Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Uttarpara

‘বেসুরো’ উত্তরপাড়ার বিধায়কও

বিধানসভা নির্বাচনের মুখে দলের বিরুদ্ধে উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক একরাশ ক্ষোভ তো প্রকাশ করলেনই, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের টিমের কাজকর্ম নিয়েও প্রশ্ন তুললেন।

প্রবীর ঘোষাল।

প্রবীর ঘোষাল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
উত্তরপাড়া শেষ আপডেট: ১৭ জানুয়ারি ২০২১ ০৩:৩৭
Share: Save:

দলত্যাগ নিয়ে গুঞ্জনের মধ্যে এ বার ‘বেসুরো’ প্রবীর ঘোষাল!

বিধানসভা নির্বাচনের মুখে দলের বিরুদ্ধে উত্তরপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক একরাশ ক্ষোভ তো প্রকাশ করলেনই, ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের টিমের কাজকর্ম নিয়েও প্রশ্ন তুললেন। ভোটের দিন ঘোষণার পরে দলত্যাগের ঘটনা আরও বাড়বে বলেও দাবি করলেন প্রবীর।

আগামী ২৫ জানুয়ারি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হুগলির পুরশুড়ার সেকেন্দারপুরে সভা করতে আসছেন। শুক্রবার তারই প্রস্তুতি-সভা ছিল বৈদ্যবাটীর নেতাজি সদনে। সেখানে প্রবীর ছিলেন না। তাঁকে ডাকা হয়নি বলে দাবি করেছেন তিনি। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব অবশ্য সে কথা অস্বীকার করেন।

নেতাজি সদনে তাঁর গরহাজিরা নিয়ে প্রশ্ন করতেই আনন্দবাজারের কাছে ক্ষোভ উগরে দেন প্রবীর। তিনি বলেন, ‘‘পিকে-র টিমের কাজকর্ম নিয়ে দলের অনেক সিনিয়র নেতৃত্বের ক্ষোভ রয়েছে। তৃণমূল কী ধরনের কর্মসূচিতে অভ্যস্ত তা ওদের ধারণাই নেই।’’

এর ফাঁকে অবশ্য ‘‘রাজ্য সরকার অনেক উন্নয়ন করেছে’’— এ কথা জানাতে ভোলেননি উত্তরপাড়ার বিধায়ক। এরপরেও তাঁর খেদ, ‘‘দল ও সরকারের এখনও বেশ কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি রয়ে গিয়েছে। আমপানের ক্ষতিপূরণ বিলিতে দুর্নীতি হয়েছে। কিন্তু দুর্নীতিগুলির বিচার হয়নি। ক’জনের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা নিয়েছে?’’

শুভেন্দু অধিকারী-সহ দলের বেশ কিছু নেতা ইতিমধ্যে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ দিন সে প্রসঙ্গও তোলেন প্রবীর। তাঁর কথায়, ‘‘ভোটের দিন ঘোষণার পরে দলত্যাগ আরও বাড়বে। দলের ভাঙন প্রকাশ্যে চলে এসেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরের প্রজন্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু বিজেপিতে গিয়েছেন। বিজেপি তৃণমূলকে ভেঙে দেওয়ার যে কৌশল নিয়েছে তা আংশিক ভাবে সফল হয়েছে, সন্দেহ নেই। যে ফাটল তৈরি হয়েছে তা মেরামতের জন্য জরুরি কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। সব ক্ষেত্রে নেওয়া হচ্ছে বলে দেখতে পাচ্ছি না।’’

প্রবীরের ক্ষোভের শুরুটা অবশ্য ছিল দলের নতুন জেলা কমিটি নিয়ে। গত লোকসভা ভোটে হুগলির ফলাফল তৃণমূলের পক্ষে খারাপ হয়েছিল। নতুন জেলা কমিটির কাজ আগামী ভোটেই বোঝা যাবে বলে মন্তব্য করেন প্রবীর। তিনি বর্তমানে জেলা কমিটির অন্যতম আহ্বায়কও। প্রবীরের অভিযোগ, ‘‘নতুন কমিটি সকলকে নিয়ে কাজ করছে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝগড়াঝাঁটি বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন। সে জন্য জেলা নেতৃত্বের বদল হল। তারপরে দেখা গেল ঝগড়াঝাঁটি আরও তীব্র হল।’’ তাঁর বিধানসভা কেন্দ্রের দু’টি পঞ্চায়েত দিয়ে যাওয়া নৈটি রোড দীর্ঘদিন বেহাল থাকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন উত্তরপাড়ার বিধায়ক।

প্রবীরের ক্ষোভ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি দলের জেলা সভাপতি দিলীপ যাদব। তিনি শুধু দাবি করেন, ‘‘ওঁকে এ দিনের প্রস্তুতি-সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কোনও কারণে হয়তো আসতে পারেননি। জেলায় দলে কোথাও কোন সমস্যা থাকলে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে সমাধান করা হবে।’’

প্রবীর ‘বেসুরো’ বাজায় দলে তাঁর সম্মান কতটা অক্ষুণ্ণ রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। দলের শ্রীরামপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শ্যামল ঘোষ বলেন, ‘‘তৃণমূল নেতারা দিদির সামনে কিছু বলতে পারেন না। তাই তাঁরা সম্মান নিয়ে দলে থাকতে পারছেন না। সম্মান বাঁচাতে অনেকে দল পরিবর্তন করছেন। উনিও হয়তো দলে সম্মান না-পেয়ে বেসুরো কথাবার্তা বলছেন। এত চুরি অনেকে মেনে নিতে না-পেরে বিজেপিতে চলে আসছেন। সম্মানের সঙ্গে দল করতে হলে বিজেপিতে সকলকে স্বাগত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Uttarpara TMC MLA BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE