প্রস্তুতি: চলছে তাজিয়া তৈরি। নিজস্ব চিত্র
মঙ্গলবার দুপুরবেলা। মুখোপাধ্যায় গিন্নি হাঁক পাড়লেন, ‘‘কীরে, বিকেল হল বলে। জোরে হাত চালা তোরা। সময়ে শেষ করতে হবে তো!’’ তাঁর কথা শুনে শশব্যস্ত হয়ে কাজে গতি বাড়ালেন মহম্মদ কালাম আনসারি, মহম্মদ আশরাফ, মহম্মদ লালবাবুরা।
ওই ব্রাহ্মণ পরিবারের একটি ঘরে গত কয়েক দিন ধরেই তৈরি হচ্ছিল মহরমের তাজিয়া। এ দিন যথাসময়ে তা শেষ করার জন্যই গৃহকর্ত্রীর তাগাদা। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই নজির শ্রীরামপুর পুরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডের ঝাউতলার। নির্দিষ্ট সময়ে বেরল তাজিয়া।
ওই পরিবারের লোকেরা জানান, মাঝেমধ্যেই বৃষ্টি হচ্ছে। ফলে খোলা জায়গায় তাজিয়া তৈরি করা সম্ভব নয়। সেই কারণে পাড়ার ছেলেদের একটা ঘর দরকার ছিল। সেই কথা জেনেই তাঁরা এগিয়ে আসেন। কালাম, জামালদের সঙ্গে ওই কাজে হাত লাগিয়েছিলেন রাজা সাউ। বন্ধুরা জানান, রাজা থার্মোকলের কাজে পটু। সেই কারণে তাজিয়া থেকে পুজোর মণ্ডপ সাজানো— সবেতেই তার
ডাক পড়ে।
মহম্মদ চাঁদ খান নামে এক যুবক বলেন, ‘‘এই এলাকায় বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বাস করেন। ধর্ম আলাদা হলেও আমাদের মধ্যে ভেদাভেদ নেই। প্রত্যেকে পরস্পরের ধর্মকে সম্মান করেন। এটা না হলে কি এই বাড়িতে একটা ঘর তাজিয়া তৈরির জন্য ছেড়ে দেওয়া হত!’’ চাঁদ জানান, তাঁরাও পাড়ার দুর্গাপুজোয় সামিল হন। মহরম মিটলে প্রয়োজনে মণ্ডপ গড়ার কাজে হাত দেবেন। রাজার কথায়, ‘‘এওই ধরণের কাজ করতে খুব ভাল লাগে। আগেও তাজিয়া অথবা পুজোর মণ্ডপের কাজে হাত লাগিয়েছি। এ বারেও করছি। ধর্মীয় বিভেদ
এখানে নেই।’’
গৃহকর্ত্রী বেবি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা ঈশ্বরবিশ্বাসী। বাড়িতে পুজোআর্চা সবই হয়। আমাদের উৎসবে মুসলিম পরিবারের লোকেরা আসেন। আবার আমরাও ইদে ওদের বাড়িতে যাই। ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আবহেই আমরা বাস করি। তাজিয়া তৈরির জন্য একটা ঘর ওদের ছেড়ে দিতে পেরে আমাদের ভালই লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy