় সব ধরনের ধান নেওয়াই বন্ধ করে দেন চালকল কর্তৃপক্ষ। ফলে সরকারি কর্মীরাও ধান কিনতে পারছেন না।

অভিযোগ, খাদ্য দফতরের কর্মীরাও রোজই কাগজপত্র সাজিয়ে বসে থাকছেন। কেনা হচ্ছে না ধান। শ্যামপুর ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জুলফিকার মোল্লা বলেন, ‘‘এমনিতে হিসাবের বাইরে প্রতি কুইন্টালে পাঁচ কিলোগ্রাম করে চাষিদের অতিরিক্ত ধান দিতে হচ্ছে। তার উপরে যদি আরও দু’কিলোগ্রাম অতিরিক্ত দিতে হয়, তবে চাষিদের হাতে আর কিছুই থাকবে না।’’ শ্যামপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা জেলাশাসককে জোর করে অতিরিক্ত ধান দাবি করলে এলাকায় আইন শৃঙ্খলার অবনতি হতে পারে।’’

বাগনানের দেউলটির যে চালকল ধান সংগ্রহ করছে তার এক কর্তা জানান, সরকার তাঁদের এক কুইন্টাল ধান দিচ্ছে। তার বদলে ৬৮ কিলোগ্রাম চাল চাইছে। মোটা চালের ক্ষেত্রে এটা করা গেলেও সরু ধান থেকে ৬২ কিলোর বেশি চাল বের করা সম্ভব নয়। সেই কারণে তাঁরা চাষিদের কাছ থেকে সরু ধানের ক্ষেত্রে সাত কিলোগ্রাম বেশি চাইছেন।

চালকলের ওই কর্তার অভিযোগ, ‘‘কোন ধান থেকে কতটা চাল বের হতে পারে তার হিসাব না করেই ব‌লে দেওয়া হয়েছে কুইন্টাল প্রতি ৬৮ কিলোগ্রাম চাল দিতে হবে। সরকারের এই ভুল নীতির ফলে চাষিরা পরোক্ষে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।’’ জেলাশাসক অবশ্য বলেছেন, ‘‘সব পক্ষের সঙ্গে বসে চাষিদের স্বার্থ রক্ষা করে সমস্যার সমাধান করতে জেলা খাদ্য নিয়ামককে বলা হয়েছে।’’

Rice Purchase
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy