Advertisement
E-Paper

কয়েক কোটি টাকার পেঁয়াজ নষ্ট বলাগড়ে

অসময়ের বৃষ্টি লাভের আশায় জল ঢালায় হুগলির বলাগড়ের পেঁয়াজ চাষিদের মাথায় হাত। কারণ, পেঁয়াজ বেচে দাম মিলছে না। অধিকাংশ পেঁয়াজ খেতেই পচে গিয়েছে। বুধবারই গৌরনই গ্রামের সুমন্ত ঘোষ নামে এক পেঁয়াজ চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন।

প্রকাশ পাল

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৯ ০৬:৩৯
দুরবস্থা: মাঠে ছড়িয়ে রয়েছে পেঁয়াজ। মৃত সুমন্তর বাবা (ডান দিকে)। ছবি: সুশান্ত সরকার

দুরবস্থা: মাঠে ছড়িয়ে রয়েছে পেঁয়াজ। মৃত সুমন্তর বাবা (ডান দিকে)। ছবি: সুশান্ত সরকার

৮০ মণ পেঁয়াজ ফলিয়ে কাউকে ফেলে দিতে হয়েছে প্রায় ৩০ মণ। কেউ আবার যেটুকু বাঁচাতে পেরেছেন, ২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। দাম না-মেলায় কেউ এখনও বাড়িতেই পেঁয়াজ রেখে দিয়েছেন।

অসময়ের বৃষ্টি লাভের আশায় জল ঢালায় হুগলির বলাগড়ের পেঁয়াজ চাষিদের মাথায় হাত। কারণ, পেঁয়াজ বেচে দাম মিলছে না। অধিকাংশ পেঁয়াজ খেতেই পচে গিয়েছে। বুধবারই গৌরনই গ্রামের সুমন্ত ঘোষ নামে এক পেঁয়াজ চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন।

দাম না-মেলায় কয়েক মাস আগে সঞ্জয় সাঠে নামে নাসিকের এক চাষি তাঁর পেঁয়াজ বিক্রির সামান্য টাকা ‘মানি অর্ডার’ করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। ৭৫০ কেজি পেঁয়াজ তিনি বিক্রি করতে পেরেছিলেন মাত্র ১০৬৪ টাকায়। কিন্তু ওই পেঁয়াজ বাজারে নিয়ে যেতে ১১০০ টাকা খরচ হয়েছিল বলে তাঁর দাবি। সেই ঘটনা নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই হয়। রাহুল গাঁধীও এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করেন। পরে অবশ্য সঞ্জয় অবস্থা সামলে নেন। কিন্তু বলাগড়ের চাষিরা এখনও দিশাহারা।

চাষ মার খাওয়ার জন্যই সুমন্ত আত্মঘাতী হন বলে তাঁর পরিবারের দাবি। শুক্রবার মৃতের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে যান বিডিও (বলাগড়) সমিত সরকার। তিনি বলেন, ‘‘পেঁয়াজের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে, এটা ঠিক। পেঁয়াজ তোলার সময় নিয়ে সুমন্তর সঙ্গে ওঁর পরিবারের লোকজন সহমত হতে পারেননি। সেই কারণে তিনি আত্মঘাতী হয়ে থাকতে পারেন।’’ যদিও সুমন্তর সঙ্গে কোনও বিবাদের কথা পরিবারের লোকজন মানতে চাননি।

শুধু সুমন্ত নন, পরিস্থিতি এমন যে, বহু চাষি এখনও খেত থেকে পেঁয়াজ তোলেননি। বিঘের পর বিঘে জমিতে পেঁয়াজ ছড়িয়ে রয়েছে। রাস্তার ধারে, মাঠের মধ্যে বস্তার পর বস্তা পেঁয়াজ ডাঁই করে রাখা। চাষিরা জানান, এ বার ফলন কিছুটা বেশি হওয়ায় বাড়তি লাভের আশা করেছিলেন। কিন্তু প্রকৃতির রোষে পরিস্থিতি এখন উল্টো।

জেলা উদ্যানপালন দফতর সূত্রের খবর, হুগলিতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়। তার পঁচাত্তর শতাংশই বলাগড়ে। এই ব্লকের ডুমুরদহ, সিজা-কামালপুর, জিরাট-সহ নানা জায়গায় পেঁয়াজ হয়। কৃষকরা জানান, পেঁয়াজ রোপণ করা হয় কার্তিক-অঘ্রাণে। ফসল তোলা হয় ফাল্গুন-চৈত্রে। সম্প্রতি টানা কয়েক দিন বৃষ্টিতে এখানে পেঁয়াজ চাষ মার খায়। খেতেই পচে যায় পেঁয়াজ।

উদ্যানপালন দফতরের হিসেব অনুযায়ী, দফায় দফায় বৃষ্টিতে পেঁয়াজ এবং অন্যান্য ফসল মিলিয়ে বলাগড় ব্লকে প্রায় ৩৩ কোটি টাকা মূল্যের আনাজের ক্ষতি হয়েছে। জেলা উদ্যানপালন আধিকারিক মৌটুসী ধর বলেন, ‘‘ফসল ওঠার মুখেই টানা বৃষ্টি হওয়ায় পেঁয়াজ চাষ ভাল রকম মার খেয়েছে। ক্ষতির হিসেব করে আমরা রাজ্যে রিপোর্ট

পাঠিয়ে দিয়েছি।’’

সিজা-কামালপুরের প্রতাপ ঘোষ বিঘে পাঁচেক জমিতে চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘পেঁয়াজ জমি থেকে তুলে এনেছি। কিন্তু বাড়িতেই পড়ে আছে। দাম নেই। বেশি দিন পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যাবে।’’ গৌতম ঘোষ, সনৎ ঘোষদের বক্তব্য, এক বিঘে জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে গড়ে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। তাঁরা ভেবেছিলেন, প্রতি বিঘে জমির পেঁয়াজ কমবেশি ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করা যাবে। কিন্তু এখন দশ হাজার টাকাও উঠছে না। সনৎবাবু বলেন, ‘‘এমনিতে পেঁয়াজ অনেক দিন সংরক্ষণ করা যায়। কিন্তু যে ভাবে নষ্ট হয়েছে, তাতে বেশি দিন ধরে রাখা যাবে না। ব্যবসায়ীরা মণপিছু (৪০ কিলোগ্রাম) ৮০ টাকার বেশি দাম দিতে চাইছেন না। অন্যান্য বার প্রায় ৩৫০ টাকা দাম পাই।’’

মানিক ঘোষ নামে এক চাষি বলেন, ‘‘আমার আড়াই বিঘে জমিতে ৮০ মণ পেঁয়াজ হয়েছিল। পচে যাওয়ায় প্রায় ৩০ মণ ফেলা গিয়েছে। বাকিটা দু’টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি। ডাহা লোকসান হল।’’ একই সঙ্গে তাঁর খেদ, ‘‘কীটপতঙ্গ থেকে দিল্লির সরকার পর্যন্ত সবাই চাষির বিপক্ষে। কেউ চাষির কথা ভাবে না।’’

Rain Suicide Onion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy